ছবি : সংগৃহীত
মতামত

প্রত্যাশার শেষ বাতিটি যেন মলিন না হয়

লীনা পারভীন: আমি আওয়ামী লীগের কেউ না। একটা সময় বেশ সক্রিয়ভাবেই বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন দলীয় বিভিন্ন পদেও ছিলাম। একটা সময় স্বপ্ন দেখতাম ফুলটাইম বিপ্লবী হবো। কিন্তু সময়ের বাস্তবতায় এবং বাংলাদেশে রাজনীতিগুলোর দীনতা ও দৈন্য আমাকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন পরিচিতিও কম ছিল না। সুযোগ ছিল সে সময়ের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জড়িত হওয়ারও। কিন্তু বিপ্লবী চেতনায় বেড়ে ওঠা আমাকে নীতির সাথে আপস করতে দেয়নি।

একটা সময় রাজনৈতিক দল ছেড়ে দিলাম কিন্তু রাজনীতিটা ছাড়িনি। বাম আদর্শের একজন কর্মী হয়ে আমি মূলত রাজনীতিটা শিখেছি। জীবনবোধ শিখেছি। আমার মধ্যে বেড়ে ওঠা বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে শাণিত করেছে আমার রাজনৈতিক দর্শন। দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছে। ধীরে ধীরে আমাদের দেশের রাজনীতির গোটা প্রেক্ষাপট পাল্টাতে শুরু করলো। ১/১১ এর ঘটনাই মূলত আমাদের এই আমূল পরিবর্তনের কারণ।

নিজ আদর্শিক দল থেকে বেরিয়ে এসে একটা সময় হতাশ হতাম। দেশ নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে। কিন্তু মানুষ একটা আদর্শ ছাড়া বাঁচতে পারে না। ভেবে দেখলাম, আমিতো আসলে বাংলাদেশের রাজনীতি করি। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশকে সফল দেখতে চাই। এজন্য দরকার একজন সঠিক নেতা, যিনি দেশকে সঠিক ট্র্যাকে রেখে পরিচালনা করতে পারবেন। বিশ্ব আগাচ্ছে অথচ আমরা পিছিয়ে থাকলে তো চলবে না। কিন্তু আরেকজন বঙ্গবন্ধু তো আর পাবো না আমরা। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দলগুলো সব নিজেদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশবিরোধী বলে প্রমাণ করলো। আমরা সাধারণ মানুষ আসলে কী চাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই স্বপ্ন ও আদর্শকে বুকে লালন করে দেশ ও দশের আবেগকে বুকে নিয়ে দেশকে পরিচালনা করার জায়গায় বিরাট শূন্যতা ছিল।

বলতে দ্বিধা নেই যে সেই সময়কার আওয়ামী লীগও কিন্তু এই প্রত্যাশার জায়গাটিকে ধরতে পারেনি। তারাও ক্ষমতার রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরে ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা যেদিন থেকে প্রকাশ্যে শপথ নিলেন যে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রাধান্য দেবেন এবং বাস্তবিক অর্থে কাজ শুরু করলেন, সেদিন থেকে নজর কেড়ে নিলেন তিনি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ দিন গুনছিলাম আর দেখছিলাম তিনি কতটা পারেন। পেরেছেন। তিনি করেও দেখিয়েছেন যে তিনি আর আগের শেখ হাসিনা নেই।

বলেছিলাম ১/১১ এর আগের ও পরের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা। জেল থেকে যেন এক অচেনা শেখ হাসিনা বেরিয়ে এলেন। তিনি এলেন, বসলেন ও জয় করে চললেন একের পর এক। আমাদের প্রজন্মের কাছে তখন আদর্শিক কোনো নেতা নেই, কোনো দল নেই। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের যে আওয়ামী লীগ ব্যতীত আর কোনো রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করেনি। ’৭১ এ করেনি, তারপরেও করেনি।

সেই ধারা এখনও চলছে। বঙ্গবন্ধুর শূন্যতায় যে হাহাকার শুরু হয়েছিল সেটি মিটতে শুরু করলো নবরূপে ফিরে আসা শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে। তিনি দেখালেন, কতটা দৃঢ়তা থাকলে একজন মানুষ আওয়ামী লীগের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের হয়ে গেলেন। কিন্তু ব্যক্তির অস্বিত্বের পেছনে একটি দলীয় ভিত্তি লাগে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক চর্চা এখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েনি। দলীয় রাজনীতির প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ তৈরি হয়নি।

সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই আমরা সাধারণ জনগণ যাদের এখন আর কোনো দলীয় পরিচয় নেই, আমরা চাই আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকুক, বেড়ে উঠুক তাদের নিজ পরিচয়ে। আত্মপরিচয়কে বিলীন করে নয়। স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া দলটির কাছে আমাদের তাই প্রত্যাশা অনেক। বিএনপি নিজেদের বিলীন করে দিয়েছে জামায়াতের মতো একটি স্বাধীনতাবিরোধী দলের কাছে। ’৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে জামায়াতের মতো দলগুলো সদা সক্রিয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে আজ দশ বছরেরও বেশি। উন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে গেলে এই আওয়ামী লীগকেই থাকতে হবে। কিন্তু দেশি বিদেশি বিভিন্ন এন্টি বাংলাদেশি শক্তির কাছে এটাই একটা বড় বাধা। তারা কিছুতেই চায়না আওয়ামী লীগ টিকে থাকুক।

এই দলটিকে কলংকিত করতে পারলেই বাংলাদেশের ভিত নড়ে যাবে। আবার তারা ফিরতে পারবে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে। অথচ আওয়ামী লীগ কি সেটা বুঝতে পারছে? “আওয়ামী লীগ হারলে হেরে যায় বাংলাদেশ” এ কথাটি কেবল কথার কথা নয়। এখন এটাই অবিকল্প। আওয়ামী লীগকে নিয়ে চলছে নানাকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র। মৌলবাদকে রুখে দিতে বা প্রশ্রয় দিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প কেবল তারা নিজেরাই।

আওয়ামী লীগের মূল শক্তি ছিল তৃণমূল। অথচ সেই জায়গাটি এখন প্রায় ভঙুর। মাটি থেকে উপড়ে ফেলার কাজটি করছে সবাই মিলেই। এখন ১৬ কোটির সবাই আওয়ামী লীগ। দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ কোথাও আছে বলে মনে হচ্ছে না। দলের পুরনো ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হতে হতে হতাশা ও ক্ষোভে এখন হয় নিষ্ক্রিয় নয় দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এর প্রমাণ।

যে চর্চা দেখা যাচ্ছে এটি কেবল দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ক্ষতি নয়, এটি পুরো বাংলার রাজনীতির জন্য ক্ষতি। আগামীর বাংলাদেশের জন্য হুমকি। সর্বশেষ আশার আলো এখন কেবল আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করেই। আওয়ামী লীগকে এখন অহংকারের জায়গা থেকে নেমে বাস্তবতায় সচল হতে হবে। অবিকল্প বাংলাদেশের অবিকল্প কাণ্ডারি দলটি যেন সব প্রকার ষড়যন্ত্র কাটিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরে আগাতে পারে সেই কামনাই রইলো। লেখক : অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।

সাননিউজ/এমআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা