মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সাংবাদিক ও পুলিশ ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুর করে নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা-ভাংচুর
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জুবায়ের।
বুধবার (১৫ মে) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জুবায়ের বলেন, নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকারের আদেশে মনিরুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা-ভাংচুর
এর আগে গত ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু, তার ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হন।
এ সময় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তার ভাতিজা তানভীর ও তাদের লোকজন।
ওই ঘটনা পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক গোলজার হোসেন। পরে তারা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তার মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে তাকে মারধর করতে থাকেন।
আরও পড়ুন: বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে শনিবার
পরে অন্য সাংবাদিকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নিলে সেখানে তাদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক, তার ভাই ইকবাল হকসহ তাদের লোকজন। তখন সাংবাদিকদের হত্যা ও হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা।
একই দিন হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাঁধা দিলে ককটেল ফাটিয়ে তাদের ওপর অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় মনিরুল হকরা। এ সময় পুলিশের ২ সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়।
সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। পরদিন পুলিশ ও সাংবাদিক গোলজার হোসেন আলাদাভাবে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করে। এ দুটি মামলায় ২১৮ জনকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে আগুন
এর জেরে গত শনিবার (১১ মে) রাত ৯ টার দিকে ঢাকার শাহজাহানপুরের একটি বাড়ি থেকে মনিরুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার (১২ মে) দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম।
পরে শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন গজারিয়ার আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তার।
এদিকে পুলিশ ও সাংবাদিকের দুই মামলায় শুধু ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারায় এবং ইকবাল হককে আইনের আওতায় না আনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মুন্সীগঞ্জের সংবাদকর্মীরা।
আরও পড়ুন: দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ৫২ নেতা বহিষ্কার
তাদের দাবি, ইকবাল হক একজন সরকারি কর্মকর্তা। তবে তিনি ও তার ভাই-বোনেরা প্রতিটি নির্বাচনে তাদের এলাকার কেন্দ্রগুলো দখল করে জাল ভোট দেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না? গত ইউপি নির্বাচনের সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়েন ইকবাল হক।
সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় কোন রকম ব্যবস্থা ছাড়াই বহাল তবিয়তে থাকেন তিনি৷ এবার উপজেলা নির্বাচনের ঘটনায় তাকে আসমি করা ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, পুলিশ-সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
সান নিউজ/এনজে
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            