কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর): যে বয়সে একটা শিশুর খেলাধুলা আর লেখাপড়া করার কথা, সে বয়সে নিজের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব নিজেরই কাঁধে। হাসি উচ্ছ্বলতায় মেতে থাকার পরিবর্তে নিজের দুবেলা দুমুঠো খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা।
সমাজের আর দশটা শিশুর শৈশবের সীমাহীন বায়না মেটানোর ভার যখন বাবা-মায়ের উপর, তখন নিজের খাবার সংগ্রহের জন্য সকাল-সন্ধ্যা হাড়ভাঙা পরিশ্রম। এ নিষ্ঠুর নিয়তি মেনে নিয়েছে বারো বছর বয়সী অনাথ, নিরাশ্রয় হাসিবুল। সে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। বাবা যে কবে মারা গেছেন তাও ঠিক মনে নেই। হাসিবুল শুধু জানে যে সে কোলে থাকতে বাবা বাবা মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: শামীম ওসমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে হাসিবুলের সাথে দেখা হয় বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে। লাঠির সাথে লাল-সাদা রংয়ের হাওয়াই মিঠে লাগিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরছে। লক্ষ্য তার চেয়েও ছোট কিংবা তার মতো ছোট শিশুদের কাছে হাওয়াই মিঠে বিক্রি করা।
হাসিবুল জানায়, উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা গ্রামে সে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর তাকে ফরিদপুর মুসলিম মিশনের এতিমখানায় রেখে এসে মা আবার বিয়ে করে। কিন্তু এতিমখানায় তার মন না টেকায় সেখান থেকে কিছুদিন পরে গ্রামে চলে আসে। ছোটবেলা বাবাকে হারিয়ে মাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেছে ইতোমধ্যে মায়ের অন্যত্র বিয়েতে। উপায়ন্তর না থাকায় শেষ পর্যন্ত হাসিবুল বেছে নেয় বেঁচে থাকার তাগিদে নির্মম বাস্তবতার পথ। একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ময়না ইউনিয়নের হাটখোলারচর গ্রামের আব্দুল গফফার শেখ হাওয়াই মিঠের কারিগর।
আরও পড়ুন: ৩২ বছর পর ইলিয়াস কাঞ্চনের কাঁধে শিল্পী সমিতি
হাসিবুল স্বজনদের হাত ধরে গফফার শেখের বাড়িতে আসে জীবিকার খোঁজে। এরপর থেকে গফফার শেখ হাওয়াই মিঠে তৈরি করে আর হাসিব উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে।
হাসিবুল আরো জানায়, মালিক গফফার শেখ তাকে খাওয়া দাওয়া, থাকা বাদে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা দেন। হাসিব প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকার হাওয়াই মিঠে সে বিক্রি করে।
বারো বছর বয়সী অনাথ, নিরাশ্রয় হাসিবুল জানে না তার অনাগত ভবিষ্যতের কথা। জানতেও চায় না।
সান নিউজ/এমকেএইচ