ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণের অভাব ও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভাড়াটিয়ারা ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ছেন। বেসরকারি চাকরিজীবী সিদ্দিকুর রহমানের মত বহু মানুষ তার পরিবারসহ শহরের দূরবর্তী এলাকায় বাসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। মতিঝিলের অফিসের তুলনায় বাড্ডা এলাকায় ভাড়া কম হওয়ায় সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। তবু মাসের বেতনের একটি বড় অংশই যায় ভাড়া পরিশোধে।
সিদ্দিকুর বলেন, “গত বছর বাড়ির মালিক ১ হাজার টাকা বাড়িয়েছে। আমরা আয়টা যেন বাড়ির মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছি। বছরের শেষের দিকে আবার বাড়ানো হতে পারে, এতে আমরা আতঙ্কিত।”
ঢাকার ভাড়া বাজারে ব্যাপক নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, ২৫ বছরে রাজধানীতে বাসা ভাড়া প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে আয়ের তুলনায় বাসা ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ। ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের ৫০ শতাংশ এবং ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের ৭৫ শতাংশ ব্যয় করেন ভাড়া পরিশোধে।
শহরের ঘনবসতি ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি
ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ৭২ শতাংশই ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে শহরে বাসা ভাড়া বেড়েছে ৫.৮৯ শতাংশ। রাজধানীর আড়াই কোটি মানুষের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ ১২ হাজার মানুষ নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমান বলেন, “বেতনের ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ১৮ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ চলে যায়। নিত্যপণ্য, স্কুল ও পরিবারের খরচের সঙ্গে মিলিয়ে বাসাভাড়া সংসার টানাটানির মধ্যে রাখছে।” বনশ্রী এলাকার রোকনুজ্জামান রোকনও একই সমস্যা তুলে ধরেন।
ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার যুক্তি
বাড়ি মালিক রুহুল আমিন বলেন, “বাড়ি নির্মাণ, ব্যয়, লোন এবং জীবনযাত্রার খরচ সামলাতে বছরবরে ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন। যারা চাকরি করেন তাদের বেতন বাড়ে, আমাদের কি বাড়াতে পারব না?”
ঢাকা ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান কালবেলা বলেন, “নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের আবাসন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এলাকাভিত্তিক ম্যাপিং ও ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।”
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার জানান, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের নীতি না থাকায় বাড়ির মালিকরা যেভাবে ইচ্ছা ভাড়া বাড়াচ্ছেন। সঠিক আইনের প্রয়োগ ও মনিটরিং জরুরি।”
সাবলেটের মাধ্যমে চাপ সামলানো
ভাড়াটিয়ারা চাপ সামলাতে সাবলেটে বাসা ভাড়া নিচ্ছেন। মালিবাগে সাজ্জাদ হোসেন ১৬ হাজার টাকার ফ্ল্যাটে থাকে, তার এক রুম সাবলেট হিসেবে ৭ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। মোহাম্মদপুরে আনিস আহমেদও এক রুমের সাবলেট নিয়ে থাকছেন।
আইন ও নীতিমালা অমান্য
২০০৭ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ৭৭৫টি এলাকায় ভাড়া নির্ধারণ করলেও তা কার্যকর হয়নি। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে মূল ভাড়া বাড়ানো যায় না, তাও মানা হচ্ছে না।
ডিএনসিসির উদ্যোগ
বছরবরে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর অব্যবস্থার কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রথমবারের মতো ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের অধিকার নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। বৈঠকে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ ও বছরে বৃদ্ধি হারের বিষয়ে আলোচনা হবে।
সাননিউজ/এও