আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভোট জালিয়াতির অভিযোগের জের ধরে পাকিস্তানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
আরও পড়ুন: ইরানে একই পরিবারের ১২ জনকে হত্যা
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভোট জালিয়াতিতে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে মিডিয়ার সামনে এনে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে পদত্যাগ করেছেন রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলি চাতা।
এতে পাকিস্তানজুড়ে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। এর জেরে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও তার সহযোগীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় নিহত ২৯ হাজার ছুঁই ছুঁই
এছাড়া এ অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তবে এ ঘটনায় রাওয়ালপিন্ডির এই কমিশনারের মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)।
পিএমএল-এন নেতা রানা সানাউল্লাহ বলেন, রাওয়ালপিন্ডির কমিশনারকে একজন সাইকো বলে মনে হয়েছে। সে কারণেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে পিটিআইয়ের মুখপাত্র দাবি করেন, ভোট জালিয়াতি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার যে কথা ফাঁস করেছেন, তাতে সিইসি সিকান্দার সুলতান রাজা ও প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার পদত্যাগ করা উচিত।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার ৩ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
লিয়াকত আলী চাতার এ বক্তব্য পিটিআইয়ের অবস্থানকেই সমর্থন করছে যে, কীভাবে রাতের অন্ধকারে জনসাধারণের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে। একই সাথে তার এ বক্তব্য নির্বাচনী কারচুপির সাথে জড়িত অন্যদের আসল চরিত্রও প্রকাশ করে দিয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার স্বীকার করেছেন, ৭০ হাজার ভোটেরও বেশি ভোটে এগিয়ে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়কে জালিয়াতি করে পরাজয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
জোর দিয়ে পিটিআই মুখপাত্র আরও বলেন, লিয়াকত আলীর এ সাক্ষ্য পিটিআইয়ের অবস্থানকে সমর্থন করে। তার কথাতেই বোঝা যায়, লোকেরা পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়েছে। রাতের আঁধারে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে জয়ী পিটিআই প্রার্থীদের হারিয়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্যারোলে মুক্তি পেলেন থাকসিন
নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের উচিত পিটিআইয়ের কাছ থেকে চুরি করে নেয়া ৮৬ টি আসন অবিলম্বে ফেরত দেয়া। সেই সাথে জনগণের ম্যান্ডেট চুরির সাথে জড়িত সকলের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে পিএমএল-এন নির্বাচনী জালিয়াতির এ অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছে। দলটির তথ্য সচিব মরিয়ম আওরঙ্গজেব কমিশনার চাতার ব্যবহৃত সমস্ত যোগাযোগ চ্যানেলের গভীর তদন্তের আহ্বান জানান। পাশাপাশি তার নাম বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ তালিকায় (ইসিএল) রাখার দাবি জানান।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই কমিশনার কোনো আরও বা ডিআরও ছিলেন না, যারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নির্বাচনের কাজ সম্পাদন বা বাস্তবায়নে কমিশনারের কোনো সাংবিধানিক দায়িত্ব বা কর্তৃত্ব নেই।
আরও পড়ুন: নতুন রকেট উৎক্ষেপণ করল জাপান
উল্লেখ্য, শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা ওই শহরে ভোট জালিয়াতির সাথে নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং নিজের ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলী বলেন, রাওয়ালপিন্ডিতে ১৩ জন প্রার্থীকে জোর করে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, এমন প্রার্থীকেও ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী ঘোষণা করেছি আমরা।
আমি রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনে অবিচার করেছি। এখানে আমি ভোট জালিয়াতির দায়-দায়িত্ব মেনে নিচ্ছি এবং নিজেকে পুলিশে সোপর্দ করছি। আমি যা করেছি, সে জন্য আমার শাস্তি হোক। আমার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসিপির জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তারও শাস্তি হওয়া উচিত।
সান নিউজ/এনজে