নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার তান্ডবে দেশের অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানিমুখী—এই দুই ধরনের অর্থনীতিতেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। এতে দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছোট-মাঝারি খাতও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই স্থবিরতার প্রভাব অচিরেই চাকরির বাজারসহ অন্যান্য কর্মস্থানে থেকে ছিটকে পড়বে বহু মানুষ। এতে চলতি বছরেই দেশে নতুন করে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে বেকার হয়ে পড়ায় দরিদ্রের হাড় দেড় কোটিতে পৌচেছে। চাকরি হারিয়েছেন দেশের মোট শ্রমশক্তির তিন শতাংশেরও বেশি মানুষ। যারমধ্যে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শহরাঞ্চলে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ছিলেন।
অর্থনীতি বিদরা বলছেন, করোনার প্রভাবে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের মতো মৌলিক চাহিদার পেছনেও ব্যয় কমে যাবে। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার মানেও বেশ হ্রাস পাবে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে,এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাঁদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। যার মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ বসবাস করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশেও বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী কর্মচ্যুত হবেন।
সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে,করোনার প্রথম ঢেউয়ে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চার লাখ অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।
এ অবস্থায় প্রবাসীরা আছেন সবচেয়ে বিপদে।প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। তাই ওই দেশগুলোর লকডাউনের প্রভাব সার্বিকভাবে জিডিপিতেও পড়েছে। ফলে এই রেমিট্যান্সের হার ২২ শতাংশ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক।
জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের আট দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, ইরাক ও লেবাননবেশির ভাগ বাংলাদেশি প্রবাসীরা থাকেন। এসব দেশ থেকে প্রবাসী আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে। কিন্তু করোনার প্রভাবে এসব দেশ থেকেই চাকরি হারিয়ে কর্মীরা ফিরে আসছেন। ফলে ভোগ, সরকারি ব্যয়, আমদানি ও রপ্তানি সূচক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতনির্ভর অর্থনীতির কতটা ক্ষতি করেছে, তার প্রমাণ হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগে জিডিপির ২৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হয়ে যাওয়া।
উল্লেখ্য,গত ১২ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকও এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট- মুভিং ফরওয়ার্ড : কানেক্টিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেন্থেন কম্পিটিটিভনেস’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক উল্লেখ করেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার কমেছে এবং দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম দেশে দরিদ্র কমার প্রবণতা বিপরীতমুখী। এ বাস্তবতায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন,চলমান করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা ধরনের পরিবর্তন আসবে। এর প্রভাবে আমাদের পোশাকসহ বিভিন্ন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের যে অদক্ষ কর্মী কাজ করেন, তারা কাজ হারাবেন। এতে প্রবাসী আয়েও ধাক্কা লাগবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেকগভর্নর,সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনার আঘাতে বিশ্ব লন্ডভন্ড অর্থনীতি। দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে এর প্রভাব। এ নিয়ে এখন যে দুশ্চিন্তা সেটি এতটা প্রকট হতো না,যদি ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী থাকত।
সাননিউজ/এমআর