সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আ. মান্নান মাতুব্বর ও তাঁর ভাই ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশের পর আনন্দ মিছিল থেকে ওই দুই বাড়িতে হামলার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়েনদিয়া বাজার সংলগ্ন পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মোল্লার বসতভিটার ৫০ মিটার দূরে তাঁর ছোট ভাই সিদ্দিক মাতুব্বরের পূর্ব–পশ্চিম দিকে লম্বালম্বি ও উত্তর দিকে ‘এল’ সিস্টেমের ফুল-ওয়াল বিশিষ্ট বসতবাড়ির অনেক অংশই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যান মান্নান মোল্লার একতলা ভবনের সামনের ওয়ালের কিছু অংশ ভাঙা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার রায় ঘোষণার পর বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া বাজারে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাজারের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সন্ধ্যার দিকে এক পর্যায়ে বাজারসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত প্রথমে সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে ও পরে মান্নান মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। মান্নান মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা চলাকালে পাশের ডহরনগর ফাঁড়ি পুলিশের কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীরা চলে যান।
এ বিষয়ে সিদ্দিক মাতুব্বর অভিযোগ করে জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি পাশের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড়খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুর স্বজন ও ময়েনদিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মাহবুব হাসান সজিবের সমর্থকরা এ হামলায় অংশ নেয়।
তিনি বলেন, আমার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদের মামলার একজন সাক্ষী ছিলেন। এই রেশ থেকেই আজাদের ছেলে ও স্বজনরা শেখ হাসিনার রায়ের সুবাদে আনন্দ মিছিলের নামে সোমবার আমাদের দুই ভাইয়ের বাড়িতে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা দুই পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন বাড়িছাড়া। তিনি আরও বলেন, ময়েনদিয়া এলাকার ব্যবসায়ী মাহবুব হাসান সজিব আমাদের বাড়ির আশপাশের লোকজনকে এ ঘটনার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করে আসছে মঙ্গলবার সকাল থেকে।
তবে ঢাকায় অবস্থান করে এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া কিভাবে সম্ভব—এই প্রশ্ন ছুঁড়ে এ অভিযোগ নাকচ করে আবুল কালাম আজাদের ছেলে মাসুম বিল্লাহ ওরফে জিহাদ বলেন, তিনি গত দেড় সপ্তাহ ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমার বাবার বিরুদ্ধে শুধু মান্নান মাতুব্বর একা নন, আরও অনেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা জানি, তারা নিজে থেকে এ সাক্ষ্য দেননি, জোর করে দেওয়ানো হয়েছিল। জিহাদ বলেন, কোনো সাক্ষীর সঙ্গে তাদের পরিবারের খারাপ সম্পর্ক নেই! তবে এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে তাদের নাম জড়িয়ে অভিযোগ দেওয়া এলাকার একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ অক্টোবর সকালে মান্নান মাতুব্বর ও তাঁর ভাই সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে প্রথম দফা হামলা–ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদের ছেলে ও স্বজনদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই হামলার ঘটনার পর মান্নান মাতুব্বর ও সিদ্দিক মাতুব্বর এলাকায় বসবাস করতে পারছেন না। এমনকি তাদের বাড়িতে দুই-চারজন নারী সদস্য ছাড়া কোনো পুরুষ সদস্য নেই। ওই ঘটনার ১১ মাস পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের পর গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দফায় এ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ময়েনদিয়া বাজার সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী মো. মাহবুব হাসান সজিব বলেন, সোমবার বিকেলে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পাশের সালথা উপজেলার একটি গ্রামে একটি কাজে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাজারে ফিরে জানতে পারেন মান্নান মাতুব্বর ও সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তাঁর জানা নেই। তবে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। এমনকি তাঁর কোনো লোকজন এসব কাজে জড়িত নয়।
ডহরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমীন বলেন, তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে ভাঙা এলাকায় ছিলেন। তবে তিনি এ জাতীয় কোনো ঘটনা ঘটলে সে বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া এলাকায় গত সোমবার ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে ডহরনগর ফাঁড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।
সাননিউজ/আরপি