মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে সেনাবাহিনী সম্প্রতি ১৫ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনা নিছক একটি মামলার অংশ নয় বরং এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীরে বিরাজমান নীতিগত দ্বন্দ্ব ও জবাবদিহিতার সংকটকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে -গোপন নিরাপত্তা অপারেশন ও প্রকাশ্য আইনি বিচারের সীমারেখা আসলে কোথায়?
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বহু সময় ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষা’ ও ‘সংবেদনশীলতা’র যুক্তিতে এমন সব পদক্ষেপ নেয়, যা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে প্রশ্নবিদ্ধ। তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে এসব প্রশ্ন প্রায়শই চাপা পড়ে যায়। এভাবে গড়ে ওঠে একটি ধূসর অঞ্চল “স্যান্স-জোন গ্রে” যেখানে আইন, কর্তৃত্ব ও নৈতিকতার সীমারেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র তখন এক ধরনের "অদৃশ্য শান্তির যুদ্ধ" চালায়, যেখানে যুদ্ধের অস্ত্র নয়, ব্যবহৃত হয় নীতির অস্পষ্টতা ও জবাবদিহির শূন্যতা।
এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে হয় রোহিঙ্গা সংকট, সীমান্ত নিরাপত্তা কিংবা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে অতীতে গৃহীত বহু অপারেশন গোপন নীতির আওতায় থেকে দায়মুক্তির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বর্তমান ঘটনায় আদালতের হস্তক্ষেপ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে, এই গোপনীয়তার কাঠামো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এটি আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় এক কঠিন প্রশ্নের মুখে: রাষ্ট্র কি আইনের প্রতি আনুগত্য দেখাবে, নাকি নিরাপত্তার অজুহাতে আইনকে পাশ কাটিয়ে চলবে?
এই দ্বন্দ্ব নিছক প্রশাসনিক বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত নয়, বরং এটি সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিকও। কারণ রাষ্ট্র যদি নিজেই নিজের বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় না আনে, তবে বিচারব্যবস্থা এবং নাগরিক অধিকার -উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে প্রথমত, অতীতের মতো গোপন অপারেশনকে প্রাধান্য দিয়ে দায়মুক্তির সংস্কৃতি বজায় রাখা। দ্বিতীয়ত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সকল বাহিনী ও সিদ্ধান্তকে জবাবদিহির আওতায় আনা। এখানে আদালতের নির্দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে কার্যকর আইনি কাঠামোর বাইরে কোনো ‘নিরাপত্তা’ই টেকসই নয়। তবে এই বার্তা বাস্তবে কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নীতিগত স্বচ্ছতা এবং প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার।
সবশেষে প্রশ্ন থেকেই যায়: রাষ্ট্র কি নিজেকে আইনের কাঠামোয় দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করতে পারবে? নাকি “অদৃশ্য শান্তির যুদ্ধ”ই হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের স্বাভাবিক শাসন-পদ্ধতি?
সাননিউজ/এও