রাতের আঁধারে মুন্সীগঞ্জ সদরের মীরকাদিমে ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী চরের মাটি চুরি করে নিচ্ছে একটি চক্র। সদর উপজেলার মীরকাদিম পৌরসভার সুধারচর এলাকা সংলগ্ন নদীর মাটি চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চরের মাটি চুরিতে যেন এক মহোৎসবে মেতে উঠেছে চক্রটি। শ্রমিকরা প্রথমে চরের জমি থেকে মাটি কেটে ট্রলারভর্তি করে, পরে সেই মাটি চলে যায় বিভিন্ন ইটভাটায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মীরকাদিম পৌরসভার এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে চক্রটি মাটি চুরি করে আসছে। মীরকাদিম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে চক্রে রয়েছে দলীয় কর্মী মুরাদ, আজাদ সুলতান ও কালু। মাটি চুরির তদারকি করে থাকে বিএনপি নেতার ভাতিজা মো. রাব্বানী।
তারা আরও জানান, প্রতিদিন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১০-১২ জন শ্রমিক মাটি কাটায় ব্যস্ত থাকেন। তাদের কোদালের একেক আঁচড়ে উঠে আসে চরের জমির মাটি। ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে নদী-সিকস্তি ওই চরের জমি। এরই ফাঁকে সেখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটিও কেটে নেওয়া হচ্ছে। রাত পোহানোর আগেই ভোর ৪টার দিকে মাটি কাটা শেষে সরে পড়ে চক্রটি। প্রভাবশালী এই চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কথা বলতে সাহস পান না।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গত ১৫ দিন ধরে ওই চক্রটি মাটি চুরি করছে। চরের প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে মাটি কাটার চিত্র দেখা গেছে। একেক রাতে অন্তত ১০ ট্রলার মাটি চুরি হচ্ছে। চক্রটি ইটভাটায় একেকটি ট্রলারের মাটি বিক্রি করছে কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে প্রতিরাতে প্রায় ২ লাখ টাকার মাটি লোপাট হচ্ছে।
সেখানে দেখা গেছে, চরের ওই জমিতে হাইভোল্টেজের ৩৩ কেভির ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির চারপাশ থেকে ৪-৫ ফুট গভীরতায় মাটি কেটে নেওয়ায় তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ সময় মাটি কাটার একটি ভিডিও সংবাদকর্মীদের হাতে আসে। সেখানে মাটি কাটার শ্রমিক শান্ত মিয়ার বক্তব্যে শোনা যায়, “আমি মাটি কাটার শ্রমিক। মাটি কাটতে পাঠিয়েছে রাব্বানী। রাব্বানীর সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত আছে। দুই নৌকা মাটিভর্তি করে চলে গেছে, আরও দুইটি নৌকা ভর্তি করা হচ্ছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুধারচর এলাকার কয়েকজন জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলেও এ চরের নদী-সিকস্তি ও কৃষকের ফসলি জমি থেকে মাটি চুরি করা হতো। গত বছরের ৫ আগস্ট ওই সরকারের পতনের পর সেখানে মাটি কাটা বন্ধ থাকে। তবে সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ফের মাটি চুরিতে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী চক্র।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাটি চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন মীরকাদিম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক। তিনি উল্টো মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে বলেন, “মাটি কাটার সঙ্গে আজাদ সুলতান, মুরাদ ও কালু জড়িত। স্থানীয়রা আমার ভাতিজা রাব্বানীকে ফাঁসাতে শান্ত নামে একজনকে ধরে মিথ্যা ভিডিও বানিয়েছে।”
তবে অভিযুক্ত আজাদ সুলতান দাবি করেন, বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক ও তার ভাতিজা রাব্বানী মাটি চুরিতে জড়িত। তিনি বলেন, “এ বছর আমি মাটি কাটছি না। গত বছর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে আমি মাটি কেটেছিলাম।”
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজানা আক্তার বলেন, “ইতিমধ্যে মাটি কাটার বিষয়টি আমরা জেনেছি। শুধু এখন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই মাটি কাটা হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাবো। তারা যে নির্দেশনা দেবেন, তা বাস্তবায়ন করা হবে।”
সাননিউজ/আরপি