রাজনীতি

পিলখানা হত্যায় দায়ীদের চূড়ান্ত বিচার দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের মধ্যেই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের চূড়ান্ত বিচারের রায় দাবি করেছে বিএনপি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের একাদশ বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতি সৌধে পুস্পমাল্য অর্পনের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে এই দাবির কথা জানান।

মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা সম্ভব হয়নি। বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা আমাদেরকে হতাশ করেছে, দেশবাসী মর্মাহত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত স্লো এবং স্লথ গতিতে চলছে।

তিনি বলেন, এই বছরের মধ্যে লিভ টু আপীল এবং আপীলের কার্য্ক্রম শুরু হবে বলে এমন কোনো আশা, এমন কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্যে বিচার বিভাগের প্রতি আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এই বছরের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা হবে, চূড়ান্ত রায় দেয়া হবে। দণ্ড প্রাপ্তদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সে বিদ্রোহে সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহে বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের বিদ্রোহ। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হয়।

৫৭টি বিদ্রোহের মামলা বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। সেখানে ৬ হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার শুরু হয় সাধারণ আদালতে।

ঢাকা জজ আদালত ২০১৩ সালে দেয়া রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলো। এছাড়া ২৫৬ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়।

২০১৭ সালে দেয়া রায়ে ১৩৯ আসামীকে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। ১৮৫ জনকে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়, তিন থেকে ১০ বছরের সাজা দেয় ২২৮ জনকে।

পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে সেনা কর্তৃপক্ষ একটা কোর্ট অব ইনকোয়ারি করে। সেই কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।

তিনি বলেন, এই ধরনের হত্যাকান্ড বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এর সুষ্ঠু বিচার এবং তদন্তপূর্ব সুষ্ঠু বিচার কামনা করি। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দূর্বল করার জন্যে। এর বেনিফিশিয়ারি কারা সেটিও দেশবাসী পরিস্কার জানতে চায়।

মেজর হাফিজ অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যে নিম্ন বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে খালাস দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, সবাইকে আনা হয় নাই, কয়েকজনকে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী তারা এখন পর্যন্ত পর্দা অন্তরালে রয়েছে। দেশবাসীর সামনে তাদের পরিচিতি স্পষ্ট নয়। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাবো হত্যাকাণ্ডের যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি শক্তিসমূহ, ষড়যন্ত্রকারী তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।

হাফিজ আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিবর্গের সাথে সাথে একজন সুবেদার মেজর যিনি অফিসারদেরকে রক্ষা করার জন্য যাকে হত্যা করা হয়েছিলো তার পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় নাই। আমি এ ব্যাপারে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করছি। একই সঙ্গে যারা নিহত হয়েছিলেন সেই শহীদ পরিবারসমূহ কষ্টে মনোবেদনার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন। তাদের এবং শহীদদের আত্মার শান্তির বিধান করার জন্যে দ্রুত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা আশা করি।

তিনি বলেন, এদেশে আমরা সুশাসন কামনা করি। এদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে- এই কামনা করি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান তিনি।

সকাল পৌনে ১১টায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলের নেতৃবৃন্দ স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। তারা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।

এ সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, কর্ণেল (অব.) মো. ইসহাক, কর্ণেল (অব.) মনিষ দেওয়ান, কর্ণেল (অব.) কামরুজ্জামান, মেজর (অব.) মো. হানিফ, মেজর (অব.) সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) সাঈদুল ইসলাম, মেজর (অব.) মো. হাসান, বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীমুর, শাহ খালেদ হাসান চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

সাননিউজ/টিএস/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা: শীতবস্ত্র বিতরণ

বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্ত...

মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থত...

মুন্সীগঞ্জে অ্যাডভোকেট এ.বি.এম ফিরোজ ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র বিতরণ

দুস্থ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে—সব সময়, এই স্লোগান সামনে রেখে মুন্সী...

গজারিয়াতে হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে নারীসহ তিনজন আটক

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে একটি আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে ২ নারীসহ...

খাগড়াছড়িতে চলছে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা, নিরব প্রশাসন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই খাগড়াছড়িতে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। রাতে...

প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পর হত্যার হুমকি, গানম্যান চাইবেন হিরো আলম!

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পর থেকেই হত্যার হুমক...

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন ২০ হাজার নেতাকর্মী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্...

মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থত...

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে যানজটের আশঙ্কা, বিমানযাত্রীদের জন্য নির্দেশনা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরব...

নোয়াখালীতে চর দখল নিয়ে গোলাগুলি, নিহত ৫

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা