রহমত উল্লাহ, টেকনাফ: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কক্সবাজার টেকনাফে শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধ উপর দিয়ে সমুদ্রে বাড়ন্ত জোয়ারের ঢেউয়ের পানি এসে ৩০০ ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাতে ১০০ ঘরবাড়ি সাগরে ভেসে গেছে। টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দুই অংশে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কটি।এমনটি জানিয়েছেন টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরফান হক চৌধুরী।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন সুনাক
ইউএনও বলেছেন, সিত্রাংয়ের কারণে সমুদ্রের জোয়ারের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি ছিল। এতে সোমবার রাতে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঘাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়াস্থ শশ্মান এলাকায় মেরিন ড্রাইভের দুইটি অংশে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সড়কের ৬-৭ হাত করে অংশ ভেঙ্গে গেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, রাত থেকে প্রচণ্ড দমকা হাওয়া শুরু হয়। মাঝে মধ্যে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি ঢুকে দ্বীপের সাতটি অংশে ব্যাপক ভাঙন ধরেছে। এখন ১০০ ঘর-বাড়ি ও জেটিসহ ১৩টি ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর-পূর্ব বিচ, গলাচিপা, কোনাপাড়া, নজরুল পাড়া এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া নাফনদীর জোয়ারের পানিতে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ায় ২০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: অন্ধ বিরোধিতাই বিএনপির হাতিয়ার
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের পানি ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে দ্বীপের অধিকাংশ জাগায় পানি প্রবেশ করে। এমন পানি দ্বীপবাসী আগে কখনও দেখেনি। লোকজন বাড়িতে ফিরছে। দ্বীপে বেশকিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি দ্বীপের চার দিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অন্যদিনের চেয়ে সাগরের পানি ৪-৫ ফুট বেড়ে দ্বীপের ঢুকে পড়ে। এতে দ্বীপরে বেশকিছু অংশে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ১০০ ঘর-বাড়িসহ কিছু ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে আলহামদুলিল্লাহ এখন পানি নাই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেবে নেপাল
শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার এলাকার নাফ নদের তীরে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে পানি। এছাড়া দ্বীপের আরও দুটি গ্রামে অর্ধশতাধিক ঘরের টিন-চাল উড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধও।আর শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম দিকে ২ টি গ্রাম প্লাবিত।
এ বিষয়ে শাহপরীরদ্বীপ ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মান্নান বলেন,কাল রাতে বাতাসে হাওয়া বেশি তাই হঠাৎ বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি ডুকে। আমি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলছিলাম।কেউ গেছে কেউ যায়নি। অনেকেই হতাহত হয়েছে তাড়াহুড়া করে।৩০০ পরিবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদের সহযোগী করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ এরফানুলক হক চৌধুরী জানান, সিত্রাং আতঙ্কে গতকাল সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিলেন। পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন তারা।
আরও পড়ুন: আসছে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে বেশকিছু ঘরবাড়ি-রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত পাঁচ শতাধিকের বেশি ঘরবাড়ি ভাঙার হিসাব পাওয়া গেছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সব জায়গা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে
সান নিউজ/এমআর