নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েকে উদ্ধারে পাচারকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় পাচার হয়ে মেয়েকে উদ্ধার করেছেন এক সাহসী মা। এ ঘটনায় পাচারকারী কাল্লু-সোহাগ ওরফে কাল্লু-নাগিন সোহাগ ওরফে মামা-ভাগিনা ওরফে কালা-নাগিন সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (১৬ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আজ (সোমবার) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর শাহ পরান ক্যাম্পের এক তরুণীকে বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখায় প্রতিবেশী মামা কাল্লু-সোহাগের পাচারকারী চক্র। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারিতে সাতক্ষীরা এলাকায় তরুণী নাগিন সোহাগ ও কাল্লুর সঙ্গে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
কিন্তু সেখানে চাকরি না দিয়ে সাতক্ষীরায় সীমান্ত এলাকায় নিয়ে কিশোরীকে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন কাল্লু ও সোহাগ। সেখান থেকে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য বিল্লাল এ তরুণীসহ আরও তিনটি মেয়েকে অবৈধভাবে পাচার করে দেন ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে। ঘটনার কিছুদিন পর একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে তরুণী তার মাকে জানায় সে ভারতে আছে। সে তার মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানায়।
এই পরিস্থিতিতে উপায় না দেখে মেয়েকে বাঁচাতে মা স্বেচ্ছায় বিক্রি হয়ে যান পাচারকারী চক্রের কাছে। ভারতে পাচার হওয়া মেয়েকে উদ্ধার করতে নিজের পরিচয় গোপন করে কৌশলে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য নাগিন সোহাগ ও কাল্লুর কাছে চাকরির সন্ধান করেন ওই কিশোরীর মা।
গত ফেব্রুয়ারিতে নাগিন সোহাগ ও কাল্লু একইভাবে ভুক্তভোগী কিশোরীর মাকেও এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। চক্রটি একই পথে অবৈধভাবে তাকেও নিয়ে যায় ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে। তবে মানবপাচারকারী ওই চক্রের সদস্যদের হাত থেকে মা খুব কষ্টে পালিয়ে যান।
এরপর মেয়েকে খুঁজে পেতে তিন মাস ধরে কলকাতার অলিগলি, কখনও দিল্লির অলিগলি চষে বেরিয়েছেন। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ (পশ্চিম দিনাজপুর) ও বিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা কিশানগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন সাহসী এ মা।
উদ্ধারের পর বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় ভারত সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের ধরে ফেলেন। পরে পুরো ঘটনা খুলে বললে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে যোগযোগ করে বিএসএফ। এরপর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
এদিকে ভুক্তভোগী মা র্যাবকে জানান, পাচারকারী চক্রের সদস্য কাল্লুর সহযোগিতায় তিনি ভারত যান। ভারতের কিশোরগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার একটি পতিতা পল্লী থেকে মেয়ে খুশিকে উদ্ধার করে কয়েক মাস পর তিনি বাংলাদেশে আসেন। এ বিষয়ে পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হয়। পরে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে আসামিদের আটক করে র্যাব।
সান নিউজ/কেএইচ/এনএম