এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলার আসামিরা
অপরাধ

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণে আসামি গ্রেপ্তার নেই, তদন্ত কমিটি 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিলেট: স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসা গৃহবধূকে (১৯) এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় নয় আসামির একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আসামিদের ফেসবুকে সরব দেখা গেছে। ওই ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে দুই দারোয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

গণধর্ষণের শিকার তরুণী মানসিকভাবে আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন। তবে তার শারীরিক কোনো ঝুঁকি আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার তরুণী গৃহবধূকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে ছয়জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো তিনজনকে অভিযুক্ত করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘ওই নববধূ তার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী সিগারেট খেতে কলেজের গেটের বাইরে বের হন। এ সময় ছয়জন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।

এ সময় তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয় বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মামলায়ও একই অভিযোগ করে বলা হয়েছে, সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে আসেন ওই তরুণী। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মী মিলে স্বামীসহ ওই তরুণীকে তুলে নেন কলেজ ছাত্রাবাসে। পরে তারা স্বামীকে বেঁধে মারধর করে গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন।

নাম উল্লেখ করা ছয় আসামির সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা হলেন, সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লঙ্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম (২৫)। তাদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত। বাকিরা এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র। নাম উল্লেখ করা ছয়জনের সঙ্গে তিনজন সহযোগী ছিলেন উল্লেখ করে তাদের অজ্ঞাত বলা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত নয় আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। অস্ত্র জব্দের ঘটনায় ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন শাহপরান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার।

শনিবার দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠকে বসে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিন সদস্যের কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন- কলেজের প্রধান ফটকের দারোয়ান রাসেল মিয়া ও চৌকিদার সবুজ আহমদ রুহান।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন আহমদ জানান, কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক, হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জীবন কৃষ্ণ ভট্টাচার্যকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই দারোয়ানকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা মাস্টাররোলে কর্মরত ছিলেন।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান শনিবার দুপুরে ওসিসিতে ওই তরুণীকে দেখতে যান। তিনি বলেন, ‘তরুণীর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে ওসিসিতে গিয়েছিলাম। শারীরিক কোনো ঝুঁকি নেই। তবে মানসিকভাবে তিনি কিছুটা আতঙ্কিত। ওসিসির মাধ্যমে তার শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে একটি পরীক্ষা ঢাকায় করানো হতে পারে। সেজন্য নমুনা পাঠানো হবে। পরে সবগুলো প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে হস্তান্তর করা হবে।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ছবি ভাইরাল হয়। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে দেশজুড়ে। কিন্তু পুলিশ আসামিদের হদিস করতে না পারলেও অভিযুক্তরা ফেসবুকে সরব রয়েছেন।

শনিবার গণধর্ষণ মামলার দুই আসামিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে। স্ট্যাটাসে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।

৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম শনিবার সকাল ১১টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন— ‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ, আমি রবিউল হাসান। আমি এমসি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকেই চেনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকেই জানেন। গতকাল এমসি ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের সাথে, কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে অনেক অনলাইনে নিউজ করিয়েছেন, আমি এমসি কলেজ ছাত্র, কিন্তু আই হোস্টেলে কখনোই ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আমি এই নির্মম গণধর্ষণের সাথে জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে। যদি আমি এই জঘন্যকাজের সাথে জড়িত থাকি তা হলে প্রকাশে আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি কোনোভাবেই এই কাজের সাথে জড়িত নই। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, সত্য না জেনে আমাকে এবং আমার প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের নাম কোনো অপপ্রচার করবেন না।’

‘এমসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারী সকল নরপশুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ’

এর আগে এই মামলার ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম ফেসবুকে লেখেন— ‘এ রকম জঘন্য কাজের সাথে আমি জড়িত না। যদি জড়িত প্রমাণ পান, প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলবেন। একমাত্র আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে সুইসাইডের দিকে নিয়ে যাওয়া আপনাদের বিচার আল্লাহ করবেন। ’

ফেসবুকে সরব থাকার পরও আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি। পৃথক স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘ফেসবুক ওয়ালে আসামিদের স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি নজরে ছিল না। এ বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার করবো।’

মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে ও বর্তমান ঠিকানা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো উল্লেখ করা। শাহ মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়া ও বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ। মাহফুজুর রহমানের বাড়ি কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে। রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে। অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জের আটগ্রাম এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকায় (হাসননগর)।

কলেজ সূত্র জানায়, সাইফুর, রনি ও মাহফুজুর ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী। অর্জুন সাবেক শিক্ষার্থী। রবিউল বহিরাগত। ছয়জনই ছাত্রলীগের কর্মী ও টিলাগড়কেন্দ্রিক একটি পক্ষে সক্রিয়।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ছাত্রাবাসের ওই কক্ষ ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছে, ওই কক্ষে থাকা ছাত্রলীগের একটি পক্ষের ৬-৭ জন কর্মী এ ঘটনায় জড়িত। ধর্ষণ মামলার আসামি সবাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। এর মধ্যে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের সঙ্গে রণজিৎ সরকারের সঙ্গে ছবি আছে।রণজিৎ সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

অবশ্য আসামি ছয়জনের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহা. সোহেল রেজা বলেন, আপাতত অপরাধী পরিচয়ে তাদের ধরার তৎপরতা চলছে।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা একমাস দাবদ...

মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৃত্যুর জাল সনদ তৈরির অভিযোগে প্রতারণা ও জ...

আমিরাতে প্রবল বৃষ্টিপাত, সতর্কতা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিপা...

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

ভরিতে ১৮৭৮ টাকা কমলো স্বর্ণের দাম 

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা অষ্টমবারের...

যারা চাপে রাখতে চেয়েছিল তারাই চাপে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যারা আমাদেরকে চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই...

২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য...

১০ টাকায় চিকিৎসা নিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর আগারগাঁও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউ...

এসএসসির ফল ১২ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল...

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাই...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা