মুজিব রহমান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্বস্ত করে বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণ অবশ্যম্ভাবী নয়৷ তারা দুইদশকে তিন লাখ আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছেন। বাইডেনের এই বক্তব্যের পরও নিশ্চিত করে বলা যায় না, তালেবানদের রুখে দেয়া সম্ভব হবে৷ তবে আফগানিস্তানের শিক্ষিত নারীরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, তালেবানরা ক্ষমতা দখল করলে সবচেয়ে বিপদে পড়বেন তারাই৷
নারীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হবে, চাকরি ও ব্যবসা করে উপার্জন করা বন্ধ হবে, এমনকি বাইরে বের হওয়াই অসম্ভব হয়ে যাবে৷ তখন নারীরা কেবল পুরুষের সেবাদাসী হিসেবেই থাকবেন৷ তারা স্বামী বা প্রভুর যৌন সুখ দেয়া, বাচ্চা জন্ম দেয়া ও গৃহকর্ম করতে পারবে৷ মানুষের মর্যাদা ভূলণ্ঠিত হবে৷ বহু নারীই দাসীতে পরিণত হবে৷ অনেকেই গণিমতের মাল হিসেবে ভাগবাটোয়ারা হবেন৷
এমন আশঙ্কা থেকেই অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন উত্তর ও মধ্য আফগানিস্তানের নারীরা। তালেবানের উত্থানের বিরোধিতায় শত শত নারী রাস্তায় নেমে মিছিল করছেন। এমন একটি মিছিল হয়েছে মধ্যাঞ্চলীয় ঘোর প্রদেশে। সেখানে শত শত নারী রাস্তায় নেমে এসে অস্ত্র উঁচিয়ে তালেবানবিরোধী স্লোগান দেন। ঘোর প্রদেশের রাজধানী দখলের চেষ্টায় আছে তালেবানরা৷
আফগান নারীরা যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে তেমন আশা করা কঠিন৷ তারা মূলত রক্ষণশীলই৷ শুধু তালেবানদের কট্টরপন্থা থেকে মুক্তি চান৷ তারা পৃথিবীর মানুষকে দেখাতে চান, তারা তালেবান শাসন চায় না৷ বিপদজনক তালেবান শাসনকে তারা ঘৃণা করেন৷ আফগান সেনাদেরও তারা উৎসাহ দিতে চান যে, আমরা তোমাদের বিজয় দেখতে চাই৷
আঞ্চলিক রাজনীতিই তালেবানদের শক্তিশালী করেছে৷ বর্তমান আফগান সরকার মার্কিনসহ ন্যাটো ও ভারত সমর্থিত৷ ভারতের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে সেখানে৷ কাশ্মির ইস্যুতেও তারা চায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকুক৷ কিন্তু চীন ও পাকিস্তান খুব ভালোভাবেই চায় তালেবান ক্ষমতায় আসুক, তারা ভারতবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক৷ কাশ্মিরের স্বাধিনতাকামীদের সাপোর্ট দিক৷
এতে চীন ও পাকিস্তানের সুবিধা হয়৷ কিন্তু তালেবানতো নিয়ে আসবে উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ৷ তারাতো উইঘর মুসলিমদেরও সমর্থন দিতে চাইবে, পাকিস্তানের জঙ্গিদের মদদ দেবে৷ তখন কি হবে? জঙ্গিদের নিয়ে খেলা আর আগুন নিয়ে খেলা একই৷ এই তালেবানরা মার্কিনীদের সাপোর্টেই ফুলেফেঁপে উঠেছিলো। টুইন টাওয়ারে হামলার পরই যুক্তরাষ্ট্র বুঝেছিলো জঙ্গিরা কারো বন্ধু নয়৷
তালেবান শুধু আফগানিস্তানই নয়, এশিয়ার জন্যই অভিশাপ নিয়ে আসবে৷ বাংলাদেশেও মূর্খ মৌলবাদী জঙ্গিরা উজ্জিবিত হবে৷ তাদের হিংস্র থাবায় সবচেয়ে বিপদে পড়বে আফগান নারী।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন, শ্রীনগর শাখা