ভোগ্যপণ্য (ছবি: সংগৃহীত)
মতামত

ভোগ্যপণ্য নিয়ে তুঘলকির শেষ কোথায়

ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী: ইউরোপ-আমেরিকা-চীনে বিরতিহীন পণ্যবাহী জাহাজ সমুদ্র বাণিজ্যে নবতর এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। পণ্যের চাহিদা-সরবরাহের দোলাচলে অসাধু-নীতিহীনদের অতি মুনাফার লোভ শুধু অরাজক নয়; দেশব্যাপী ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরিতেও কদর্য সহায়ক। সমকালীন বাজার অর্থনীতিতে এই অপশক্তির কারসাজির ফলে জনমনে পণ্য ক্রয়ের আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে অতিসম্প্রতি ভোজ্যতেলের কারসাজি। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়-সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতিকে যেন ধূসর চাদরে ঢেকে দিচ্ছে। একটি ডিওর বিনিময়ে শতকোটি টাকা লাভের গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন এসব অপকৌশল এবং অপকর্মের দুর্ভেদ্য রহস্য আবিস্কারের সামান্য কিছুই অনুভূত হয়েছে।

বিরাজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোজ্যতেলের সংকট ঈদের পরে আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কারণে দুই মাস ধরে সয়াবিন ও পাম অয়েলের আমদানি কমে আসায় ঈদের পর আবার দাম বাড়ানোর ঘোষণায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভোজ্যতেলের সংকট পরিলক্ষিত হয়।

ঊর্ধ্বমুখী পণ্যের বাজারে তেলের এমন সমস্যাকালে গত ৫ মে বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন করে বোতলজাত, খোলা সয়াবিনসহ পাম অয়েলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি প্রায় ৩৮ টাকা ও পাম অয়েলের দাম প্রায় ৪৪ টাকা বেড়ে যায়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশেও মূল্য সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

উল্লেখ্য, সরকার রোজার আগে ভোজ্যতেলের আমদানি-উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে দুই দফা মূল্য সংযোজন কর কমিয়েছিল। সবশেষ গত ২০ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৭ মে দাম বৃদ্ধির পরও ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণই দৃশ্যমান নয়। বাজার-দোকানে সরবরাহ তো বাড়েনি, উল্টো অসাধু ব্যবসায়ী-কারসাজিবাজদের চক্রান্তে সয়াবিন তেল প্রায় উধাও হয়ে যায়। অভিযানে আটক করা হয় হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেল।

ব্যবসায়ীদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এক দিন দাম বাড়লে অন্য দিন দাম কমছে। অধিকন্তু রয়েছে বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে দেশীয় বাজারের দামের সমন্বয়হীনতা। মূলত এ দুই কারণে আমদানিকারকরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। উপরন্তু ইন্দোনেশিয়া গত ২৮ এপ্রিল থেকে পাম অয়েল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য লেনদেনের বাজার বা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে এক দিনেই সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে টনপ্রতি ১৬১ ডলার বা লিটারপ্রতি ১৩ টাকা। পরদিনই আবার এ দাম লিটারে ১৪ টাকা কমে যায়। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল আবারও লিটারে দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ টাকা।

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আর্জেন্টিনাও রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ভোজ্যতেল আমদানির উৎস দেশও সীমিত হয়ে পড়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সূর্যমুখী তেলের অন্যতম উৎস ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় উন্নত দেশগুলোতে সূর্যমুখী তেলের সংকট দেখা দেয়। ফলে ওইসব দেশে বিকল্প হিসেবে সয়াবিন তেল বিক্রি বেড়েছে, যা এ তেলের সংকট বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

আমরা জানি, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে প্রায় ২০ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। দেশের মোট ৮টি প্রতিষ্ঠান পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে তেল এবং বীজ আমদানি করে তা ভাঙিয়ে তেল উৎপাদন করে থাকে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার টন, যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ওই সময়ে কোম্পানিগুলো কাস্টম বন্ডেড ট্যাংক টার্মিনাল থেকে খালাস করেছে ১ লাখ ৪১ হাজার টন সয়াবিন তেল।

ট্যাংক টার্মিনালে মজুত পুরোনো তেলও খালাস করেছে কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে ২ লাখ ৫০ হাজার টন পাম অয়েল বাজারজাতের বিপরীতে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার টন। ২০২১ সালে এই সময়ে আমদানি হয় ২ লাখ ৬৭ হাজার এবং বাজারজাত হয় ২ লাখ ৯৮ হাজার টন। সার্বিক বিবেচনায় আগের তুলনায় আমদানি ও বাজারজাত দুটোই কমেছে। ইন্দোনেশিয়ার দেওয়া নিষেধাজ্ঞার আগে ১ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ব্যবসায়ীরা ১২ কোটি লিটার পাম অয়েল আমদানি করেছেন।

আরও পড়ুন: টেস্ট ক্রিকেট সম্পর্কে নতুন করে ভাবুন

ভবিষ্যতে ভোজ্যতেলের এই সংকট লাঘবে গবেষকরা আমদানিনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, অধিক হারে সরিষা ও সূর্যমুখী চাষাবাদ করে বিকল্প ভোজ্যতেল এবং বিদ্যমান অটো রাইস মিলে অটো রাইস ব্র্যান ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেল রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদনে আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব। জনসাধারণের জীবনপ্রবাহ বিপর্যস্ত-পর্যুদস্ত করার জন্য দায়ীদের সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বারবার ওরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই। এর স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার তদারকি ব্যবস্থায় কোনো ছাড় নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবসার নামে লুণ্ঠন চালাতে পারে না।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী :শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাননিউজ/এমএসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জামায়াত-এনসিপি অসন্তুষ্ট

শুধু মাত্র একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করা...

তারেক- ইউনূসের যৌথ বিবৃতিতে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে- নাখোশ জামায়াত

তারেক- ইউনূসের যৌথ বিবৃতিতে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে জামায়াত। লন্...

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধ...

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়‌কে ১৪ কি‌লো‌মিটার জুড়ে যানজট

পবিত্র ইদুল আযহার ছুটি প্রায় শেষ। তাই সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ একটু বেশি। ঢাকা...

বান্দরবানে পর্যটকের মৃত্যু, ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার

বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক নিহতের ঘটনায় অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ ‘ট্...

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

যদি ইসরায়েল থামে তবে আমরাও থামবো: ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছ...

ইসরায়েলের টার্গেট আয়াতুল্লাহ খামেনি: প্রতিবেদন

বিশ্ববাসির নজর এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের দিকে; দুদেশকে নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেশন চ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা