সারাদেশ

চসিক নির্বাচনে নিজেদের ভোটও পায়নি বিএনপি!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম : সংঘাত-প্রাণহানীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে নিজেদের ভোটও পায়নি বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এমন প্রশ্ন দলীয় নেতাকর্মীদের। তবে তাতে বিস্মিত নন তারা, কিন্তু হতাশ ও ক্ষুব্ধ। ভোট ডাকাতি করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছ বলে দাবি তাদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, এটা বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতারই চিত্র।

বিএনপি নেতাকর্মীদের তথ্যমতে, গত চসিক নির্বাচনে নগরীর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডেই ৮ হাজার ৬৩২ ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। সেখানে এবার ধানের শীষ পেয়েছে কেবল ৬৮ ভোট! বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী পেয়েছেন ৭৩ ভোট। অথচ ওয়ার্ডের ১৪ ভোটকেন্দ্রের ১০৪টি বুথে বিএনপির ৩১২ জন পোলিং এজেন্ট থাকার কথা। ৩০ জন করে হলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য থাকার কথা ৪২০ জন। পাশাপাশি ওয়ার্ড কমিটি তো আছেই। সে হিসাবে তালিকাভুক্ত বিএনপির একনিষ্ট ৭৩২ নেতাকর্মী ভোটের মাঠে থাকার কথা। কিন্তু ৪১ হাজার ৭৫৫ ভোটারের এই ওয়ার্ডে নৌকা পেয়েছে ৬ হাজার ৬৩১ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ঘুড়ি প্রতীকে পড়েছে ৬ হাজার ৬৬১টি ভোট। অথচ দলটির মেয়র প্রার্থী ওই ওয়ার্ডে ভোট পেয়েছেন কেবল ৬৮টি!

২০১৫ সালের নির্বাচনেও এই ওয়ার্ডে ভোটার ছিল ৩৭ হাজার ৬০৫ জন। সেবার ভোট পড়েছিল ১৭ হাজার ৫৪৮টি। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম কমলা লেবু প্রতীকে ৮ হাজার ৬৩২ এবং আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দিন হাতি প্রতীকে পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৬ ভোট। অর্থাৎ রেজাউলের ওয়ার্ডে সেবারের ভোটে নাছির হারলেও এবার কিন্তু একেবারে ধরাশায়ী হয়েছেন ডা. শাহাদাত। অথচ ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মনজুর আলম ১২টার মধ্যে ভোট বর্জন করেও ভোট পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৭টি, যা অংশ নেওয়া ভোটের শতকরা হার ৩৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

শুধু পূর্ব ষোলশহরেই নয়, ৭৩৩ ওয়ার্ডের ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ধানের শীষ এক ভোটও পায়নি এমন কেন্দ্রের সংখ্যা দুটি। ১ ভোট পেয়েছে ২৫টি কেন্দ্রে। ২ ভোট ৩৭ কেন্দ্রে। ৩ ভোট ২৮ কেন্দ্রে। ৪ ভোট ১৪ কেন্দ্রে। ৫ ভোট ১৫ কেন্দ্রে। ৬ ভোট ১২ কেন্দ্রে। ৭ ভোট ১৭ কেন্দ্রে। ৮ ভোট ১৪ কেন্দ্রে। ৯ ভোট ৪ কেন্দ্রে। ১০ ভোট ১৫ কেন্দ্রে। ১১ থেকে ২০ ভোট ৮৭ কেন্দ্রে। ২১ থেকে ৩০ ভোট ৫৪ কেন্দ্রে। ৩১ থেকে ৪১ ভোট ৪৮ কেন্দ্রে। ৪১ থেকে ৫০ ভোট ৪৩ কেন্দ্রে। ৫১ থেকে ১০০ ভোট ১৩০ কেন্দ্রে। ১০১ থেকে ১৫০ ভোট ৮৬ কেন্দ্রে। ১৫১ থেকে ২০০ ভোট ৩৯ কেন্দ্রে। ২০১ থেকে ৩০০ ভোট ৩৪ কেন্দ্রে। ৩০১ থেকে ৪০০ ভোট ১৭ কেন্দ্রে। ৪০১ থেকে ৫০০ ভোট ৭ কেন্দ্রে।

সব মিলিয়ে ১০ ভোটের নিচে ভোট পড়েছে ১৮৭ কেন্দ্রে আর চারশ'র উপরে ভোট পড়েছে মাত্র ৭টি কেন্দ্রে। এমনকি ডা. শাহাদাত হোসনের নিজ কেন্দ্র বাকলিয়া বিএড কলেজ কেন্দ্রে তিনটি সেন্টারে ধানের শীষ ভোট পেয়েছে ৫৪ ভোট আর বিএনপির ঘরে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ১১৫৯ ভোট।

পূর্ব ষোলষহর ওয়ার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হাসান লিটন বলেন, এই ওয়ার্ডে বিএনপির এজেন্ট বা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ছাড়াও সমর্থক প্রচুর। গত নির্বাচনেও আমরা জিতেছি। কিন্তু এবার আর ঘর থেকে বের হতে পারিনি। নির্বাচনের দিন চান্দগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান নিজে এসে আমার মাকে সম্বোধন করে গালি দিয়ে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন। কেন্দ্রে গেলে আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। আমরা কীভাবে এ ফলাফলের উপর আস্থা রাখবো?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির আহবায়ক ও মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি, বের করে দেওয়া হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। আমি নির্বাচনী কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে যা দেখেছি, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ কথাগুলো বুধবার সকাল থেকে আমি বলেছি। আপনারা দেখেছেন, বিশ্ববাসী দেখেছে, নির্বাচনের নামে নগরবাসীর সঙ্গে কী প্রহসনটাই না করা হয়েছে। যা হয়েছে ভোট ডাকাতি। সেখানে এই রেজাল্ট কোনো অর্থ বহন করে না। এটা মোটেই আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপিকে সরকারের পাশাপাশি পুলিশ, প্রশাসন এবং সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এতগুলো শক্তির সঙ্গে লড়াই করা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় না থাকা দলটির জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। ভোটাররা অবশ্য তাদের সঙ্গেই আছেন। তবে দল হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতা, ভোটারদের উজ্জীবিত করতে না পারায় নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে। তারা মনে করেন, সমর্থকরাই এখন বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না তারা। আর এ সুযোগটাই নিচ্ছে সরকারি দল।

তবে এই নির্বাচনে বিএনপির সাংগঠনিক কী ধরনের দুর্বলতা ছিল, কোথায় কোথায় ব্যর্থতা রয়েছে, সেগুলো খোঁজে বের করে সংশোধন করা উচিত। কেননা প্রচার প্রচারণায় সরব থাকা নেতাকর্মীরাও ভোটের দিন গা ঢাকা দিয়েছিল। এছাড়া চট্টগ্রামের মধ্যম সারির নেতাদের ছাড়া ডা. শাহাদাত বিএনপির জাতীয় নেতাদের তেমন পাশে পাননি। আমীর খসরুকে পেলেও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ তেমন চোখে পড়েনি। প্রধান নিবার্চনী এজেন্ট নিয়োগ করা হলেও শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামেই আসেননি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। পরে নির্বাচনের চারদিন আগে তার পরিবর্তে নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও কম ভোটার কেন্দ্রে আসার কারণ জানতে চাইলে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নিবাচনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। কেন আসেননি, তা তারাই জানেন। তবে নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি হয়নি।

সান নিউজ/কেটি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি প্রকাশ

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল আস...

কর্মস্থলে না এসেও বেতন তোলেন শিক্ষক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (১৮মে) বেশ কিছু খেল...

মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশ রক্ষায় অবৈধ চাই ধ্বংস 

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় মেঘনা নদী থ...

মুন্সীগঞ্জে ভাসমান মরদেহ উদ্ধার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মধ্য কোটগাঁ...

ওএমএস বিতরণে গাফলতি হলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্যমন্ত্রী সা...

পটল কেন উপকারী?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: পটল আমাদের দেশের পরিচিত একটি সবজি, যা খেতে...

মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে

জেলা প্রতিনিধি: বিচারের আগে মিডিয...

হোয়াটসঅ্যাপে আসছে পরিবর্তন

টেকলাইফ ডেস্ক: জনপ্রিয় যোগাযোগ মা...

মঙ্গলবার ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষষ্ঠ উপজেলা পরি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা