সারাদেশ
মাদারীপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে

প্রভাবশালীদের দৌরাত্বে অসহায় গ্রাহকরা

শফিক স্বপন, মাদারীপুর: মাদারীপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস এখন দলিল লেখক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের দখলে। দলিল লেখক ও অফিস কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি হয়ে পড়েছে এখানে সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের মত করে নিয়ম তৈরী করে সারা বছরই চলে এই সদর সাব রেজিস্ট্রারি অফিসের কার্যক্রম। এসব সিন্ডিকেটের বেপরোয়া দুর্নীতি বাণিজ্যে কাছে জিম্মি সাধারণ নাগরিকেরা।

আরও পড়ুন: প্রকৌশলীর স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকার জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের নিচ তলায় সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস। তার পাশেই একটি টিনশেড ঘরে দলিল লেখকদের অফিস। সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে স্থানীয় দলিল লেখকদের সাথে অদৃশ্য কমিশন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এখানে দলিল করতে আসা সকল সেবা গ্রহীতাকে ১৫ থেকে ২০ পার্সেন্ট অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। তাছাড়া কোন রকমের ভুল ত্রুটি থাকলে সেই দলিল রেজিস্ট্রি করতে বিশেষ উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।

এসব সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষ। দলিল করতে আসা মানুষেরা তাই বাধ্য হয়েই কোন বিকল্প উপায় না থাকায় সিন্ডিকেটের চাহিদাকৃত টাকা দিয়ে দলিল সম্পাদন করেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়ন থেকে সাগর সরদার। একটি জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছেন। দশ লাখ টাকা মূল্যমানের তার জমিটিতে সরকারের নির্ধারিত সাড়ে ৬ শতাংশ হারে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার ছাড়াও দলিল লেখক ও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সিন্ডিকেটকে ৮০ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে।

সিন্ডিকেটের চাহিদা মত টাকা দেওয়ার পরেও তাকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে বসে থাকতে হয়েছে। মাদারীপুর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাকিব হাসান। তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের দুই শতাংশ একটি জমির দলিল করতে এসেছে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। কিন্তু সরকারি খরচের ছাড়াও তাকে ৩৫ হাজার টাকা দলিল লেখক ও রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারীদের অতিরিক্ত দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: বজ্রপাতে মা-মেয়ের মৃত্যু

শুধু এই দুই ব্যক্তিই নয়। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার যে কোন ব্যক্তিই মাদারীপুর সদর উপজেলা সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে এসে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েন। মাদারীপুরবাসী এই দালাল সিন্ডিকেটদের কাছে জিম্মি।

সদর সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের সেবা গ্রহীতা রাকিব হাসান বকুল বলেন, সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ও কর্মচারীরা মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। তাদের চাহিদা মত টাকা না দিলে এই অফিসের কোন সেবা পাওয়া যায় না। আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের চাহিদামত টাকা দিয়ে সেবা নিচ্ছি।

মাদারীপুর বাস-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসেন। তিনি বলেন, এই অফিসের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, দালাল ও দুর্নীতি মুক্ত এই অফিসটি হোক। এখানে সেবা নিতে এসে যেন আমরা কেউ বিড়ম্বনায় না পড়ি, সরকার যেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখানে বেশি টাকা ছাড়া কোন কাজ করা যায় না।

আরও পড়ুন: শপথ নিলেন পাকিস্তানে মন্ত্রিসভার ৩৪ সদস্য

তবে, দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা এসব সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেন। মাদারীপুর সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি দিদার হোসেন বলেন, পার্টিরা এখানে দলিল করতে আসলে আমরা তাদের কাছ থেকে কোন বেশি টাকা নেই না। তারা খুশি হয়ে আমাদের যা দেয়। আমরা তাই নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা সিন্ডিকেট করেও কোন কাজ করি না। টাকাও নেই না।

একই ধরনের কথা বললেন সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার শর্মিলী আহমেদ শম্পা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কেউ কখনো অভিযোগ নিয়ে আসে না। যদি কেউ বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ দেয়। তাহলে বিষয়টি দেখব। আর আপনারা সাংবাদিক। আপনারাও দেখেন। কোথাও সিন্ডিকেট। বের করেন।

তবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতি ও কর্মচারীরা সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা রেজিস্ট্রার মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, এটা তো অনেক দিনের প্রাকটিস। হুট করেই দলিল লেখক সমিতির এই সিন্ডিকেট বদলানো যাবে না। তবে আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকি। পাশাপাশি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সকল আবেদন অনলাইনে হয়ে গেলে তখন দুর্নীতি ও বেশি টাকা নেওয়ার যে অভিযেগা আসে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এটা একটু সময় লাগবে। তবে, কেউ যদি নির্দিষ্ট করে কোন অভিযোগ আমার কাছে দেয়। তাহলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরও পড়ুন: বিশ্ব জুড়ে করোনায় মৃত্যু ৬২২৪৪৪৪

মাদারীপুরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য বন্ধ করে সরকারি নিয়মের নির্ধারিত ফি এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকেরা।

সাননিউজ/এমআরএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান !

নেপালে তীব্র বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা পদত্যাগের পর দেশটিতে অন্ত...

জাকসু নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-জাকসু নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন শ...

নেপালে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ, বাংলাদেশ দলের ফ্লাইট স্থগিত, হোটেলেই ফুটবলাররা

নেপালে ‎স্থানীয় সময় আজ দুপুর ৩টায় টিম হোটেল থেকে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিম...

এলইডি স্ক্রিন চালু, ভোট গণনা দেখছেন শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে...

আগে থেকেই সাদিক কায়েমের ব্যালটে ভোটের অভিযোগ রূপাইয়া’র

ডাকসু নির্বাচনে টিএসসির কেন্দ্রে পূর্বে ক্রস দেওয়া ব্যালট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা