ছবি : সংগৃহিত
মতামত

দুর্ঘটনায় নিহতদের জীবনের মূল্য কত?

মিকাইল হোসেন : দুর্ঘটনা একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে। বিস্ফোরণে হতভাগ্য মানুষের মৃত্যু আর দেহ ক্ষত- বিক্ষত হওয়া যেন নিয়মিত নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণবাবদ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও লাশ দাফনের জন্য সামান্য কিছু নগদ অর্থ সহায়তা পায় তাতেই যাদের অবহেলায় দেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয়, লাশ হতে হয় তারা সহজেই দায়মুক্তি পায়। কারণ তারা প্রভাবশালী আর হতভাগ্য জনগণের জীবনের মূল্য পায় বড় জোর ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা মাত্র। তখনই প্রশ্ন আসে দুর্ঘটনায় নিহতদের জীবনের মূল্য কত?

আরও পড়ুন : ভবনের ছাদ ধসে ১৬ জন আহত

কয়েকদিন পত্র-পত্রিকায় টেলিভিশনে টকশোয় বিশেষজ্ঞদের বাণীতে আলোচনাটি জীবিত থাকে। তারপর হতভাগ্য লাশের কবর শুকাতে না শুকাতে আহতদের ক্ষত সারতে না সারতে আলোচনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ভুলে যায় সবাই। মনে রাখে শুধু তার পরিবার । বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। রাজনৈতিক নেতাদের পরস্পরের দোষারোপের কারণে আসল অপরাধীরা থেকে যায় আড়ালে। যেভাবেই হোক তারা পার পেয়ে যায়। অর্থ আর ক্ষমতার দাপটে হতভাগ্য মানুষের পক্ষে আর কেউ থাকে না কথা বলার। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর অন্তত তিনটি তদন্ত কমিটি হয়।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয় অধিকাংশ তদন্ত আর আলোরমুখ দেখেনা। কারণ তার মৃত্যু হয় আতুড় ঘরে। আর কিছু তদন্ত প্রকাশিত হলেও তা প্রভাবশালীদের চাপে এমনভাবে চিত্রনাট্য লেখা হয় মনে হয় হতাহত মানুষগুলোই অপরাধী। প্রতিটি দুর্ঘটনার চিত্রই একই সূত্রেই আবর্তিত হয়। দুর্ঘটনা ঘটার পর অসংখ্য সূত্র খুজে পাওয়া গেলেও যাদের অবহেলায় এই সূত্রপাত তাদের আর চিহ্নিত করা হয় না। তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় না। কোনো দুর্ঘটনা থেকেই আমরা প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করিনি।

আরও পড়ুন : আমাদের বিমান কাদের হাতে?

প্রতিটি দুর্ঘটনার যে সব অনিয়ম পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো- ভবন নির্মাণের যথাযথ অনুমতি না থাকা যেমন তিনতলার অনুমতি নিয়ে ছয়তলা করা। অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা, জরুরী বহির্গমনের পথ না থাকা। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোড নেওয়া। বিভিন্ন লাইনের অবৈধ সংযোগ ও দুর্বল সংযোগ। বিষয়গুলো প্রতিটি দুর্ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেও অমীমাংসিত বিষয় হিসেবে থেকে যাচ্ছে প্রতিবারই। যেহেতু মানুষের জীবনের মূল্য কম দিতে হয় তাই আমরা শিক্ষা নেয় না। সহজেই ভুলে যাই। সর্বশেষ সিদ্দিক বাজারের ভবনে বিস্ফোরণ থেকে যদি আমরা শিক্ষা নেয় তাহলে অবৈধ সব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতেই হবে। সকল অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। প্রতিটি প্রাণের মূল্য শ্রম আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। অপরাধীরা যত ক্ষমতাধারী হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে সরকারের চেয়ে কেউ শক্তিশালী নেই। সরকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় হবে শেষ বিস্ফোরণের ঘটনা। অন্যথায় বিস্ফোরণের ঘটনার তালিকা দীর্ঘায়িত হতেই থাকবে। আর হতভাগ্য জনগণের জীবনের মূল্য হিসেবে সামান্য কিছু টাকা দিয়েই দায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : ধসে পড়া ঠেকাতে কাজ চলছে

প্রতিটি দুর্ঘটনায় নিহতদের যদি যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হতো তাহলে আর কেউ অবহেলা করত না। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনার সঠিক বিচার বা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দৃষ্টান্ত না থাকার কারণে কেউ ভয় পায় না। যাদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটে তাদের যদি জীবনের বিনিময় জীবন দিতে হতো বা তাদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ নিহত বা আহদের মধ্যে বন্টন করে দেয়ার দৃষ্টান্ত থাকতো তাহলে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস কেউ পেত না। তাদের কিছু হয় না কারণ তাদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আর গরীব হতভাগ্য মানুষের জীবন মূল্যহীন। তাই রাষ্ট্রকে প্রতিটি নাগরিকের জীবনের চড়া মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি রানা প্লাজা থেকে কারণ সেখানে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হলে ও মালিক পক্ষের কাউকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়নি এমনকি দিতে হয়নি কোনো চড়া আর্থিক ক্ষতিপূরণ। মালিক পক্ষের একজনেরও ফাঁসি হলেও হয়ত পরবর্তীতে অনেকের জীবন বেঁচে যেত।

আরও পড়ুন : অবহেলার অভিযোগে পুলিশের মামলা

২০১২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাজরীন ফ্যাশনে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। নিহত হন ১১২ জন শ্রমিক। মালিক পক্ষের অবহেলা প্রমাণিত হলেও হয়নি কোনো কঠিন বিচার। পুরনো ঢাকার নিমতলীতে ২০১০ সালে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের কথা এখনও হৃদয়ে দাগ কাটে । নিহত হন ১১৭ জন। ২০২২ সালের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন ৪৯ জন। চোখের সামনে আমরা দেখতে পাই আগুনের লেলিহান শিখা কিভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে কয়লায় পরিণত করছে। কয়েকদিন আগে সাইন্সল্যাবের বিস্ফোরণও আমরা দেখেছি।

সর্বশেষ সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণে ১৯ জন মারা গেলেন। হতভাগ্য এসব মানুষের ভাগ্যে জুটবে সামান্য ক্ষতিপূরণের টাকা। তাদের জীবনের মূল্য নির্ধারিত হবে একটি ছাগলের দামের সমান বড়জোর কপাল ভালো হলে একটি গরুর দামের সমান। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন চলে আসে দুর্ঘটনায় নিহতদের জীবনের মূল্য কত ? কারণ বাংলাদেশে দুর্ঘটনার মামলায় যথাযথ বিচারের দৃষ্টান্ত খুবই কম। তাই সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণকে শেষ ধরতে হলে জীবনের বিনিময় জীবন দেয়ার বিধান কার্যকর করতে হবে। মানুষের জীবনের উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় সামান্য মূল্যের বিনিময়ে মানুষ হত্যা চলতেই থাকবে।

আরও পড়ুন : অবহেলার অভিযোগে পুলিশের মামলা

লেখক :

উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার, ঢাকা।

[email protected]

০১৮৮৩-৯৬১৫৩১

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশের মৃত্যু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইন...

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজ ডুবি

জেলা প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলার হ...

যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি যেকোনো উ...

মাটি খোঁড়ার সময় উদ্ধার মাইন-মর্টারশেল

জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীতে পুকুর খননের সময় উদ্ধার দুইটি মাই...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা