আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিম আফ্রিকান দেশ বুরকিনা ফাসোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্বর্ণের খনিতে বিস্ফোরণে প্রায় ৬০ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মাধ্যম এ তথ্য জানায়।
অঞ্চলটির হাই কমিশনার অ্যান্টোইন দুয়াম্বা বলেন, পনি প্রদেশের ওই বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি।
বিস্ফোরণ স্থলের ছবিতে দেখা যায়, খণ্ড-বিখণ্ড গাছ ও টিনের ঘর ধ্বংস হয়েছে। মাদুর দিয়ে ঢাকা মরদেহ গুলো মাটিতে পড়ে রয়েছে।
ওই স্থানে ঠিক কী ধরনের সোনার খনির কাজ চলছিল তা পরিস্কার নয়। বুরকিনা ফাসোতে কিছু বড় সোনার খনি আন্তর্জাতিক কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত, কিন্তু শত শত ছোট, সাইটগুলিতে কোনও ধরনের তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ চলে।
দেশটির শিশুরা প্রায়ই তথাকথিত খনিগুলোতে কাজ করে; এগুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত ৬০ জনের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলির একটি বুরকিনা ফাসো। দেশটি আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা আক্রমণের মুখে রয়েছে, তারা খনিগুলোর নিয়ন্ত্রণ চায়।
এই গোষ্ঠীগুলি সাধারণত যেখান থেকে পরিচালিত হয়, সেখান থেকে কয়েকশ মাইল দূরে ছিল সোমবারের বিস্ফোরণস্থল। তবে এর সঙ্গে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো জড়িত বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সূত্র: রয়টার্স।
প্রসঙ্গত, বুর্কিনা ফাসো আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমভাগে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। দেশটি পূর্বে আপার ভোল্টা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এটি একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল।
১৯৮৫ সালে দেশটির নাম বদলে রাখা হয় বুর্কিনা ফাসো, যার অর্থ "নৈতিক জাতির দেশ"। এর উত্তরে ও পশ্চিমে মালি, পূর্বে নাইজার, এবং দক্ষিণে বেনিন, টোগো, ঘানা ও কোত দিভোয়ার। ওয়াগাদুগু দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।
বুর্কিনা ফাসো আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটি। প্রতি বছর এই দেশের হাজার হাজার লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, যেমন ঘানা বা আইভরি কোস্টে কাজ খুঁজতে বিশেষ করে মৌসুমী কৃষিকাজের জন্য পাড়ি জমায়।
বুর্কিনা ফাসো পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত খরাপ্রবণ তৃণভূমি নিয়ে গঠিত। এই স্থলবেষ্টিত দেশটির উত্তরাংশে সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণে ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য। বুর্কিনাবে জাতির লোকেরা দেশের প্রধান জনগোষ্ঠী এবং এরা মূলত দেশের ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ভাগে বাস করে। মাটির মান খারাপ এবং প্রচুর খরা হলেও এরা মূলত কৃষিকাজেই নিজেদের নিয়োজিত রাখে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীর ২৩ ভাষাসৈনিককে সম্মাননা প্রদান
বুরকিনা ফাসোর মোসসি জাতির লোকেরা বহু শতাব্দী আগে এখানে যে রাজ্য স্থাপন করেছিল, তা ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন রাজ্যগুলির একটি।
১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে বারংবার সামরিক অভ্যুথান বা কু (coup) ঘটে এবং সামরিক শাসন চলে। ১৯৯১ সালে নতুন সংবিধান পাস হবার পর দেশটিতে বর্তমানে গণতন্ত্র বিদ্যমান।
সান নিউজ/ এইচএন