আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের প্রত্যক্ষ মদতে ইয়েমেনের হুথিরা সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশের একটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মাত্র দুই দিন আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আবহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলার পর এ হামলা চালায়।

হুথিরা জানান, তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁতভাবে সৌদি আরবের কিং খালিদ বিমানঘাঁটিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তারা আরও বলেন, সৌদি আরব যতক্ষণ পর্যন্ত আগ্রাসন বন্ধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইয়েমেনিদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চলতে থাকবে।

গত ২৬ জানুয়ারি হঠাৎ ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ। এ বিস্ফোরণের ফলে সেখানকার স্থানীয়দের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। কোনও কোনও বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন। হুথি বিদ্রোহীরা এসব হামলা চালান বলে দাবি রিয়াদের।

একের পর এক হামলা হচ্ছেই সৌদি আরবে। গত নভেম্বরে অন্তত তিনটি হামলা হয়েছে। জিজানে সৌদির রেড সি বন্দরের তেল স্থাপনাগুলোতে হুথিদের হামলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেদ্দার তেল সরবরাহ ফ্যাসিলিটিতে মিসাইল হামলা হয়েছে। এর পরপরই শুকাইক বন্দরে তেল সরবরাহকারী একটি ট্যাঙ্কারে আঘাত হানে হুথিদের মাইন।

হুথিরা যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন, তার বেশ দূরে অবস্থিত আরব সাগরের এসব বন্দর। সেখানে হামলার মাধ্যমে তারা জানিয়ে দিয়েছেন, আরব উপত্যকার যে কোনও জায়গায় হামলা করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে আবকাইক এবং খুরাইসে আরামকো তেল অবকাঠামোতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বড়সড় হামলা চালিয়েছিলেন হুথিরা। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদিত হয়। সাম্প্রতিক হামলাগুলোর মাধ্যমে তারা হয়তো সতর্ক করেছেন যে, ইরানের স্বার্থে আঘাত এলে এ ধরনের হামলা আরও হতে পারে।

আরব বসন্তের প্রেক্ষাপট এবং ২০১৪ সালে হুথিরা সানায় কর্তৃত্ব গ্রহণের পর ইয়েমেনে ইরানের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়। এতে উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর সার্বিকভাবে তাদের প্রভাব আরও বাড়ে। দ্বিতীয়ত, গত দশকের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। এতে যুক্তরাষ্ট্র কেবল অন্যতম প্রধান তেল রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়নি, বিশ্ববাজারে তেলের স্থিতিশীল সরবরাহও নিশ্চিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অঞ্চল নিয়ে তাদের হস্তক্ষেপও কমেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উপসাগরের ওপর নির্ভরতা কমে যাওয়ায় ইরানি হামলাগুলোর পর শক্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি ও আরব আমিরাতের সহায়তা কামনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাসংখ্যা বাড়ানো এবং সৌদি আরবে নতুন অস্ত্রের ব্যবস্থা করা হলেও দেশটির তেল অবকাঠামো নিরাপদ হবে, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

এরপর তেল উৎপাদন এবং নিজেদের রক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে উপসাগরীয় দেশগুলো নিজেদের একাই ভাবতে শুরু করে। এক সময় তেল উৎপাদন কমানোর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবকে হুমকি দেন। এ হুমকিতে তাদেরকে মার্কিন তেল উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে তেল উৎপাদন কমাতে হয়েছিল।

উপসাগরের তেল রক্ষায় সামরিক সম্পদ ব্যয়ে ওয়াশিংটনের অনাগ্রহের ফলে অনেকটা ছাড়পত্র পেয়ে গেছে তেহরান। তারা তেলের খনিতে হামলা করছেন, এ হামলা বাড়ছেও। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কিছুই করছে না।

নিজ দেশে তেল বিপ্লবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের তৃষ্ণা মিটে গেছে। করোনা মহামারিতে উপসাগরীয় রাজকোষের আয়ও কমেছে। এ প্রেক্ষাপটে, তেল উৎপাদনে ব্যাঘাত এলে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য বেশ দুঃখজনক হবে।

অন্যদিকে, তেহরান তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত জুনে ইরান সরকার ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গৌরেহ-জাস্ক পাইপলাইনের’ নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এ পাইপলাইনের কারণে হরমুজ প্রণালী এড়াতে পারবে দেশটি। দেশটির অবস্থান এতই শক্ত যে, মার্কিন অবরোধের পরও তাদেরকে তেলের বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি।

এরই মধ্যে, তেহরানের শক্তি পেয়ে হুথিরা লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুট এবং তেলক্ষেত্রগুলোতে হামলা করে সক্ষমতা দেখিয়েছে। তার মানে, তেল অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন সাধন করলেও সৌদি আরব ও তার ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলো হরমুজ প্রণালীর ওপর আর হয়তো নির্ভর করতে পারবে না। এখন তাদের তেল রফতানি আর নিরাপদ নয়।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, মার্কিন তেল বিপ্লবই পরোক্ষভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের হাতকে মজবুত করেছে। এখানকার তেলের প্রতি নির্ভরশীলতা কমায় ইরানের বিরুদ্ধে নতুন জোট করেও তেমন ফল আসছে না। এখন আরব রাজতন্ত্রের ওপর ছড়ি ঘোরাতে তেহরান শতভাগ সক্ষম।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা