সারাদেশ

তিন কন্যার ভরসা মাঝি মায়ের বৈঠা

জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর: মায়া বেগম (৩৫)। জীবিকার তাগিদে হাতে তুলে নিয়েছেন নৌকার বৈঠা। দু'বেলা দুমুঠো খাবার যোগাতে ও তিন কন্যার লেখাপড়ার খরচ চালাতে সেই ভোরে হাতে ওঠে বৈঠা আর শেষ হয় রাতে। ৭ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে দৈনিক ১০০ হতে ১৫০ টাকা উর্পাজন করে কোন মতে কষ্ট তিন মেয়ের পড়ালেখাসহ সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

ভোরে ওয়াবদা খাল পাড়ে চলে যান বিধবা মায়া বেগম। এরপর শুধুই বৈঠা বাওয়া। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের ওয়াবদা খালে। দুই গ্রামের বাসিন্দাদের খাল পারের একমাত্র ভরসা তার নৌকা। ৭ বছর ধরে এভাবেই বৈঠা হাতে মাঝির কাজ চলছে মায়া বেগমের।

বিধবা মায়া বেগম সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের শহিদ হাজী হাওলাদার বাড়ীর মৃত আলীর স্ত্রী ও তিন কন্যার জননী।

মায়া বেগম বলেন, তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। সারাদিন খাটাখাটনি করে কোনরকম সংসারটা চালাচ্ছি ও মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হয়। তা দিয়েই কষ্ট করে চলে সংসার। এ টাকায় সংসার ও মেয়েদের পড়ালেখা করাতে খুব হিমশিম খাচ্ছি। মাঝে মাঝে হাত পাততে হয় মানুষের দুয়ারে। স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৫ বছর। নৌকা চালিয়ে তিন মেয়ে ও আমিসহ সংসারের সদস্য চারজন। বড় ও মেঝো মেয়ে চাঁদখালী এরব উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। আর ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যে নৌকার ওপরেই সংসার, এখন সেটিও পুরান এবং নড়বড়ে, কখন যে ভেঙে যায়। এনিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

এলাকাবাসীরা জানান, তিনটা মেয়ে নিয়ে স্বামীহারা বিধবা মায়া নৌকার উপর নির্ভরশীল। কষ্ট করে নৌকা বেয়ে খাচ্ছে, তাছাড়া তো ওনার কোন উপায় নেই। উনি চলবেন কি করে, খুবই অসহায়। যার টাকা আছে সে দেয়, যার টাকা নেই তাকেও পাড় করে সে। তার নৌকাটা পুরান হয়ে গেছে। এই নৌকাটা নতুন করে তৈরির করার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সাহায্যের প্রয়োজন, যাতে ওনার সংসারটা ভালোভাবে চলতে পারে এবং মেয়েদের পড়ালেখা করিয়ে উচ্চশিক্ষায় পৌঁছাতে পারে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আলমগীর হোসেন বলেন, স্বামী মারা যাওয়ায় উর্পাজনের জন্য অনেকটা নিরুপায় হয়েই নৌকার বৈঠা হাতে নেয় মায়া। আমরা তার জন্য বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করেছি। তবে নৌকা সারানোর জন্য সমাজের প্রভাবশালীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসা দরকার।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, মায়া বেগমের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। সরকারি ভাবে যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করার দরকার, করবে বলে আশ্বাস দিলেন এ কর্মকর্তা।

পুঁথিগতভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হয়তো বোঝেন না বিধবা মায়া বেগম। শুধু বোঝেন, নৌকা নিয়েই ঝড়-ঝঞ্জা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। সহৃদয়বান মানুষ যদি একটু সহায়তার হাত বাড়ান, তাহলেই হয়তো সহজ হবে মায়া বেগমের পথচলা।

সান নিউজ/জেইউবি/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দেব–শুভশ্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়

দীর্ঘ বিরতির পর সাবেক প্রেমিক জুটি দেব ও শুভশ্রী পর্দায়। কৌশিক গাঙ্গুলীর &lsq...

নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে, আশা ইসির

আগামী সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করতে পারব...

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কাল

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা করতে আগামীকাল শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ব...

দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী

মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের দুই মন্ত্রী। পাকিস্তানের বাণ...

তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে, ৫ উপজেলার বহু মানুষ পানিবন্দি

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা