সারাদেশ

সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের বেতন দিচ্ছে না সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল

এনামুল কবীর, সিলেট : করোনা মহামারি শুরুর দিকে ডাক্তাররাও হাসপতালে ছিলেন অনিয়মিত। কেউ কেউ ২/১ ঘন্টার জন্য এলেও কেটে পড়তেন দ্রুত। অথচ পুরুষ ও মহিলা নার্সরা তখন দায়িত্ব পালন করেছেন জীবনবাজি রেখে। এমনকি রমজানে রোজা রেখেও তারা শুধু সক্রিয়ই ছিলেন না, বরং ডিউটি করেছেন স্বাভাবিক সময়ের থেকেও বেশি, ১২/১৩ ঘন্টা!

অথচ সেই কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য পাওনা এক মাসের বেতন ও অর্জিত ছুটিসহ অন্যান্য ভাতা থেকে তারা বঞ্চিত। নানা বাহানায় তাদের অন্তত ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ- এমনই অভিযোগ ১৮ জন নার্সের।

এই সেবক-সেবিকারা ন্যায্য পাওনা আদায় করতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছেও গিয়েছিলেন। আশ্বাস মিললেও এখনো কানাকড়িও জুটেনি তাদের ভাগ্যে। বর্তমানে তারা আন্দোলনের জন্য সংগঠিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।

জানা যায়, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে কর্মরত অবস্থায় ২০২০ সালের মে মাসে ২০ জন নারী ও পুরুষ নার্সের সরকারি চাকরি হয়। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষ নিয়োগ হয় তাদের। দ্রুত কাজে যোগদানের বাধ্যবাধকতাও ছিল। এ অবস্থায় পদত্যাগ করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করলে তারা উইমেন্স থেকে এপ্রিল মাসের বেতন ও ভাতা পাবেন কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। তখন উইমেন্সের উর্ধ্বতন কর্তারা যথাসময়ে তাদের যাবতীয় পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে মোট ২০ জন নার্স ১৩ মে’র মধ্যে বিভিন্ন তারিখে পদত্যাগ করেন।

তারা নিজেদের কর্মস্থলে যোগদান করেন আর অপেক্ষায় থাকেন সুখবরের। কিন্তু তা আর হয়নি। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একসময় তাদের পক্ষে কয়েকজন নার্স পাওনা আদায়ের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেন ১১ জুন। তারা হলেন তৃপ্তি রাণী দাস, রেসমা বেগম ও শামীমা আক্তার। কিন্তু কোন শান্তনা বা সদুত্তর পান নি তারা।

এ প্রসঙ্গে তৃপ্তি রাণী বলেন, কোন সদুত্তর না পেয়ে আমরা ডাক্তার আজির উদ্দিনের সাথে দেখা করি। হাসপাতালের মালিকপক্ষের একজন হিসাবে তাকে আমাদের দুরাবস্থার কথা জানাই। তিনি আমাদের কথায় কোন পাত্তাই দেননি। উল্টো এ ব্যাপারে কথা বলতে হাসপাতালে প্রবেশেও নিষেধ করেছেন।

এ অবস্থায় হতাশ হয়ে সম্মুখসারির এই করোনাযোদ্ধারা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা করে বিষয়টি তাকে অবগত করেন। তারা তার হস্তক্ষেপও কামনা করেন। মেয়র তাৎক্ষনিক কথা বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে।

পরে নার্সদের জানান, তাদের হাসপাতালের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে টাকা দেয়া হবে। তবে আইনগতভাবে তারা এ টাকা পান না। এরপর প্রায় ৭ মাস কেটে গেছে। এখনো বঞ্চিত এই সম্মুখসারির যোদ্ধারা।

এ প্রসঙ্গে নার্সদের পক্ষ থেকে এনামুুল কবির, তৃপ্তি রাণী ও শামীমা আক্তার জানান, একই সময়ে ইবনেসিনা, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নর্থইস্ট থেকে যাদের সরকারি চাকরি হয়েছে তাদের বেতন-ভাতা ৩ মাসের মধ্যেই প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে ইবনেসিনা ও রাগিব-রাবেয়া থেকে সাথে সাথেই পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। বঞ্চিত নার্সদের প্রশ্ন, যখন করোনার ভয়ে ডাক্তাররাও হাসপাতালে নিয়মিত ছিলেন না, তখন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ১২/১৩ ঘন্টা কাজের পরও তারা বঞ্চিত থাকবেন কেন?

তাছাড়া দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সরকারইতো তাদের ডেকে নিয়েছেন। তারা যদি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতেন তাহলে চাকরিবিধির প্রশ্ন উঠতো এবং মানা যেতো। কিন্তু তারাতো দেশের প্রয়োজনে, সরকারের প্রয়োজনে, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে চাকরি ছেড়েছিলেন। তাহলে তাদের কষ্টার্জিত পারিশ্রমিক দেয়া হবে না কেন?

এ ব্যাপারে তারা আবারও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া ও সিলেটের সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রেমানন্দ মন্ডলের হস্তক্ষেপ চাইছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নার্সরা আমার কাছে এসেছিলেন। হাসপাতালের পরিচালকের সাথে আমার আলাপও হয়েছিল। তিনি আইনগতভাবে তারা পাবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে হাসপাতালের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে তাদের বেতনভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘আইনগতভাবে তারা এটা পান না। কমপক্ষে ২ মাস আগে রিজাইন দিলেই তারা নিয়মিত বেতন-ভাতাটা পেতেন।’

আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি তার হাসপাতালে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। জানানো হয় তিনি জরুরী মিটিংয়ে ব্যস্ত। এ অবস্থায় কথা বলেন ডেপুটি ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) ডাক্তার হিমাংশু শেখর দাস।

তিনি জানান, হাসপাতালের আর্থিক ক্রাইসিস চলছিল তখন। এ অবস্থায় আমরাও বেতন-ভাতা নিয়েছি অর্ধেক। তাদেরকে বলা হয়েছিল, আইনগতভাবে তারা তা না পেলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে, হাসপাতালের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু সে অবস্থা এখনো হয়নি।

বঞ্চিতরা জানালেন, তাদের ২০ জনের মধ্যে ২ জন নার্সের বেতন যথাসময়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে অন্য ১৮ জনের দোষ কি? এমন প্রশ্নে তাদের মনে তোলপাড় চলছে। এবিষয়টিও অস্বীকার করেছেন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর।

সান নিউজ/এক/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

বোয়ালমারীতে হত্যাচেষ্টা মামলায় সুদেব সিং গ্রেফতার

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফটোসেশন

স্পোর্টস ডেস্ক : আগামী ২ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের...

কান উৎসবে নজর কাড়লেন ভাবনা

বিনোদন ডেস্ক: কান চলচ্চিত্র উৎসবে...

স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে পারিবারিক কলহের জে...

হামলাকারী ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

শুরু হচ্ছে বার্সা একাডেমির ট্রেনিং ক্যাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্টারন্যাশনাল...

বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র কাজে দেয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির দেশবিরো...

ডাল কিনছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা