নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের দেয়া একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবে নাখোশ হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
কমিটি এটিকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবারের সুযোগ দেয়ার ‘অভিপ্রায়’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এবিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে রোহিঙ্গাদের জন্য বাড়ি তৈরি বা শিক্ষার সুযোগের নামে বিশ্বব্যাংক যেন ‘ধানাইপানাই’ না করতে পারে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে বলেছে কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনার পর এই সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান জানান।
শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ ’রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে ১৬টি দেশের শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
তাতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ করা, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার শরণার্থীদের দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে মতামত চেয়ে জুনের ৩০ তারিখ অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে জানান, সরকার ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি; তার ‘বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’।
ফারুক খান বলেন, আমরা কমিটিকে বলেছি বিশ্বব্যাংক এ ধরনের ধানাইপানাই করে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করতে চায়। রোহিঙ্গাদের সেটেলমেন্টের জন্য এটা সেটা প্রস্তাবনা মানা যাবে না। আমরা স্পষ্টতই, এর বিরোধিতা করেছি। আমরা খুব কঠোরভাবে বলেছি, বিশ্বব্যাংকের ঘাপলার চক্করে যেন আমরা না পড়ি।
মিয়ানমারে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন জানিয়ে ফারুক খান বলেন, আমাদের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি নাকি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তারা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। তবে, কবে নাগাদ হতে পারে তার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্ব ব্যাংককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আমাদের এসব টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে কেন? এখানে তাদের জমি কেনার কথা বলা হচ্ছে কেন? এই প্রস্তাবগুলো আপনারা মিয়ানমারকে দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমাদের এখানে ৯/১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের মধ্যে তিনশ জনেরও কম আছে যারা গ্রাজুয়েট। তাদের তো সেই দেশেরই পড়াশুনা করার অধিকার নেই। বিশ্বব্যাংক চাইলে মিয়ানমারকে টাকা দিক, সেদেশের রোহিঙ্গাদের পড়াতে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা ভাসান চর পরিদর্শনে গিয়ে খুশি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ এরকম করার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সেটা কেন করব? এখানকার জায়গা সংকটের কারণেই আমরা ভাসানচরে তাদের নিচ্ছি। তা ছাড়া এটা আমাদের বনের জমি। তাদের কারণে আমাদের বন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান এবং হাবিবে মিল্লাত অংশ নেন।
সান নিউজ/এফএআর