আন্তর্জাতিক
তৈরি পোশাক

বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় ভিয়েতনাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পোশাকখাতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে ভিয়েতনাম। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ৩০শে জুলাই জানিয়েছে, পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ আর দ্বিতীয় নয়। এই স্থান এখন দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের। প্রথম স্থান ধরে রেখেছে চীন। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

৯ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার জনসংখ্যার এই দেশটি কীভাবে মহামারির মধ্যে বাংলাদেশকে টপকে গেলো এ নিয়েই যতো আলোচনা। ২০২০ সালে ২৯০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ভিয়েতনাম।

এসময় বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আগের বছর যা ছিল তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার। সেবছর বাংলাদেশের তুলনায় ৩০০ কোটি ডলার কম রপ্তানি করেছিল ভিয়েতনাম। রপ্তানি কম হওয়ায় বিশ্বব্যাপী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের শেয়ার ৬ দশমিক ৮ থেকে নেমে আসে ৬ দশমিক ৩-এ। মহামারির কারণে গত বছর উভয় দেশ থেকে পোশাকের চালান কম গেলেও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের শেয়ারের পতন ছিল দ্রুত।

বাংলাদেশের পোশাক মালিকরা এককভাবে লকডাউন ও নানা বিধি-নিষেধকে এর জন্য দায়ি করেন। বলেন, বিধি-নিষেধের কারণে গত বছর কারখানা ঠিকমতো চলেনি। কিন্তু ভিয়েতনামের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি কি এবিষয়ে তারা কিছু বলছেন না।

বিশেষজ্ঞরা ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকে যাওয়ার পেছনে পাঁচটি প্রধান কারণের কথা বলছেন।

১. ভিয়েতনামের পণ্য বাংলাদেশ থেকে অনেক উন্নতমানের। সস্তা পণ্য তারা কম তৈরি করে। শ্রমিকদের জন্য অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। কারখানাগুলোর পরিবেশ আধুনিক।

২. ইউরোপের বাজারে একচেটিয়া প্রবেশাধিকার। কারণ তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করেছে। বাংলাদেশ যা এখনও করতে পারেনি।

৩. ভৌগলিক অবস্থার কারণে ভিয়েতনাম চীনের কাছ থেকে বেশি সুবিধা পায়। যেমন, কারিগরি সুযোগ-সুবিধা। সর্বোপরি সস্তায় কাঁচামাল আমদানি। ভিয়েতনামে বাংলাদেশের তুলনায় চীনের বিনিয়োগ অনেক বেশি। তাই তাদের বিশেষ নজর রয়েছে ভিয়েতনামের ওপর।

৪. বাংলাদেশের মতো টি-শার্ট, সোয়েটার ও ট্রাউজার শুধু বানায় না ভিয়েতনাম। তারা বানায়, হাসপাতাল সামগ্রী, সশস্ত্র বাহিনীর পোশাক, স্কুল ইউনিফর্মসহ এমন অনেক সামগ্রী যা বাংলাদেশের পণ্য তালিকায় নেই।

৫. মহামারি ভিয়েতনামের কপাল খুলে দিয়েছে। এত সুন্দরভাবে তারা এই করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করেছে যার কারণে দেশটিতে মৃত্যু তুলনামুলকভাবে কম।

এ সম্পর্কে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা এক রিপোর্টে বলেছেন, শুরুর দিকে মহামারির প্রাদুর্ভাবের সময় অনেকেই চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। আর সেই সুযোগ নেয় ভিয়েতনাম।

বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ভিয়েতনামের এই অভূতপূর্ব সাফল্য সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। তার মতে, ভিয়েতনাম যে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবে এটা কয়েক বছর যাবতই পূর্বাভাসে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম। এটার একটা বড় কারণ হলো- পৃথিবীতে এখন প্রস্তুত পোশাকের যে একটা চাহিদা তার বড় অংশ আসছে কৃত্রিম তন্তু থেকে অর্থাৎ স্বাভাবিক তুলা ভিত্তিক না। নতুন বর্ধিত এই বাজারটায় বাংলাদেশ অনেক বেশি পিছিয়ে ছিল।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ পোশাক প্রস্তুত হয় তা অধিকাংশই তুলার সুতার ভিত্তিতে। এই কৃত্রিম তন্তুতে ভিয়েতনাম এগিয়ে ছিল। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। যার ফলে, বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে পেছনে ফেলে যাবে এটা অনেকেই ধারণা করছিলেন।

এর সাথে যেটা মনে রাখা দরকার, ভিয়েতনামের যে শ্রমিক শ্রেণি তাদের মজুরি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, আবার তাদের উৎপাদনশীলতাও বেশি। একটু যদি পেছনে যাওয়া যায় তাহলে বলতে হবে, কেন ভিয়েতনামের শ্রমিকরা বাংলাদেশের শ্রমিকদের থেকে বেশি উৎপাদনশীল? এর একটা বড় কারণ হলো- বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে সরকার যে টাকা ব্যয় করে তার থেকে অনেক বেশি টাকা ভিয়েতনাম ব্যয় করে।

উদাহরণ হিসেবে বলি, যদি বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে সরকার মাথাপিছু ৬ ডলার ব্যয় করে সেখানে ভিয়েতনাম ব্যয় করে ৬৩ ডলার। ১০ গুণ বেশি। শিক্ষাখাতে যদি আমরা মাথাপিছু ৩৪ ডলার ব্যয় করি ভিয়েতনাম ব্যয় করে ১৩৪ ডলার। এ কারণে সে দেশের শ্রমিকরা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্পন্ন এবং উৎপাদনশীল।

কোভিডে ভিয়েতনাম জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যে তৎপরতা দেখিয়েছে তা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।

সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি তা হলো, এই সময়কালে এবং পূর্বে তারা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে, কর ব্যবস্থাকে অনেক বেশি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে, বিদেশি বিনিয়োগ অনুকূল করার ক্ষেত্রে এবং প্রাতিষ্ঠানিক যে বিভিন্ন দক্ষতা আছে তা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে প্রভূত সফলতা দেখিয়েছে।

এই সবগুলো ক্ষেত্রেই কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। সাধারণভাবে যদি বলা হয়, ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ব্যয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে। আমাদের অন্যান্য সংস্কার করতে হবে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, একই সাথে আমাদের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং নতুন পণ্য সৃষ্টি এগুলোই কিন্তু বিবেচনায় আসবে।

বাংলাদেশের আগের অবস্থান ফিরে পাওয়া সম্ভাবনা কতটুকু এ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা জুলাই মাসের তথ্য সবেমাত্র পেয়েছি। যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানির নতুন করে পতন ঘটেছে এই একবছর সময়কালে৷ বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সমস্ত বাধা কাটিয়ে উঠেছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এখানে এক ধরণের অস্থিরতা এখনো বিরাজ করছে। ভিয়েতনামের আরেকটি সুবিধা, তারা ইউরোপের বাজারের সাথে মুক্ত বাণিজ্য অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করেছে।

যার ফলে আগে যে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধাটা ছিল এখন তুলনামূলকভাবে তা শেষ হয়ে গেছে। কারণ, ভিয়েতনামও শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করেছে। মার্কিন বাজারে পণ্য সুবিধা এবং ইউরোপের বাজারে যেখানে পণ্য সুবিধা, দু'ক্ষেত্রেই কিন্তু বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনাম এগিয়ে আছে। এটা আগামীতেও থাকবে।

এটা একদিনের ব্যাপার না, কাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপার।ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি কেন হচ্ছে না এ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, যেকোনো দেশের সাথে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল তৈরি করতে দুই পক্ষেরই সমর্থন লাগে। বাংলাদেশ আগ্রহ দেখালেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে এখনো ঐ পরিমাণ মনোযোগ বা বিনিয়োগের সুবিধার চোখে দেখছে না। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হলে বিষয়টি আরেকটু জোরদার হবে।

ঢাকাস্থ রয়টার্সের সাবেক ব্যুরো চিফ সিরাজুল ইসলাম কাদির অনেকদিন অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। তার মতে, কোয়ালিটির কাছে বাংলাদেশ হেরে যাচ্ছে। সস্তা বাজার আর সস্তা শ্রমিক দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এই সময়ে খুব কঠিন। পণ্য বৈচিত্র্য, গবেষণা ও নতুন নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ভিয়েতনাম সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। কারখানাগুলোকে যদি মানসম্মত করা না যায় সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ১১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন

মফস্বল ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হ...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

বিপ্লবী হাদির জানাজা সম্পন্ন

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় সম্...

কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে বিপ্লবী হাদির দাফন সম্পন্ন

ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি প্রাঙ্গণে।...

ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি

দক্ষিনের জেলা ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হ...

আলফাডাঙ্গা কলেজে পরীক্ষা চলাকালে অস্ত্র হাতে মহড়া, গ্রেপ্তার যুবক

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে স্নাতক সম্মান (ডিগ্রি) পরীক্ষা চলাকালে দেশীয়...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

চাকসুর উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক–চবি’র কর্পোরেট চুক্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি কর্পোরেট...

সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সন্তান সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগঠন ‘ইনকিলাব ম...

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক ব্যবসায়ীকে জরিমান...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা