আন্তর্জাতিক
পার্সটুডের প্রতিবেদন

‘বিশ্বনবীর (সা.) অবমাননার প্রতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ন্যক্কারজনক’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) ইরানি জনগণের পাশাপাশি গোটা মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এতে তিনি আবারো ফ্রান্সে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন পুনঃপ্রকাশ এবং এর প্রতি দেশটির সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, একজন কার্টুনিস্ট যখন এ ধরনের অবমাননাকর কাজ করে কিংবা একটি পত্রিকা যখন তা প্রকাশ করে তখন বিষয়টি একরকম থাকে আর যখন সেই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এই কুকর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় তখন সেটি অনেক বেশি জঘন্য চরিত্র ধারণ করে। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ন্যক্কারজনক অপকর্মকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তবে আশার কথা মুসলিম বিশ্ব নীরব থাকেনি। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের সর্বত্র মুসলমানরা তাদের ঈমানি শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তারা তাদের প্রাণপ্রিয় নবীর অবমাননার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী বলেন, ফ্রান্স দাবি করে, মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার কারণে তারা এ কাজ করছে। অথচ এই ফ্রান্স উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। ফ্রান্স ইরানের সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে সব রকম সহযোগিতা করেছে এবং এই গোষ্ঠী আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিসহ ১৭ হাজার ইরানিকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, এই ফ্রান্স বন্য জন্তুতুল্য ও রক্তপিপাসু (ইরাকের সাবেক শাসক) সাদ্দামকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। প্যারিস প্রকাশ্যে এই সহযোগিতা দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে। সেই নির্লজ্জ ফ্রান্স এখন বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ায়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিশ্বনবীর (সা.) অবমাননা বারবার করা হয়েছে। কিন্তু এসবের মাধ্যমে তারা মহানবীর মর্যাদার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারেনি। যেভাবে মক্কা ও তায়েফের কাফেররা একদিন তাদের অপতৎপরতার মাধ্যমে বিশ্বনবী কিংবা ইসলামের ক্ষতি করতে পারেনি বর্তমানেও পশ্চিমা বিশ্ব এই মহান নবী (সা.) বা ইসলামের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী বলেন, এখান থেকে পশ্চিমাদের কথিত সভ্যতার কদার্য দিকটি ফুটে উঠেছে। তাদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি থাকায় তাদের এই পাশবিক ও বর্বর চেহারা ঢেকে রাখলেও মাঝেমধ্য তাদের প্রকৃত চেহারা বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। কয়েক শতাব্দি ধরে তারা এই কথিত সভ্যতার দাবি করে আসলেও তাদের অসভ্যতা ও বর্বরতা বিশ্ববাসীর কাছে দিনদিন স্পষ্ট হয়ে পড়ছে।

ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ

আয়াতুল্লাহ খামেনী তার ঈদে মিলাদুন্নবীর ভাষণে আরো বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) বর্তমানে ইমামের আহবান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। ইমাম যখন এই ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেদিন মুসলিম বিশ্বের বহু নেতা এই আহ্বানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেননি। আবার অনেকে উপলব্ধি করেও শুধুমাত্র বিদ্বেষের কারণে তাতে সাড়া দেননি।

কিন্তু আজ মুসলিম বিশ্বে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে উপলব্ধি করা যায়, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য কতটা জরুরি ছিল। আজ ফিলিস্তিন সংকটকে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। ফিলিস্তিন মুসলিম বিশ্বের প্রধান সংকট হলেও সেটি থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব অপচেষ্টায় কোনো কাজ হবে না। ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবেই।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, যে ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনি জাতির ভূমি দখল ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে সেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং সম্পর্ক স্থাপন করে তৃপ্তির হাসি হাসা চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এর চেয়ে অপমান আর হতে পারে না।

তিনি বলেন, ইমামের আহবানের গুরুত্ব মুসলমানরা উপলব্ধি না করলেও ইসলামের শত্রুরা বুঝতে পেরেছে। এ কারণে তারা ইসলামের বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে যাতে ঐক্য প্রতিষ্ঠা না হয় সেজন্য থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে বিভেদ সৃষ্টির সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। কীভাবে মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য আরো বেশি উসকে দেয়া যায় তারা সারাক্ষণ সে চেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব এই বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টার অংশ হিসেবে দায়েশ (আইএস) সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু এই দায়েশকে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব আরব দেশ অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন দিয়েছে তাদের অপরাধ অনেক বেশি। যেসব সন্ত্রাসী মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছে তাদের চেয়ে যারা তাদেরকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তাদের অপরাধ বহুগুণ বেশি।

কাশ্মির থেকে লিবিয়া পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের যত সংকট আছে তার সব সংকটের সমাধান মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভব বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মন্তব্য করেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ভাষণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন আয়াতুল্লাহ খামেনী। মার্কিন গণতন্ত্রকে যারা মডেল হিসেবে তুলে ধরে তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন তিনি বলছেন, আমেরিকার ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি কারচুপির ফাঁদ আর কখনো তৈরি করা হয়নি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হবে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।

আর নির্বাচনের অপর প্রার্থী বলছেন, ট্রাম্প বড় ধরনের কারচুপির চেষ্টা করছেন। এই হচ্ছে, মার্কিন গণতন্ত্রের উদাহরণ। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, যে ব্যক্তিই নির্বাচিত হোক না কেন তাতে আমেরিকা পতন ঠেকানো সম্ভব হবে না। আজ না হোক কাল আমেরিকার পতন হবেই।

ইরানের সঙ্গে আমেরিকার শত্রুতা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তার দেশের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার শত্রুতা থেমে নেই। আমেরিকার কোনো সরকার আমাদেরকে সহযোগিতা করবে না। আমাদেরকে অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী হতে হবে। আমেরিকাকে হতাশ করে দিতে হবে। ইরানের জনগণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তিনি ইরানি জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ

ভাষণের শেষাংশে তিনি নাগরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এর অবসান দরকার। আজারবাইজানের যেসব ভূখণ্ড আর্মেনিয়া দখল করে নিয়েছে তা ছেড়ে দিতে হবে। এটি আজারবাইজানের অধিকার। সেইসঙ্গে এই ভূখণ্ডে যেসব আর্মেনীয় জনগোষ্ঠী বসবাস করেন তাদের অধিকারও সমুন্নত রাখতে হবে। এ ছাড়া, এই যুদ্ধের সুযোগে কেউ যদি ইরান সীমান্তে সন্ত্রাসীদের জড়ো করার চেষ্টা করে তাহলে সেসব সন্ত্রাসীকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

ইরানে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪২ হিজরিতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এবং শিয়া মুসলমানদের ষষ্ঠ ইমাম- ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। সুন্নি মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়ালকে ঈদের মিলাদুন্নবী (সা.) বা বিশ্বনবীর জন্মদিবস হিসেবে পালন করেন।

রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্মদিবস নিয়ে এই মতপার্থক্য যাতে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ তৈরি করতে না পারে সেজন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত সময়কে ঐক্য সপ্তাহ পালন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত চার দশক ধরে ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঐক্য সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে।

সান নিউজ/এম/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা