আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিঙ্গাপুর আধুনিক স্থাপত্যশৈলির উঁচু ভবনের দেশ হিসেবে সকলের জানা। দেশটিকে কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে ভাবাই যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে সিঙ্গাপুরের মানুষ চাষাবাদের উপযোগী কৃষি জমির জন্য অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না।
সিঙ্গাপুর সরকারও পারলে আধুনিক হাইটেক নগররাষ্ট্রকে কৃষি জমি ও বাগানে পরিণত করতে চায়। নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন কৌশল, যার সুফল হাতে নাতে পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর নিজস্ব চাহিদা মেটাতে মাত্র ১০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন করে।
এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে ডয়চে ভেলে জানায়, সিঙ্গাপুরের এক বহুতল ভবনের ৩২ তলায় উঠলে দেশটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। মায়া হরি সেখানে তরমুজ ও ফুলকপির বীজ লাগাচ্ছেন। তিনি ছাদের বাগানে মরিচ, বেগুন ও কলা চাষ করছেন।
তিনি বলেন,‘‘এখানে ঋতু না থাকলেও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফলমূল ও শাকসবজি ফলানোর চেষ্টা করা যায়। তবে সিঙ্গাপুরের বেশির ভাগ মানুষ ফ্ল্যাটে থাকে। সেখানে চাষবাস করা কঠিন। ফলে কাজটা বেশ সহজ নয়।”
সরকার শুধু ভিডিও তৈরি করে বাসায় শাকসবজি ফলানোর কাজে উৎসাহ দিচ্ছে না। বীজসহ নানা মালমসলা দিয়ে প্রায় দেড় লাখ স্টার্টার কিট মায়ার মতো মানুষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। নাগরিকদের এক সার্বিক পরিকল্পনার অংশ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এখনো পর্যন্ত সিঙ্গাপুর নিজস্ব চাহিদা মেটাতে মাত্র ১০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন করে। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার সেই মাত্রা ৩০ শতাংশে আনতে চায়। বর্তমানে আরও বেশি স্বনির্ভরতা যে সঠিক কৌশল, তা করোনা মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের মানুষ খাদ্যের স্থানীয় উপকরণের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখানোর ফলে সুবিধা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন সংস্থার চাকরি ছেড়ে বিয়র্ন লো জনপ্রিয় এক শপিং মলের ছাদে ২০১৫ সাল থেকে পেঁপে, রোজমেরি ও প্যাশন ফ্রুট চাষ করছেন। সে সময়ে মানুষ হাসাহাসি করলেও এখন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার চাহিদা বেড়ে চলেছে।
এই উদ্যোক্তা গোটা শহরজুড়ে প্রায় ২০০ এমন বাগান তৈরি করেছেন। তিনি শিপিং কনটেইনারের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাও করছেন। যেমন ক্রান্তীয় জলবায়ু এলাকায় পাতাকপি ফলানো যায় না। কিন্তু এখানে পুষ্টিকর দ্রবণ ও সূর্যের বিকল্প হিসেবে এলইডি আলোর কল্যাণে বেশ কয়েকটি স্তরে দিব্যি এই সবজি ফলানো হচ্ছে।
এমন ইতিবাচক প্রবণতার ফলে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্ভব হতে পারে। সেখানে অনেক কম ব্যয় করে খাদ্য উৎপাদন করা হয়। লো মনে করেন, তার ফলানো শাকসবজির মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টি রয়েছে বলে সেটা সম্ভব হচ্ছে। বলেন, ‘ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের জন্যও এটা আরও ভালো।
এখনও পর্যন্ত এই কোম্পানি পথের অন্য প্রান্তে একটি ভবনে বছরে ৩০০ টন মাছ উৎপাদন করছে। এবার সরকারও বিনিয়োগকারী হিসেবে সেই উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। ভবিষ্যতে কোম্পানির চৌবাচ্চায় দশগুণ বেশি ক্রান্তীয় ট্রাউট মাছ চাষ করা হবে। এ্যাপোলোর মতে, ইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গিতে টেকসই প্রক্রিয়ায় চাষ হবে।
৯০ শতাংশ পানি পুনর্ব্যবহার করা যাবে। লকডাউনের সময় বিদেশ থেকে তাজা মাছের সরবরাহে টান পড়ার কারণে এ্যাপোলো সিঙ্গাপুরের অনেক মানুষকে নতুন ক্রেতা হিসেবে পেয়েছে। সিঙ্গাপুরের বাগান-পাগল মানুষের কাছে প্রায় সব ফলমূল ও শাকসবজিই আকর্ষণীয়। হাইটেক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও মানুষ চাষবাদের ক্ষেত্রে নতুন সাফল্য আবিষ্কার করছে।
সান নিউজ/এসএ
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            