হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আহত বন্দিদের
অপরাধ

‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়, হাত-পা-মুখ বেঁধে পেটায়’

নিজস্ব প্রতিনিধি:

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত এবং ১৪ জনের মতো আহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, কিশোরদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে আহত কিশোররা বলছে, গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও মারপিটের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং অন্য বন্দিরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত তাদের হাত-পা-মুখ বেঁধে দফায় দফায় মারধর করেছে। অচেতন অবস্থায় তাদের ফেলে রাখা হয়। সে কারণে বিনা চিকিৎসায় তাদের তিনজন মারা যায়। এক কর্মকর্তা কিশোরদের ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখান বলেও অভিযোগ করেছে তারা।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, তদন্ত ছাড়া এই ঘটনার বিষয়ে কোনও বক্তব্য দিতে চান না। তবে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘ঘটনাটি একপাক্ষিক। মৃত্যুপথযাত্রী কেউই মিথ্যা কথা বলে না। আমরা তাদের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে বিষয়টি দেখভাল করছি। এ ঘটনায় মামলা হবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বা তাদের স্বজন অথবা তৃতীয় পক্ষ কাউকে না পাওয়া গেলে পুলিশ বাদী হবে।’

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দি চুয়াডাঙ্গার পাভেল বলে, ‘গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড (আনসার সদস্য) নূর ইসলাম তার চুল কেটে দিতে বলেন। সেদিন কেন্দ্রের প্রায় দুইশ’ জনের চুল কেটে দেওয়ায় আমার হাত ব্যথা ছিল। সেকারণে তার চুল পরে কেটে দেওয়া হবে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে কয়েক কিশোর তাকে মারধর করে। বিষয়টি তিনি অফিসে জানান। নূর ইসলাম অভিযোগ করেন, কিশোররা মাদক সেবন করে তাকে মারধর করেছে। কিন্তু কিশোররা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে তারা মাদক সেবন করেনি।’

পাভেল আরও জানায়, ‘ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আমাদের অফিসে ডাকা হয় এবং এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমরা ঘটনার আদ্যোপান্ত জানানোর এক পর্যায়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, প্রবেশন অফিসার মুশফিকসহ অন্যান্য স্যাররা মারপিটে অংশ নেন।’

আহত আরেক কিশোর নোয়াখালীর বন্দি জাবেদ হোসেন জানায়, ‘স্যাররা ও অন্য বন্দি কিশোররা আমাদের লোহার পাইপ, বাটাম দিয়ে কুকুরের মতো মেরেছে। তারা জানালার গ্রিলের ভেতর আমাদের হাত ঢুকিয়ে তা বেঁধে মুখের ভেতর কাপড় দিয়ে এবং পা বেঁধে মারধর করেন। অচেতন হয়ে গেলে আমাদের কাউকে রুমের ভেতর আবার কাউকে বাইরে গাছতলায় ফেলে আসেন। জ্ঞান ফিরলে ফের একই কায়দায় মারপিট করেছেন।’

যশোরের বসুন্দিয়া এলাকার বন্দি ঈষান জানায়, ‘নিহত রাসেল আর আমি একই রুমে থাকতাম। আগামী মাসেই তার জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। স্যারদের বেদম মারপিট আর চিকিৎসা না পেয়ে সে মারা গেছে।’

সে অভিযোগ করে, ‘প্রবেশন অফিসার মারধরের সময় বলেন, তোদের বেশি বাড় বেড়েছে। জেল পলাতক হিসেবে তোদের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে।’

আহতরা জানায়, মারধর করে তাদের এখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে একজন করে মারা গেলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে চার দফায় আহতদের হাসপাতালে আনা হয়।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রবেশন অফিসার মুশফিক আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রতি কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রডের আঘাতে ও মারপিটে মারাত্মক জখম হয় ১৪ কিশোর। প্রাথমিকভাবে উন্নয়ন কেন্দ্রেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক আহতদের একে একে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডা. অমিয় দাশ বলেন, ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে আসা তিন জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। কী কারণে তারা মারা গেছে- ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে বলা যাচ্ছে না।’

খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা যারা অপরাধ নিয়ে কাজ করি, তারা ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। যেকারণে মূল ঘটনা জানা জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তারাই এই ঘটনার মূল সাক্ষী। মৃত্যুপথযাত্রী কেউই মিথ্যা কথা বলে না। তাদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে তাদের বিষয় গুরুত্ব পাবে।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাদী যে কেউ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বা তাদের স্বজন অথবা তৃতীয় কোনও পক্ষ; সবশেষ কাউকে না পাওয়া গেলে পুলিশ তো রয়েছে। সবশেষ আমি বলতে চাই, আজকের (বৃহস্পতিবারের) ঘটনা একপক্ষীয়।‘

বিভিন্ন মামলায় ১৮ বছরের নিচের সাজাপ্রাপ্ত বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। যার একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে। এ কেন্দ্রে মোট বন্দির সংখ্যা ২৮০জন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারপিটের ঘটনায় তিন কিশোর নিহত হয়। নিহতরা হলো- খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)। মরদেহ তিনটি যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ৩০০ বস্তা ইউরিয়া সার আটক

নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে মিয়ানমারে পাচারের সময় ৩০০ বস্তা ইউরিয়া সার আটক করেছে...

গণতন্ত্র ফেরাতে সবাইকে আসতে হবে নির্বাচনে: মির্জা ফখরুল 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে অংশ নে...

মোরেলগঞ্জে আগাম শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

সুন্দরবনের উপকূলে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। মোরেলগঞ্জ উপ...

জাতিসংঘের সাত কর্মীকে আটক করেছে হুথিরা

ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে হুথিরা ইয়ামেনের রাজধানী সানায় জাতিসংঘ...

ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলা ক্যাথরিন এখন আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট

ক্যাথরিন আলোচনায় আসেন গাজায় ইসরায়েলি অভিযানকে ‘গণহত্যা’ এবং ইসরায়...

পুলিশ প্রশাসনে রদবদল: একসঙ্গে বদলি ১১ কর্মকর্তা

একযোগে বদলি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৯ জন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার দ...

কমলনগরে জেলের জালে আড়াই কেজির ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জেলের জালে ধরা পড়েছে আড়াই কেজি ওজনের এক বিশাল ইলিশ। মাছট...

সুন্দরবন উপকূলে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

সুন্দরবনের উপকূলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি বর্তমানে গভীর নিম্নচাপে রূপ নি...

বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন থেকে বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার

রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে অস্ত্রভর্তি ট্রলি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা