আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পূর্ব ভারতের শিল্পশহর জামশেদপুরে হিন্দুদের রামনবমী উৎসবের পতাকা ছেঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের জেরে দাঙ্গা পুলিশ নামানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : বিয়েতে গুলি ছুড়ে বিপদে নববধূ
ঝাড়খন্ড রাজ্যের ওই শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে ।
এদিকে পাশের রাজ্য বিহারে সাংবাদিক ও পুলিশ বৈঠক করে ঘোষণা করেছে, রামনবমীর সময় সেখানে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পনা আলোকে করা হয়েছিল।
দেশটির উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের নালন্দা জেলার প্রধানকে তারা এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আরও পড়ুন : গাটছড়া বাঁধলেন দুবাইয়ের রাজকুমারী
মূলত, রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে দাঙ্গা ও সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, ওই উৎসবের ১২ দিন পরও তা এখনো থামেনি।
পূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্য– পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খন্ডেই সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ও সহিংসতা হয়েছে। ঘটনাচক্রে এই তিনটি রাজ্যেই এখন ক্ষমতায় আছে বিজেপিবিরোধী সরকার।
তবে মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মতো যে সব রাজ্যে বিজেপি এককভাবে বা শরিকদের নিয়ে ক্ষমতায় আছে, সেখানেও নানা জায়গাতে রামনবমীর সময় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে।
আরও পড়ুন : ড্রোনের সফল পরীক্ষা চালাল ইরান
পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলছেন, অতীতে রামনবমীর অনুষ্ঠান মূলত বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ইদানীং রাজপথে শোভাযাত্রা করে রামনবমী পালনের ধূম পড়েছে, বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নানা রাজ্যে যার আয়োজন করছে।
বিশেষ করে যেখানে বিজেপি ক্ষমতায় নেই, সেখানে বিজেপি ও তাদের সমর্থক সংগঠনগুলো পায়ের তলায় শক্ত জমি পেতে সুকৌশলে রামনবমীকে ব্যবহার করছে বলেও তারা ধারণা করছেন।
ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরে যা ঘটেছে :
শনিবার (৮ এপ্রিল) থেকেই রামনবমীর সময় শহরের শাস্ত্রীনগর এলাকায় টাঙানো হিন্দুদের একটি পতাকা কেউ বা কারা ছিঁড়ে ফেলে ধর্মীয় অবমাননা করেছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে জামশেদপুরে থমথমে উত্তেজনা ছিল।
আরও পড়ুন : তাইওয়ানেকে ঘিরে রেখেছে চীন
এই ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, এই দাবিতে হিন্দুরা গতকাল (রোববার) আবার মিছিল বের করে এবং একটি থানাও ঘেরাও করা হয়।
রোববার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে, দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পাথর ছোঁড়ে এবং অনেকে আহত হয়।
বিক্ষুব্ধ জনগণ দু’টি দোকানও জ্বালিয়ে দেয়, একটি অটোরিক্সাতেও আগুন ধরানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে।
আরও পড়ুন : এবার গঙ্গার নিচে চলবে মেট্রো
সোমবার (১০ এপ্রিল) ভোররাতেই শহরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং কারফিউ জারি করা হয়।
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করে জামশেদপুরের পুলিশ প্রধান প্রভাত কুমার জানান, ‘শহরের জায়গায় জায়গায় সব জমায়েত ভেঙে দেয়া হয়েছে।
পুরো এলাকায় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, এক কোম্পানি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ) নামানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন : ৪০০ অভিবাসী নিয়ে ভাসছে নৌকা
তবে যেকোনো দাঙ্গার পর যেমনটা হয়, জামশেদপুর এখন গুজবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
পূর্ব সিংভূম জেলার ডেপুটি কমিশনার বিজয়া যাদব গুজবে কান না-দিতে সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে গত ৩০ মার্চ রামনবমীর মিছিলের পর পরই বিহার শরিফে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে একজন যুবকের মৃত্যুও হয়। ওই রাজ্যের সাসারাম ও রোহটাস জেলাতেও রামনবমীকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটে।
সোমবার বিহার পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিতেন্দ্র সিং গাঙ্গওয়ার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, বজরং দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো পরিকল্পনা করে রাজ্যে এই সব সহিংসতা ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন : আল্পস পর্বতমালায় তুষারধসে নিহত ৪
তিনি বলেন, ‘বজরং দলের নালন্দা জেলার প্রধান কুন্দন কুমার রামনবমীর ঠিক আগে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন, যাতে ৪৫৬ জন সদস্য ছিলেন।
উৎসবের সময় কিভাবে দাঙ্গা বাঁধানো হবে, ওই গ্রুপেই সেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কুন্দন কুমার ও তার একজন সহযোগী কিষেণ কুমার ছিলেন এই গ্রুপের অ্যাডমিন।’
পুলিশ তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করার পরই এই দু’জন থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গাঙ্গওয়ার জানান। অন্যান্য অভিযুক্তদের খোঁজে এখনো তল্লাশি চলছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও এর আগে বলেছিলেন, সাসারাম বা বিহার শরিফে আগে কখনো রামনবমীর সময় দাঙ্গাহাঙ্গামা হয়নি। এই ঘটনা ‘মোটেও স্বাভাবিক নয়’।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে রামনবমীর সময় এই যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা ঘটতে শুরু করেছে, তার বিশেষত্ব ও প্যাটার্ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আশুতোষ ভার্শনে ও গবেষক ভানু জোশী।
আরও পড়ুন : ভারতে গাছচাপায় নিহত ৭
প্রতিবেদনটিতে তারা বলেছেন, ভারতে হিন্দুদের দশেরা উৎসব বা শিয়া মুসলিমদের মহরমের সময় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বা উত্তেজনা প্রায়ই ঘটে থাকলেও ইদানীং রামনবমী বা হনুমান জয়ন্তীর সময় যে দাঙ্গা হতে দেখা যাচ্ছে, সেটা একটা নতুন ট্রেন্ড।
ভারতের স্বাধীনতার পর প্রথম তিন বা চার দশকে রামনবমী খুবই শান্তিপূর্ণ ও নিভৃত একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পরিচিত ছিল।
এমনকি রামনবমীতে রাস্তায় বড় মিছিল বের করারও বিশেষ রেওয়াজ ছিল না বলে ওই গবেষকরা জানাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে বিজেপি ও তাদের অনুসারী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যখন রামজন্মভূমি আন্দোলন শুরু করেন, তখন থেকেই সেটা পাল্টাতে শুরু করে।
জয় শ্রীরাম স্লোগানের মধ্যে দিয়ে ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম’ হিন্দুত্বের নতুন আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।’
আরও পড়ুন : তুরস্ককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ইরাকের
প্রসঙ্গত, রামনবমী মূলত হিন্দুদের ভগবান শ্রীরামের জন্মদিনের উৎসব। আর ওই জন্মদিন পালনের জন্য রাস্তায় বড় বড় ধর্মীয় শোভাযাত্রা ও মিছিল বের করা হতে থাকে।
বিগত কয়েক বছর ধরে সেসব মিছিলে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে বা ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি প্ররোচনামূলক স্লোগান দেয়া হচ্ছে, গান বাজানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে, যার জেরে বহু জায়গাতেই সূত্রপাত হচ্ছে অশান্তি ও সহিংসতার। সূত্র : বিবিসি
সান নিউজ/এইচএন
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            