সারাদেশ

দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য করিমপুর ভূমি অফিস

সান নিউজ ডেস্ক: নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অফিস সহায়ক (এলএমএস) কাদির মিয়া টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না। ভূমি সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। আর এতে করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের হয়রানি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিস সহায়ক তার অসৎপথে উপার্জিত টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছে তিনতলা বিশিষ্ট বৃহৎ অট্টালিকা।

সরেজমিনে গিয়ে করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঢুকতেই চোখে পড়ে অফিস সহায়ক কাদির মিয়ার টেবিলটি। তাকে ঘিরে টেবিলের চারপাশে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেবা গ্রহীতারা। সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলা থেকে শুরু করে ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে টাকা নিচ্ছেন অফিস সহায়ক কাদির।

তিনি গ্রাহকদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে টাকার বিনিময় ছাড়া কোন ফাইলই নাড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় করা যায় না। ওই ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এলএমএস) কাদির গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্ন অজুহাতে আরও টাকা দাবি করাসহ বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের হয়রারি করছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন ভূমি কর্মকর্তাদের অগোচরে মাঠ পর্যায়ে করিমপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের অফিস সহায়ক কাদির বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে ভূমি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন বলে দাবি ভূক্তভোগীদের।

করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসা এক গ্রাহক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এই অফিসের নায়েব সাব কোন কিছুই না, তিনি নামে মাত্র নায়েব, তার সকল দায়িত্ব পালন করেন কাদির। সেই জায়গা সম্পত্তির নামজারি করে থাকেন। আমার জায়গা নামজারির জন্য কাদির আমার নিকট বিশ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমি নামজারির জন্য তাকে নগদ বিশ হাজার টাকা দেই। আজ ৪/৫ মাস হয়ে গেলেও সে আমার জায়গার নামজারি করে দিচ্ছে না।

তাকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও সে আজ না কাল, কাল না পরশু বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন আর আমাকে ঘুরাচ্ছেন। শুধু আমি না আমার মত অনেকেই টাকা দিয়ে ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখানে সেবা নিতে আসা ৮০ শতাংশ লোকই তার দ্বারা চরম হয়রানির শিকার। তার দাবিকৃত উৎকোচ না দিলে সেবা গ্রহীতারা পান না তাদের কাঙ্খিত সেবা।

কে এই কাদির?
কাদিরের পরিচয় জানতে সদ্য বিদায়ী করিমপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সোহরাবের মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন, কাদির একজন করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহায়ক বা (এলএমএস)। অফিস সহায়ক বা তার দায়িত্ব হচ্ছে অফিস গুচ্ছিয়ে রাখা। নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায় করা তার কাজ না। এগুলো নায়েব সাহেবের কাজ। আমার জানার বাকি নাই। আমি করিমপুর থাকাকালে তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ শুনতে শুনতে আমার কান জ্বালা পালা হয়ে গেছে। লোকজন তাকে প্রায়ই খোঁজ করতো। পরে ঐসব লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারি সে (কাদির) নামজারির কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতো। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নামজারি করে দিতো।

তিনি আরও বলেন, তার মূল কাজ হচ্ছে অফিসের ফাইল বের করে দেওয়া, অফিস পরিস্কার রাখা এবং বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংকে যাওয়া। আমার সময়ে আমি যতটুকু পেরেছি ভুক্তভোগীদের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকারী ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র ৪/৫ দিন হয় অফিসে যোগদান করলাম। এ বিষয়ে আমি তেমন কিছুই জানি না।

অফিসের সামনে সিটিজেন চার্টার ও করিমপুর ভূমি অফিসের সাইনবোর্ড কেন নাই তা জানতে চাইলে অফিস সহায়ক কাদিরই ভাল জানেন বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে কাদিরের খোঁজে তার নিজ এলাকার নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া গিয়ে দেখা যায়, ঘোড়াদিয়া পূর্বপাড়া (বায়তুল নূর জামে মসজিদ) এর পাশে ৬ তলা ভিত্তির উপর তিনতলা বিশিষ্ট এক বৃহৎ অট্টালিকা গড়ে তুলছেন তিনি।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এন্তাজ উদ্দিন জানান, কাদির মিয়া এলাকায় কাদির মোক্তার নামে পরিচিত। তিনি করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকরি করেন।বছর খানেক আগে কাদির এই বাড়িটি তৈরি করেছেন। এর আগে এখানে টিনশেড ঘর ছিলো। কাদিরের তিন মেয়ে এক ছেলে। ছোট ছেলে কয়েক বছর ধরে প্রবাসে থাকে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কাদিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এলএমএস) পদে যোগদান করে অদ্যাবধি পর্যন্ত ওই অফিসেই কর্মরত রয়েছি। আমাকে ওই অফিস থেকে বিদায় করতে একটি কুচক্রী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

ভূমি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে বাড়ি করার ব্যাপারে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে কর্মরত রয়েছে। তার উপার্জনের অর্থ দিয়েই বাড়ি বানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

নরসিংদী সদর ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) আমিনুল ইসলামের কাছে কাদিরের দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জরুরি একটি সভায় রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন।

নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী মোর্শেদ এর কাছ থেকে অফিস সহায়ক কাদিরের দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার নিকট কোনো ধরনের তথ্য বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তাছাড়া ইতিপূর্বে আমাকে তার ব্যাপারে কেউ অবগত করেননি, আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। কাদিরের দুর্নীতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে হত্যাচেষ্টা মামলায় সুদেব সিং গ্রেফতার

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

বোয়ালমারীতে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফটোসেশন

স্পোর্টস ডেস্ক : আগামী ২ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের...

ভোলায় এলজিইডি’র জলবায়ু বিষয়ক প্রশিক্ষণ 

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় জেলা ও উপজে...

কান উৎসবে নজর কাড়লেন ভাবনা

বিনোদন ডেস্ক: কান চলচ্চিত্র উৎসবে...

হামলাকারী ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

শুরু হচ্ছে বার্সা একাডেমির ট্রেনিং ক্যাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্টারন্যাশনাল...

বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র কাজে দেয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির দেশবিরো...

ডাল কিনছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা