হাসনাত শাহীন, বইমেলা থেকে : বৈশ্বিক মহামারি করোনার দৌরাত্ম্যে হবে না হবে না করেও শেষ পর্যন্ত শুরু হয়েছে বাঙালির প্রধানতম এই সাংস্কৃতিক উৎসব বইমেলা। প্রাণের এই মেলা বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও এবারই প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘অমর একুশে বইমেলা’ নামে। প্রায় দেড় মাস বিলম্বে শুরু হওয়া এই বইমেলার আজ শনিবার (২০ মার্চ) তৃতীয় দিন।
দিনটি, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বইমেলার নীতিমালা অনুসারে এদিনের মেলার দুয়ার খোলে সকাল ১১টায়। এসময় থেকে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা যায় মেলা এখনও গুছিয়ে ওঠেনি। এখনও শেষ হয়নি অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজ। শেষ হয়নি মেলাপ্রাঙ্গণের শৌচাগার নির্মানের কাজও।
শনিবার (২০ মার্চ) মেলা শুরুর পর থেকে মেলার মধ্যান্ন বিরতির পর্যন্ত মেলার সব অংশ পরিদর্শন করে দেখা যায়, এখনও চলছে বেশ কিছু স্টলের নির্মাণ কাজ। মেলার সব অঞ্চল থেকেই পাওয়া যাচ্ছে হাতুড়ি-বাঁটালের ঠুক-ঠাক আওয়াজ। রঙ করার কাজ চলছে অনেক স্টলে, আবার কোথাও লাগানো হচ্ছে স্টলের ছাদ ও নামফলক।
এসব বিষয় নিয়ে স্টলগুলোর স্বত্তাধিকারী ও বিপণন কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলেও শীঘ্রয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পুরোদমে বই বিকিকিনির কাজ শুরু করতে পারবো।
এবিষয়ে দেশের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম জানান, এবার বাংলা একাডেমি থেকে স্টল-প্যাভেলিয়ন বরাদ্দ পেতে সময় বেশি লেগেছে, ফলে এদিকে সময় কম পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করেন বলে নিরাপত্তা জনিত কারণে আগের রাতের মধ্যেই সব কাজ শেষ করতে হয়। কিন্তু এবার সেই বিষয়টি না থাকায় অনেকেই আস্তে ধীরে কাজ করছেন।
করোনা থাকলেও অন্য যে কোনো বারের তুলনায় এবার মেলার প্রথম দুই দিনে জনসমাগম ভালো; যদিও তা সন্ধ্যার পর থেকে। সকালে বা মেলার প্রথম প্রহর থাকে প্রায় জনশূন্য। তার সাথে মিল রেখেই যেন এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে ওঠেনি মেলা।
এ বিয়ষে চারুলিপি প্রকাশনির স্বত্তাধিকারী হুমায়ুন কবীর জানান, বইমেলা হবে কি হবে না সে বিষয়ে একটা দ্বিধা ছিল প্রথম থেকেই। এর মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন করোনার প্রকোপ বাড়লে মেলা নিয়ে যে কোন সময় অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সব মিলিয়ে আসলে লেখক-পাঠক-প্রকাশক উভয়েই এখনও দ্বিধান্বিত। মানুষ এখনো বুঝতেই পারছে না যে মেলা আদৌ হচ্ছে কি না। এরপর ঝড়-বৃষ্টির কথা মাথায় রাখা লাগছে। আর এই সবকিছু মিলিয়ে কাজে অগ্রগতি কম।
এদিকে, মেলার তৃতীয় দিনে এসেও এমন স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মানের হাতুড়ি-বাঁটাল আর পেরেক ঠোকার শব্দে অসন্তুষ্টু আগত পাঠকেরা। তারা বলছেন- যতটা আশা নিয়ে বইমেলা আসা, ততটুকু পাচ্ছেন না তারা। করোনার এই দ্বিতীয় প্রকোপের সময় মেলায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে তেমন সন্তোষজনক ব্যবস্থাও নেই। মেলায় প্রবেশ করার পর জীবানু নাশক দিয়ে রাখা হলেও তা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে বোঝা মুশকিল। স্যানিটাইজার হাতে দেওয়ার সময় মনে হচ্ছে একেবারে পানি হাতে দিচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী ও বর্তমানের প্রেস ব্যবসায়ী আকাশ আহমেদ সান নিউজকে বলেন, মেলার আজ তৃতীয় দিন। দুটো ছুটির দিন যাচ্ছে, অথচ- না বাংলা একাডেমি, না প্রকাশকরা; কেউ সেভাবে এখনো প্রস্তুত নয়। অনেক বেশি জায়গা নিয়ে এবারের বইমেলা হলেও সবখানেই সুষ্ঠপরিকল্পনার অভাব। এবং সবখানেই অব্যস্থাপনা। অবাক করা বিষয় হলো- এবার এখন পর্যন্ত মেলার বড় বড় প্রকাশনগুলোও তাদের স্টল-প্যাভিলিয়ন গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এটা আসলেই হতাশাজনক।
এদিকে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকেও এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি মেলার বাথরুম, নামাজ আদায় করার কক্ষ, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বেশ কিছু অংশ। বেশিরভাগ স্টলেই চলছে কাজ শেষ করার জোর প্রস্তুতি। আর হাতে গোনা কয়েকটি স্টল-প্যাভেলিয়নে বই সাজাতে ব্যস্ত দেখা গেছে প্রকাশকদের।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জানিয়েছেন- কাজ শেষ করার জন্য দ্রুত গতিতেই কাজ করা হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্রয় সবকিছুই ঠিক হবে যাবে।
সাননিউজ/এইচএস/এম
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            