ছবি : সংগৃহিত
মতামত

নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখুন

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান : মানুষ সবসময় নিজেকে ভালো অবস্থায় দেখতে চায়। যার ভাবনা যেরকম তার বাস্তবতাও সেরকম। কেউ সাময়িক প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। আবার কেউ সর্বজনীন ধারণা নিয়ে পথ চলে। তাই প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে, আপনি নিজের ব্যাপারে কী ভাবছেন? কেন ভাবছেন? এখানে যদি আপনি স্পষ্ট থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতের পথ চলা আপনার জন্য সহজ হবে। এবার আপনার ভাবনাগুলোকে সময়ের সাথে মিলিয়ে নিন। প্রয়োজনে নিজেকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করান। কখনোই সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। নিজেকে ভীতু ভাববেন না।

আরও পড়ুন : দুর্ঘটনায় নিহতদের জীবনের মূল্য কত?

এবার আপনি কি বুঝতে পারছেন, আপনার চিন্তাগুলো কতটা বাস্তবভিত্তিক? যদি এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তাহলে ভুল পথে চিন্তাগুলোকে এগিয়ে নেয়ার চেয়ে ওখানেই মেরে ফেলুন। হয়তো সবগুলো শেষ নাও হতে পারে, যাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় বলে ভাবছেন, ওগুলো নিয়ে আরেকবার ভাবুন। এর ভেতরে থাকা ভুলগুলোকে সংশোধন করে নিন। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনোই সামনে এগোবেন না, যার ওপর আপনি নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।

হয়তো আপনি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন; এবার নিশ্চয়ই চিন্তার জগৎ ছেড়ে কাজে আসার কথা ভাবছেন। এখানে আপনাকে খুব বেশি সময় হারালে চলবে না। এখানে যত সময় ব্যয় করবেন, ততই জীবন থেকে পিছিয়ে পড়বেন। এটিই আপনার বাস্তব জীবনের প্রথম পদক্ষেপ যার প্রতিটি মুহূর্ত আপনার কাছে বড়ই মূল্যবান হতে হবে। এখানে আরেকটি কথা ভেবে নিতে পারেন, আপনি যা করছেন, তা কেন করছেন, কার জন্য করছেন? যদি উত্তর হয় নিজের জন্য, বা কারো জন্য, তাহলে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আরেকটু যত্ন বান হোন। কাজের প্রতি একাগ্রতা আনতে হলে সেই কাজ সম্পর্কে অন্তরে ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। তাহলে অনেক কাজ করেও আপনি ক্লান্তি অনুভব করবেন না। আপনার কাজে যদি আত্মতৃপ্তি থাকে, ওই কাজে আপনি অনেক বহুমাত্রিকতা যোগ করতে পারবেন। তাই প্রতিটি কাজের ব্যাপারে একটি পরিচ্ছন্ন চিন্তা-চেতনা থাকা খুবই প্রয়োজন। আপনি যে উদ্দেশ্য নিয়েই কাজটি করে থাকুন না কেন, সেটি যেন সঠিক উপকার দিতে পারে আপনি সেই দিকে লক্ষ্য রাখুন।

আরও পড়ুন : নারীর চ্যালেঞ্জ, নারীর অগ্রযাত্রা

যারা এ ধরনের মানসিকতা লালন করে, তারা কখনো নিজের স্বার্থের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে না; বরং বৃহৎ কল্যাণে নিজেদের অনেক খুশিকেও হাসিমুখে ছেড়ে দিতে জানে। আপনি সবচেয়ে উত্তম নিয়তটি গ্রহণ করুন। নিয়তের পরিচ্ছন্নতা মানুষ হিসেবে আপনার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। এই জায়গায় আপনি সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে না পারলে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

আপনার যাত্রা শুরু হলো। হয়তো আপনি আত্মোন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছেন। একে একে আপনি সামনের দিকে এগিয়ে চলুন। একে একে নিজের কাজগুলোকে পর্যালোচনা করে নিন। মানুষ তার আচরণে যত বেশি মানবিকতার বিষয় পরিচয় দিতে পারবে, মানুষ হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়তে থাকে। এ জন্য মানুষকে কিছু কমন গুণাবলি অর্জন করতে হয়। শুরুতে পাওয়ার প্রত্যাশা ছেড়ে দিন। অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করুন। সবার আগে, ভালো মানুষ হতে চেষ্টা করুন। পরনিন্দা, পরচর্চা ও পরশ্রীকাতরতা- এ জাতীয় কাজগুলো ছেড়ে আত্মগঠনমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন।

কারো শুভেচ্ছা বিনিময়ের অপেক্ষা না করে নিজেই অন্যের কুশলাদি জানার চেষ্টা করুন। সালামকে ফ্যাশন না বানিয়ে সালামের গুরুত্ব বুঝে সালাম বিনিময় করুন। সবসময় অন্যের সালামের অপেক্ষা করবেন না। এতে আপনার প্রতি মানুষের ভুল ধারণার জন্ম নিতে পারে। ছোটখাটো বিষয়গুলোকে এমন করে ভাবতে শিখুন। কেউ আপনার খোঁজ রাখছে না, তাতে কী হয়েছে? তার চেয়ে আপনি দায়িত্বশীল হয়ে অন্যের খোঁজ রাখুন। এতে আপনার জন্য দুটো উপকার আসবে। এক. আপনার দায়িত্বশীল আচরণের কারণে অনেক পুণ্যের অধিকারী হবেন; দুই. মানুষ হিসেবে আপনার সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় হবে। আপনি ভালোবাসা অর্জনের প্রকৃত অবস্থানে চলে যাবেন। হয়তো সমাজের মেকি সৌন্দর্য আপনাকে হতাশায় ফেলতে পারে, আপনি নিজের জন্য হতাশাকে সঙ্গী করবেন না। কারণ, প্রকৃত সৌন্দর্য কখনোই ভুল মানুষের সাথে সখ্য তৈরি করে না। একসময় সে যথাস্থানে ফিরে আসে। আপনি অবশ্যই আশা রাখতে রাখতে পারেন, সে আপনার দিকেই আসবে। কারণ, আপনি নিজের জীবনে সেই জিনিসকে সঙ্গী করে নিয়েছেন, যা মহামানবদের জীবনকেও মহিমান্বিত করেছে।

আরও পড়ুন : আমাদের বিমান কাদের হাতে?

আপনি কাউকে ভালোবাসেন, সেই ভালোবাসার মান দিতে শিখুন। সামান্য স্বার্থের জন্য সেই ভালোবাসাকে কখনোই কলঙ্কিত করবেন না। যার প্রতি বিশ্বাস রাখছেন, প্রয়োজনে তাকে পরীক্ষা করে নিন। এমন বন্ধুকে কখনোই নিজের ভরসাস্থলে দাঁড় করাবেন না, যে আপনার কঠিন সময়ে চরম স্বার্থপরতার পরিচয় দেয়। এ ধরনের বন্ধু আপনার জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। বন্ধুকে কখনোই প্রতিপক্ষ ভাববেন না।

যদি বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে আপনার ভালোবাসা টিকে যায়, আপনি তাকে পরম আপন করে কাছে টেনে নিন। এই বন্ধু কখনোই আপনার ক্ষতির কারণ হবে না। কারণ, সে আপনাকে ভালোবাসে মনের জোরে; ভালোবাসার খাতিরে। আপনি তার থেকে দূরে সরে যেতে চাইলেও সে আপনাকে কাছে ধরে রাখবে। বন্ধুত্বের চোখ বিশ্বাসের চোখ। তার দিকে তাকালে, তার কথা শুনলে, তার মনের অভিলাষ বুঝতে পারবেন। আপনার অকল্যাণ হোক, সে কখনো তা ভাবতে পারে না। তাই কাছের মানুষের থেকে সবসময় সমালোচনা নিতে প্রস্তুত থাকুন। তার গঠনমূলক সমালোচনা আপনাকে অনেক বেশি মানবিক করে তুলবে। নিজের ভুলগুলো অনায়াসে বুঝতে পারবেন। অন্য মানুষের মতো কখনোই তাকে ভাববেন না। অন্যেরা আপনার থেকে স্বার্থ হাসিলের জন্য আপনার ভুলগুলোকেও প্রশংসনীয় করে উপস্থাপন করবে। আপনার কাছের মানুষকে যদি আপনি অবমূল্যায়ন করতে থাকেন, এক সময় সে কষ্ট পেয়ে আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ফলে একটু একটু করে আপনি দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে চরম ক্ষতিতে পড়ে যেতে পারেন। তাই বিপদে পড়ে সাবধান হওয়ার চেয়ে অনাগত বিপদকে বুঝতে শিখুন।

আরও পড়ুন : উন্নয়ন প্রকল্প কি বায়ু দূষণের কারণ?

সাময়িক রাগের বসে এমন কিছু করবেন না, যা আপনার করা উচিত নয়। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাই সঠিক মানুষের কাজ। স্মরণে রাখবেন, কখনোই রুক্ষতা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। মানুষের মন জয় করতে হলে ভালোবাসার প্রয়োজন। যে আপনার সাথে খারাপ আচরণ করছে, প্রয়োজনে তার সাথে ভালো আচরণ করুন। আপনার সূক্ষ্ম চিন্তা দিয়ে তাকে ভালো-মন্দের তফাত বুঝিয়ে দিন। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনার প্রতি তার ভালোবাসার জন্ম হবেই।

সমাজে খুব কম মানুষ পাওয়া যায়, যারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে। অনেকের ওপর দায়িত্বের ভার চাপিয়ে দিলেও দায়িত্ব এড়িয়ে চলবে। কারণ সে এখান থেকে কোনো ধরনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পায় না যা তাকে প্রলুব্ধ করতে পারে। যেখানে সে আশার আলো দেখতে পায়, সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এ ক্ষেত্রে সে একটুও সেক্রিপাইস করতে রাজি নয়। যদি কখনো এসব মানুষের সামনে তাকে সরিয়ে অন্য কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিতে বসানো হয়, তাহলে সে কখনো কাজে সহযোগিতা তো দূরের কথা, সুন্দর পরিবেশটুকু দেবে না। দিতে চাইবে না। তাকে নানাভাবে অবিশ্বাসের জালে জড়াতে চাইবে। তাকে বিপদে ফেলার জন্য মরণফাঁদ রচনা করবে, যাতে এই ভালো মানুষটিকে সমাজের চোখে মন্দ মানুষ সাজিয়ে দেয়া যায়। এরকম পরিস্থিতিতে আপনাকে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। দুশমন যদি আপনার দিকে শত্রুতার হাত বাড়িয়ে দেয়, আপনাকেও মানুষের সামনে দুশমনের মুখোশ খুলে দিতে হবে। মন্দ যদি নিজেকে ভালো সাজিয়ে দেখাতে পারে, তাহলে ভালো কেন মন্দের কাছে পরাজয় বরণ করবে? এ ধরনের ভালো মানুষ হওয়ার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। নিজেকে প্রতিবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করুন।

আরও পড়ুন : অমর একুশে এখন শোক নয় উৎসব

মানুষকে কখনোই অসম্মান করবেন না। ছোট হোক বা বড়, সবার প্রতি সম্মান রেখে কথা বলবেন। আজকে পদমর্যাদায় নিজেকে অহঙ্কারী ভেবে নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন না, যাতে মানুষের কাছে আপনার মর্যাদা অনেক নিচে নেমে যায়। আপনি একবার নিচে নামতে শুরু করলে উপরে উঠা আপনার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আপনি চাইলেও অনেক কিছু পারবেন না, কারণ তা আপনার স্বভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। আপনি যদি নিজের উপরে উঠার রাস্তাটা তৈরি করতে পারেন, একটু একটু করে উপরে উঠে যেতে থাকবেন, তখন আপনার ভালো কাজ করতে আরও ভালো লাগবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা