আন্তর্জাতিক

গ্রীষ্মকালীন বউ, এটাও কি সম্ভব!

সান নিউজ ডেস্ক : বিয়ের ক্ষেত্রে দেশে দেশে বিভিন্ন রীতি-প্রথা রয়েছে। তাই বলে কেবল গ্রীষ্মকালের জন্য বিয়ে করার কথা কী কখনো শুনেছেন? শুনুন আর নাই শুনুন, এই অদ্ভুদ বিয়ের চল রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিশরে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন।

তেমনটাই হয়েছে মিশরের রাজধানী কায়রোয়েতে। কায়রোর আশেপাশের এলাকায় মূলত দরিদ্র লোকেদের বাস। যাদের চার ভাগের এক ভাগ মানুষকে দিনে দুই ডলারেরও (প্রায় ১৫০ টাকা) কম খরচে চলতে হয়। সেক্স ট্যুরিজম এই চরম দারিদ্রতার জীবনে নতুন আশা সৃষ্টি করছে। পর্যটকদের কেউ কেউ তো মেয়ের কুমারিত্ব, বয়স, চেহারা এবং বিয়ের স্থায়িত্ব বিবেচনা করে এক লাখ ইউরো (প্রায় ৯৫ লাখ টাকা) পর্যন্ত খরচ করতে রাজি হয়।

অর্থের লোভ দেখিয়ে মিশরের শত শত কিশোরীকে সাময়িক বিয়ে করে থাকেন ধনী দেশগুলো থেকে আগত পর্যটকরা। দেশটিতে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ হওয়ায় নিজেদের চাহিদা মেটাতে এমন সাময়িক বিয়ে করছেন এখানে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকরা। এসব মেয়েরা দেশটিতে 'গ্রীষ্মকালীন বউ' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

এমনই বেশ কয়েকটি ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ পায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। তার মধ্যে একটি হলো ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালের একদিন। মিশরীয় কন্যা হুরাইরার বয়স তখন কেবল ১৫ বছর। দরজা খুলেই বাইরে এক পুরুষকে তার বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখল সে।

তার সামনেই হলো সব কথাবার্তা। মাত্র ১,৭৫০ ইউরো (প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা) মোহরানার বিনিময়ে সৌদি আরব থেকে আসা সেই ব্যক্তিকে তার বিয়ে করতে হবে। ওই বিয়ের বয়স ছিল মাত্র ২০ দিন।

এই বিয়ের মাধ্যমে ক্রমাগত ধর্ষণের শিকার হতে হয় হুরাইরাকে। এরপর গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ। হুরাইরাকে আবার বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে নিজ দেশে ফেরত চলে যান ওই সৌদি নাগরিক। আর কখনো সে ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়নি হুরাইরার।

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিশরে যৌনকর্মীদের আরেক নাম ‘গ্রীষ্মকালীন স্ত্রী’। তাদেরই একজন হুরাইরা। প্রতি বছরই উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে এমন ‘স্ত্রী’ বেছে নিতে মিশরে আসেন পর্যটকেরা। এর বিনিময়ে মেয়ের পরিবারকে যে অর্থ দেয়া হয় তা তাদের জন্য অনেক কিছু।

হুরাইরা বলেন, সবকিছু খুব লোভনীয় লাগছিল। আমার পরিবার আমাকে নতুন কাপড় আর উপহারের লোভ দেখায়। আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হয়ে যাই। হুরাইরার পরিবার তার বিয়ের যৌতুকের টাকায় একটি ফ্রিজ আর ওয়াশিং মেশিন কিনেছিলো।

হুরাইরার বয়স এখন ২৮। এর মধ্যে তার আরো আটবার বিয়ে হয়েছে। প্রতিবারই অল্প কিছুদিনের জন্য। নিজের অতীত নিয়ে তিনি লজ্জিত এবং নিজের আসল নামও প্রকাশ করতে চান না। বাইরে বের হলে নিজেকে সবসময় আড়াল করে রাখেন কালো নেকাবে।

তিনি বলেন, ‘আমি তখন খুব সহজ সরল ছিলাম। ভালোবাসায় বিশ্বাস করতাম। বিয়ের প্রথম রাত খুব ভয়াবহ ছিল। এরপর থেকে আমি মানসিক সমস্যায় ভুগছি।’ তবে এরপরও এই বিয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারে নি। কেননা দারিদ্রতার কারণে বারবার জোর করে বিয়ে দিয়েছেন তার বাবা।

মিশরে এমন হুরাইরা একজন নয়, বহু আছে। আর সঠিক আইন না থাকায় অপরাধীদের সাজা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো কোনো দালালকে ধরা হলো। তাকে শাস্তি দেয়া হলো ১৮ বছর। তবে কদাচিৎ দুই একজনকে শাস্তি দিয়ে কী আর এসব অপরাধ বন্ধ করা যায়।

হুরাইরা এখন বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গেই আছেন। সত্যিকারের বিয়ের জন্য মনে মনে একজন সত্যিকার প্রেমিক পুরুষের সন্ধান করছেন হুরাইরা। তবে হুরাইরার সে আশা পূরণ হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। কেননা মিশরে গ্রীষ্মকালীন স্ত্রীদের খুবই খারাপ চোখে দেখা হয়।

মিশরের রক্ষণশীল সমাজের কোনো পুরুষই এমন মেয়েকে বিয়ের যোগ্য মনে করেন না। তাই ফের হয়তো কোনো বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে আরেকবার গ্রীষ্মকালীন বিয়েতে রাজি হতে হবে হুরাইরাকে। সূত্র : ডেইলি হান্ট।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ইউক্রেনে এক রাতে ৬০০’র বেশি ড্রোন-মিসাইল হামলা চালাল রাশিয়া

রাশিয়া এক রাতে ইউক্রেনের দিকে ৫৭৪টি ড্রোন ও ৪০টি মিসাইল ছুড়েছে—যা সাম্প...

‘১% মিডিলম্যান, ৫% মিনিস্ট্রির’

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সেক্রেটারির বিরুদ...

ভাত না জোটার দেশে হাঁসের মাংসবিলাস শোভনীয় নয়: আলাল

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, দুই...

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিলের রায় ৪ সেপ্টেম্বর

আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা মামলার সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে...

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ অনুমোদন

‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নীতিগত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা