সারাদেশ

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আকতারের দুর্নীতির খতিয়ান দুদকে

নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : মেঘনা পেট্টোলিয়াম লিমিটেডের জিএম (এইচআর) আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মেঘনা পেট্টোলিয়াম লিমিটেড এর সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার দুর্নীতির এই খতিয়ান অভিযোগ আকারে লিখিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করেছেন।

অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য, ডিপো থেকে মাসিক চাঁদা আদায়, মামলা পরিচালনা থেকে অর্থ আত্মসাধ, ভূয়া বিল তৈরি ও কোম্পানির গাড়ি ভাড়ায় খাটিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়।

অভিযোগের বিবরণে আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ভবনে কর্মরত জি এম (এইচআর) আকতার হোসেন দেশব্যাপী কোম্পানির ১৭টি ডিপো হতে প্রতিমাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন।

এই অনৈতিক সুবিধা আদায়ে জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ইচ্ছামফিক ডিপো পরিদর্শনে গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। চাঁদা ব্যাতিরেকে তিনি বাঘাবাড়ির ঘি, মাখন, সিরাজগঞ্জের শাড়ী-লুঙ্গি, বগুড়ার দই, দক্ষিণবঙ্গের খেজুরের গুড়, শুটকি ও মাছ আদায় করেন।

কোম্পানির মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার নামে আকতার হোসেন প্রতিমাসে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা অবৈধ আয় করে থাকেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার বাদি-বিবাদী পক্ষের সাথে আঁতাত করে নিজের স্বার্থে এই অবৈধ আয় করে কোম্পানির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। মামলা পরিচালনায় বিভিন্ন ট্যুরের ভুয়া বিল দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।

গত বছর ৯ মার্চ ঢাকার মতিঝিল ল’ সোসাইটি থেকে রাজউক ভবনস্থ লেবার কোর্টে টেক্সিক্যাব ভাড়া উত্তোলন করেন ১০০ টাকা। আবার একইদিনে লেবার কোর্ট থেকে লেবার ডাইরেক্টরের অফিসে যাওয়ার ট্রেক্সিক্যাব ভাড়া উত্তোলন করেন ১০০ টাকা। অথচ দুই অফিস একই ভবনে।

এছাড়া তিনি কোম্পানিতে কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। পদোন্নতি বাণিজ্যের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আদায় করে থাকেন।

এছাড়া অফিসে যাতায়াতে ব্যবহারের জন্য কোম্পানি থেকে গাড়ী দেওয়া হলেও তিনি তা স্ত্রীর কর্মস্থল সিইপিজেডে ইয়ংওয়ানে শ্রমিক-কর্মচারী পরিহনে মাসিক ৪০ হাজার টাকায় ভাড়ায় খাটাচ্ছেন। অথচ এই গাড়ীর জ্বালানিসহ নানা ব্যয় বাবদ কোম্পানির অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে কোম্পানির দেয়া অফিসের পাজেরো জীপ (চট্টমেট্টো ঘ-১১-১১৭০) গাড়িটি তিনি তার পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন।

অনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারও তিনি অহেতুক অফিস করেন। যাওয়ার সময় তিনি অফিসের একাধিক সংবাদপত্র নিয়ে যান। আবার ছুটির দিনে অফিসের কাজ দেখিয়ে বিলও উত্তোলন করেন।

এসব নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে তা বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে কোম্পানির গাড়ি স্ত্রীর কর্মস্থলে ইয়ংওয়ানে ভাড়া খাটানোর বিষয়টি তদন্তের জন্য দাযিত্বপান বিপিসির বর্তমান সিনিয়র জি এম মো. আবু হানিফ।

এর আগে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আরেকটি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারী। যা তদন্ত বন্ধে চিঠি দেন জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের সচিব।

এভাবে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়ের মাধ্যমে তিনি নিজ ও স্ত্রী-সন্তানের নামে-বেনামে চট্টগ্রামের অভিজাতা আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, কল্পলোক আবাসিক, খুলশীসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। যা তদন্ত করলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করা হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জিএম (এইচআর) আকতার হোসেন শুরুতেই সব মিথ্যা অভিযোগ বলে দাবী করে বলেন, কোম্পানির এমডি পদে পদোন্নতি নিয়ে বর্তমান এমডির সাথে বিরোধের জেরে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনি এলবামের কিছু পূরণো ছবি দেখিয়ে বলেন, দেখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমার পরিবারে খেয়েছেন। আমি তার পরিবারের সদস্যের মতো।

তবে একের পর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেন। সেখানে এক খন্ডজমিও কেনার কথা স্বীকার করেন। একপর্যায়ে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তিনি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মেঘনার এক ডিপো ইনচার্জের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের কথা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাঁদা প্রত্যেক ডিপো থেকে নেয় আকতার হোসেন। বিষয়টি বললে আমাদের হয়রানির ভয় আছে।

সূত্রমতে, জিএম আকতার হোসেন নোয়াখালীর হাতিয়া চরাঞ্চলের কুখ্যাত রাজাকার শাহ আলমের ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মওদুদ বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সুপারিশে ইফার অফিসার হিসেবে তিনি যোগ দেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে তিনি নিজেকে পরিবর্তন করে বর্তমানে নব্য আওয়ামী লীগার সেজে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছের আত্মীয় দাবি করে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

সান নিউজ/ইব্রাহিম/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী পান্নার গণসংযোগ

রাজীব চৌধুরী, কেশবপুর : আসন্ন কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে...

বোয়ালমারীতে স্বর্ণের কারিগরকে কুপিয়ে জখম

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

বজ্রপাতের সময় করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক: চলমান তাপপ্রবাহ...

নিজ্জর হত্যায় সন্দেহভাজন ৩ জন গ্রেফতার 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডায় বসবাসর...

মৃত্যু থেকে বাঁচলেন দেব

বিনোদন ডেস্ক : কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা দীপক অধিকারী দেব। ভার...

কেমব্রিজ পরীক্ষায় ডিপিএস শিক্ষার্থীদের সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি প্রকাশ...

ফরিদপুরে স্টপেজের দাবিতে মানববন্ধন 

বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর: ফরিদপুরে রেল...

পাবনায় আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালিত

পাবনা প্রতিনিধি: ‘জলবায়ু স...

অস্ট্রেলিয়া গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি সফরে অস্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা