মুন্সীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিম হোসাইনকে (৩০) মেরে লাশ গুম করার হুমকির অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরের ছেলে ও যুবদল কর্মী সুজন সরকারের (৩৫) বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ হুমকি-ধমকির ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক নাদিম হোসাইন দৈনিক আমাদের সময়ের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি। তিনি জেলা শহরের চরকিশোরগঞ্জ এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে। হুমকির ঘটনায় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক নাদিম।
অভিযুক্ত সুজন সরকার পৌরসভার দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাছিমা আক্তার সিমার ছেলে। সুজন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে যুবলীগ কর্মীর পরিচয় দিলেও সরকার পতনের পর যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অন্যায়–অপকর্ম করে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাধারণ ডায়েরি ও ভুক্তভোগী সাংবাদিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে শহরের শ্রীপল্লী এলাকার তাহমিনা পারভীন নামে এক নারীর কাছ থেকে টং দোকান করার জন্য জায়গা ভাড়া নেন নাদিম ও তাঁর বাবা কাজিম উদ্দিন। সে দোকানের জায়গার জন্য মাসিক ৫০০ টাকা ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে নাদিমের বাবা চায়ের ব্যবসা করে আসছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর যুবদল কর্মী সুজন দোকানের জায়গাটি নিজেদের দাবি করে নাদিমদের দোকান ভেঙে দিতে চান।
পরবর্তীতে, দোকানের জন্য নাদিমের কাছ থেকে ১,০০০ টাকা চাঁদা নেয় সুজনরা। ছয় মাস আগে নাদিমরা দোকানের জায়গা ছেড়ে দিতে চান। তাহমিনারাও সে জায়গা অন্যত্র ভাড়া দিয়ে দেন।
সোমবার রাতে বর্তমান ভাড়াটিয়ারা নাদিমদের টং দোকান সরিয়ে নিজেদের দোকান তোলেন। এতে সুজন ও তাঁর মা নাছিমা আক্তার সিমা মঙ্গলবার নাদিমকে ফোন করে প্রেসক্লাবের সামনে ডেকে আনেন। সে সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
সাংবাদিক নাদিম হোসাইন জানান, “জোর করে ১৫ মাস ১,০০০ টাকা করে নিয়েছে সুজন। আমার বাবা আর পারছিলেন না। আমরা দোকান ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলতেই মালিকরা অন্যজনের কাছে ভাড়া দিয়েছে। সুজনরা ভাবছে এগুলোর সঙ্গে আমরা জড়িত, তাই আমাদের মেরে ফেলতে চাইছে।”
নাদিম আরও বলেন, “আমি সুজনদের এলাকা দিয়ে নিয়মিত বাড়িতে একা যাতায়াত করি। সুজন একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ। সে যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমার নিরাপত্তা দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সুজন যুবদল কর্মীর পরিচয় দেয়—তাই তার দলের উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষের কাছেও এই ব্যাপারটার বিচার চাই।”
এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর নাছিমা আক্তার সিমা বলেন, “নাদিমের বাবা যে জায়গায় দোকানটি ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছিল, এটির মালিক আমরা। ওর বাবা যার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দোকান চালাচ্ছিল, তারা অবৈধ। দোকানটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য নাদিমকে বলা হয়। এর মধ্যে আরেকজন এসে নাদিমের দোকান ভেঙে আরও একটি দোকান নির্মাণ করে। এতে আমার ছেলে সুজন নাদিমের সাথে রাগারাগি করে। মেরে ফেলার হুমকি দেয়নি।”
এ বিষয়ে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে বলেন, “একজন সাংবাদিককে হুমকি-ধমকির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাননিউজ/আরপি