অপরাধ
১৩০ টাকা বেতনে চাকরি

নুরুল ৪৬০ কোটি টাকার মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা ভাষায় একটা জনপ্রিয় বাগধারা হচ্ছে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’। আঙুলটা যদি হঠাৎ কলাগাছে পরিণত হয়, কলাগাছের মতো ফুলে-ফেঁপে ওঠে, সেই অবস্থাকেই বোঝায়। সাধারণত অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করে হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' কথাটা বেশি ব্যবহার করা হয়। তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের টেকনাফ বন্দরে। লোকটি ১০ বছরে চাকরি করে অবৈধ উপায়ে কামিয়ে নিয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ১৩০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিল নুরুল ইসলাম (৪১)। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালিসহ বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে অবৈধভাবে অর্জন করেছেন এতো টাকা।

এছাড়া, এই অর্থ দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ৩৭টি বাড়ি ও জমি কিনেছেন তিনি। এমনকি ঢাকার সাভার ও টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গায় কিনেছেন সম্পত্তি। র‍্যাবের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুরুল ইসলামকে আটক করার পর মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব সূত্রে আরও জানা যায়, আটকৃত নুরুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ জাল টাকা, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমার মুদ্রা, নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা ও ৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, চাকরির সুবাদে বন্দরের সংশ্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে নুরুল ইসলামের, এক পর্যায়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেটও। দালালি, পণ্য খালাস, পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে অল্প সময়েই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান এই কম্পিউটার অপারেটর।

তিনি বলেন, বন্দরের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করলেও অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন নুরুল ইসলাম । পরবর্তীতে তার পদে অন্য আরেকজনকে চাকরি দেন।

আটকৃত নুরুল টেকনাফ বন্দরের দালাল সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা উল্লেখ করে র‌্যাব জানায়, তার সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। এছাড়া, কাঠ, শুটকি মাছ, বরই আচার, মাছের আড়ালে ইয়াবাসহ অবৈধ পণ্য নিয়ে আসতো। চক্রটি টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত।

র‌্যাবের এই মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও তৈরি করে। এরমধ্যে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি একাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে তিনি জাহাজ শিল্প ও ঢাকার কাছাকাছি বিনোদন পার্কেও বিনিয়োগ করছেন।

তার সঙ্গে আর কারা জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব জানায়, কম্পিউটার অপারেটর থাকাকালীন বন্দরের বেশিরভাগ লোক তাকে চিনতেন এবং সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল। এ কারণে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজ করতে সুবিধা হতো। তার সঙ্গে দুই/একজন ব্যক্তি নয় অনেকেই তার কাজে সহযোগিতা করেছেন। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কারও নাম বলেনি, পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে নাম যাবে যাবে।

কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলেও ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বন্দর কেন্দ্রিক অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল। সাভারে একটি পার্ক ও বন্দরে জাহাজ কেনার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি।

এছাড়া নয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নুরুল ইসলামের অনেক অর্থের সন্ধান মিলেছে।

সান নিউজ/এনএএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

বোয়ালমারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার মালামাল লুট

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নারায়ণ চন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির...

জনগণের সিদ্ধান্ত নাকি রাজনীতির সাজানো সম্মতি?

গণভোট হলো জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের একটি পদ্ধতি, যে...

এবার ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’ 

নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন করে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন কমিশন যু...

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বনদস্যু, তিন শতাধিক জেলে অপহরণ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার নামে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা