অপরাধ

চট্টগ্রামে ড্যান্ডিতে ডুবে আছে পথশিশুরা!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো : কখনো ভাঙারি, কখনো ফুল-সংবাদপত্র বিক্রি করে-চট্টগ্রামে এমন পথশিশুর সংখ্যা কম নয়। তবে এভাবে তারা যা টাকা পায় তাতে ঠিকমতো দুবেলা-দু‘মুঠো ভাত জোটে না। ফলে পেটের ক্ষুধা নিবারণে পলিথিনে সলিউশন নামক গাম ঢুকিয়ে ঘ্রাণের মাধ্যমে নেশাগ্রস্ত হচ্ছে তারা। যার নাম ড্যান্ডি।

এমন কথাই বলেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বেশ কয়েকজন পথশিশু। যারা ড্যান্ডির খরচ জোগাতে জড়িয়ে পড়ছে চুরি ছিনতাইয়েও। যার সুযোগ নিচ্ছে চট্টগ্রামের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রও।

শুক্রবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুরস্থ ফুটওভার ব্রীজের সিঁড়িতে বসে এক পথশিশু সেবন করছিল ড্যান্ডি। শিশুটির চোখ ছল ছল করছিল তখন। কাছে যেতেই সটকে পড়তে চায় শিশুটি। অভয় দিলে কথা বলতে রাজি হয়। জানায় তার নাম রাকিব। বয়স ১২।

রাকিবের ভাষ্য, ভাঙারি বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে ভাত একবেলা খাই। আরেক বেলা এটা খাই। প্রথম প্রথম খেতাম না, বন্ধু আরিফের সহায়তায় মাসখানেক আগে মূচির দোকান থেকে গাম কিনি, ময়লার ভাঁগাড় থেকে পলিথিন নিয়ে নেশা করা শুরু করেছি। এখন ড্যান্ডি না খেয়ে থাকতে পারি না।

রাকিব জানায়, বছর তিনেক আগে তার মা মারা যায়। বাবা রিকশা চালায়। তিনিও মাদকাসক্ত। রিকশার গ্যারেজে পড়ে থাকে। রাকিবের খোঁজ নেয় না। অগত্যা ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে রাকিব। এক সময় তার এক পথশিশু বন্ধুর প্রস্তাবে গাঁজা বিক্রী করে টাকা কামাই রাকিব। একদিন খদ্দের গাঁজা নিয়ে টাকার বদলে বেধড়ক পেটায় রাকিবকে। সে কথা বিশ্বাস না করে উল্টো মারধর করে মূল গাঁজা বিক্রেতা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ব্যাথায় কাতর হয়ে দিন কেটেছে তার।

নগরীর কোতায়ালী থানার নিউমার্কেটের সামনে শুক্রবার রাত ৯টায় ড্যান্ডি সেবন করছিল ৫ পথশিশুর একটি দল। নেশায় তখন তারা বুদ। পলিথিন দিয়ে কি করছে প্রশ্ন করা হলেও তার কোন উত্তর আসছিল না। এরমধ্যে একজন বলে উঠল ড্যান্ডি। আর বাকিটা জানার সুযোগ মেলেনি।

নিউ মার্কেটের একটু দুরে হকার মার্কেটের বিপরীতে দেখা গেল আরো তিন কিশোরকে। পলিথিনে নাক-মুখ ডুবিয়ে গিলছে আর খিটখিটিয়ে হাসছে। কি করছ প্রশ্ন করতেই বলে উঠে, ড্যান্ডি। এটা কি? তাতে কি হয় জানতে চাইলে বলে-শান্তি। ক্ষুধার জ¦ালার শান্তি।

এভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৮৫ শতাংশ পথশিশু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সচিব রাজু আহমেদ। তার তথ্যমতে, ৯-১৮ বছর বয়সী পথশিশুরা ড্যান্ডি সেবনে আসক্ত। পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে ও পেট্রল শুঁকে নেশা করে তারা।

রাজু আহমেদ বলেন, ড্যান্ডি নামক এই নেশা জাতীয় দ্রব্যটি রাবার, চামড়াজাত দ্রব্য বা জুতা ও ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত এক ধরনের আঠা ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট (গাম)। নগরের বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকানে সলিউশন নামে এসব আঠা জাতীয় দ্রব্য ৮০-১৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়। পথ শিশুরা মূলত মুচি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০-২০ টাকায় অল্প পরিমাণে এ গাম কিনে নিয়ে নেশা করে থাকে।

আর এ নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ায় তাদের দিয়ে নানা ধরণের অপরাধ করিয়ে নিচ্ছে অপরাধী চক্র। নেশার টাকা সংগ্রহ করতে শিশুরা চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, ড্যান্ডি গ্রহণের কারণে মারাত্নক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুরা। ড্যানড্রাইট আঠা সেবনের কারণে শ্বাসকষ্ট, লিভার, কিডনির রোগসহ শিশুরা মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরের কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, নেশাগ্রস্ত পথশিশুদের একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রথমে তাদের জন্য পথেই শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, সেখান থেকে স¤পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। এখানে আনার পর তাদের পরিবারের খোঁজ করতে হবে। খোঁজ না পেলে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে তাদেরকে নেশাগ্রস্ত জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ওবায়দুল করিম দুলাল বলেন, পথশিশুরা শিক্ষা পাচ্ছে না, খাবার পাচ্ছে না। যার খাবারের নিশ্চয়তা নাই, শিক্ষার নিশ্চয়তা নাই, অর্থ উপার্জনের কোনো মাধ্যম নাই, সমাজ ব্যবস্থা তখন তাকে ছিনতাইয়ে নামতে বাধ্য করে। আপনি যদি ওই শিশুকে স্কুলে পাঠাতে পারেন, চাকরি দিতে পারেন, খাবারের নিশ্চয়তা দিতে পারেন, তাহলে শিশুদের এ ধরণের অপরাধে স¤পৃক্ত হওয়ার কথা নয়।

তিনি বলেন, আইএলও শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ করতে আন্দোলন করছে, প্রচার করছে। শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ করার পর ওই পরিবারের ভরণপোষণের যে বিষয় তা দেখতে হবে। ইন্টিগ্রিটেড ওয়েতে অ্যাপ্রোচ করতে হবে। আরও দেখতে হবে, এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আরও দশটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না। তাহলেই পথশিশুদের একটি সুন্দর জীবন দেয়া সম্ভব।

সান নিউজ/ আইকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা