এহসানুল হক, ময়মনসিংহ (প্রতিনিধি) : ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই’ খ্যাত মাটি ও মানুষের কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ১১৪ তম জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে। জন্মশতবার্ষিকীতে কবির কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতা,পাঠাগার উদ্বোধন, ও পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।
আরও পড়ুন : সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ
কবির ১১৪তম জন্মবার্ষিকী (৪ মার্চ) শনিবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ডাক বাংলো চত্বরে কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদের আয়োজনে কবি আলম মাহবুব সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন,বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার খোরশেদ আলম ভূঞা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মাশরেকী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাই সোহাগ, স্বনামধন্য কবি সোহরাব পাশাসহ দেশ সেরা কবি ও সাহিত্যিকরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন।
জানা যায়, ১৯০৯ সালে মন্তান্তরে ১৯১৯ সালের ১ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাঁকনহাটি গ্রামের মাতুলালয়ে কবি আব্দুল হাই মাশরেকী জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ওসমান গনি সরকার আর মা রহিমা খাতুন। বাবা ছিলেন জমিদার বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী।
আরও পড়ুন : ৩০ টি বৌদ্ধ বিহারে অনুদান প্রদান
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতোই প্রতিবাদী এ লোককবির মৃত্যুর প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে তার অনেক লেখনি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি দেশের এ বিশিষ্ট গীতিকার, সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও সাংবাদিকের। মাটি ও মানুষের এ লোককবি আব্দুল হাই মাশরেকী ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন সাংবাদিক।
‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই’- যুগ যুগ ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থানে থাকা এ পল্লীগীতির লেখক কবি আব্দুল হাই মাশরেকী। শুধু গান নয়, গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় পালাগান-রাখাল বন্ধু, জরিনা সুন্দরী, মাঠের গান, ঝিঙে ফুলের লতা, দুখু মিয়ার জারি, হযরত আবু বকর (রা.) পুঁথি সাহিত্যেরও লেখক ছিলেন এ কবি।
কবি আব্দুল হাই মাশরেকী পিত্রালয় থেকে প্রাথমিক পাঠ শেষে ঈশ্বরগঞ্জের চরনিখলা মধ্য ইংরেজি স্কুলে পরে কাঁকনহাটি গ্রামে মাতুলালয় থেকে জাটিয়া হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন ১৯৩৯ সালে। অতপর ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অকালে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনে ছেদ পড়ে। কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতা ও পরে জুট রেগুলেশনে চাকরি করেন। তিনি দৈনিক সংবাদে সহ-সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষিকথা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন : চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার ‘চোর’ গল্প প্রকাশিত হয়। আমাদের সাহিত্যাকাশের নিত্য স্মরণীয় কোন জ্যোতিষ তিনি হতে পারেননি সত্য, তবে অনেক তারকার মধ্যে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। লিখেও ছিলেন তিনি কম নয়, কিন্তু প্রকাশিত হয়েছে ক’খানা। জীবদ্দশায় প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো- ‘দুখু মিয়ার জারি’(পল্লিগীতিকা ১৯৬১), ‘কুলসুম’(ছোটগল্প ১৯৯১), ‘বাউল মনের নকশা’(‘কুলসুম’ এর নামন্তরিত বর্ধিত সংস্করণ ১৯৫৪), ‘সাকো’ (একাঙ্কিকা ১৯৫৯), ‘আকাশ কেন নীল’(অনুবাদ শিশুতোষ বিজ্ঞান ১৯৬২), ‘মাঠের কবিতা মাঠের গান’(কবিতা ১৯৭০), ‘নতুন গাঁয়ের কাহিনী’( নাটক ১৯৭০)। ১৯৮৮ সালের ৪ ডিসেম্বর কবি আব্দুল হাই মাশরেকী সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। এছাড়াও বাংলা গানের বিশিষ্ট গীতিকার হিসেবে মাশরেকীর নাম চির-স্মরণীয় থাকবে।
সান নিউজ/এসআই
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            