শিল্প ও সাহিত্য
মোর নয়া মিয়া আর ফিরি আসপে না

বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে দেলওয়ার হোসেনের বই

আমিরুল হক, নীলফামারী: ৩৩ বছর ধরে সুইডেনে বসবাস করছেন নিভৃতচারী সাংবাদিক ও লেখক দেলওয়ার হোসেন। আশির দশকের প্রারম্ভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরুর সময় থেকেই যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। শেষাবধি সাংবাদিকতাকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন। প্রবাস জীবনেও সক্রিয় থেকেছেন এই পেশায়।

আরও পড়ুন: আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল

এ বছর একুশের বই মেলায় তিনি বের করলেন তার প্রথম বই সন্তানহারা এক মায়ের আত্মাহুতি -‘মোর নয়া মিয়া আর ফিরি আসপে না’।

৭১-এ সৈয়দপুরে শহীদ বাবার সন্তান দেলওয়ার হোসেন তার পরিবারের আত্মত্যাগের বিয়োগান্তক পরিণতিকে উপজীব্য করে তার বইয়ে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের দালিলিক ক্যানভাস তাঁর বাবা ডা. এম এ আজিজ সরকার ওরফে নয়া মিয়ার দুর্দমনীয় স্বাধীকার চেতনার কথা তুলে ধরেছেন তার বইতে। লেখক দেলওয়ার হোসেন একাত্তরে তার বাবার আত্ম ত্যাগের কথা লিখতে গিয়ে তাঁর মা হামিদা বেগম ও দাদী আছিয়া বেগমের মর্মান্তিক পরিণতিকে যেভাবে তুলে ধরেছেন- সেই মর্মস্পর্শী বর্ণনা পড়তে গিয়ে পাঠক তীব্র বেদনার আঘাতে হবেন ক্ষত-বিক্ষত ।

পরিবারের বড় সন্তানকে হারানোর পর শোকে পাথর হওয়া দাদীর বিশ্বাস ছিল, তার সন্তান একদিন ফিরে আসবেই। দীর্ঘ দশটি বছর অধীর প্রতীক্ষার পর যখন বুঝলেন মিথ্যে আশা মরীচিকা। বুকের মানিক নয়া মিয়া আর ফিরে আসবে না, তাই অপেক্ষা করে আর কী লাভ, আর কেনই বা বেঁচে থাকা। সে কথাই তিনি জানান দিয়ে যান আত্মাহুতির একদিন আগে। মোর নয়া মিয়া আর ফিরি আসপে না, মুই আর বাঁচি থাকি কি করিম। দাদীর এই মর্মন্তুদ আহাজারি থেকেই করেছেন বইটির নামকরন।

লেখক তাঁর বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, বিখ্যাত ব্যক্তিরা আত্মজীবনী লেখেন। আমি বিখ্যাত নই। তাই নিজেকে নিয়ে লেখারও কিছু নেই। লেখার কিছু থাকলেও বা মানুষ তা পড়বে কেন- আমার মতো অচেনা অখ্যাত কারো লেখা। এখানে লেখার বিষয়বস্তু আমি নই। আমার বাবা। তিনি বিখ্যাত কোন ব্যক্তি নন। তিনি আমার মতই অতি সাধারণ। তবে সাধারণ হলেও একটি বিশেষ ক্ষেত্রে আমার বিবেচনায় তিনি অসাধারণ। শুধু মানুষহিসেবে নয়, তিনি অসাধারণ তার কর্মেও।

বিশেষ ক্ষেত্রে তার সেই অনন্য কর্মকান্ড ও ভূমিকার বিষয়ে ভাবতে ভাবতে স্বাধীনতার ৫০টি বছর কেটে গেছে। দীর্ঘ এই ৫০টি বছরে আমি আমার প্রতিদিনের নিঃশ্বাসে তাকে স্মরণ করেছি। তার মত কত অখ্যাত মানুষের সততা, মানবিকতা, দেশপ্রেম, বীরত্ব গাঁথার কথা নিরব মৃত্যুর সাথেই মুছে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদেরকে নিয়ে লেখার দায়বদ্ধ মানুষের সংখ্যা বা স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ দেখা যায় কতজনে ভেতর? সেই নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটায় সমাজ অনেক পিছিয়ে। তাই সমাজের সংশ্লিষ্টদের দায় না থাকলে, নিজের কথা নিজেকেই বলতে হয়।

লেখক তাঁর বাবার কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন সারা বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের মহিমান্বিত আত্মত্যাগের কথা। প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে একই মলাটে তিনি বন্দি করেছেন স্বাধীনতার অজস্র দলিল ও ঘটনার কথা। বইয়ে দাদীর কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন-আব্বাকে হারানোর সংবাদ শোনার পর থেকে তিনি একটি রাতও ঘুমাননি। খাটের উপর বসেননি। মাটির ঘরের মেঝেতে খড় বিছিয়ে তার ওপর কাঁথা পেতে শুয়েছেন। তিন বেলার আহার বাদ দিয়ে বারো মাস রোজা রেখেছেন সন্তানের ফিরে আসার প্রার্থনায়। একদিনও একটু ভাল খাবার মুখে দেননি। শুধু পানি আর জোর পূর্বক এক গ্লাস দুধ পান করে অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় দশটি বছর বেঁচে ছিলেন।

লেখক লিখেছেন, আমাদের পরম প্রিয় দাদীর সান্তনা নিয়ে বেঁচে থাকার মত কিছুই ছিল না। বুকের মানিক তার হারিয়ে গেছে। জীবনটা যেন তার হয়ে উঠেছিল এক দুর্বহ শোকের পাথারে পরিণত। এখানে কেউ হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। দাদী সেই বোধ শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছিলেন প্রায় দশটি বছর অধীর অপেক্ষায় দিন গুণে। শোকের ভারে কাতর দাদীর যখন শরীর-মনের ভগ্ন দশা তখন একদিন হঠাৎ স্বপ্নে তিনি আব্বার দেখা পেলেন, আব্বা দাদীকে বলছেন, মা তুমি ঘুমাও না কেন? আর কতকাল তুমি আমার জন্য উপোস করে নির্ঘুম রাত কাটাবে মা? আমিতো আর ফিরে আসবো না মা। এখন তুমি ঘুমাও।

আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে ২৯ তিমির মৃত্যু

এই স্বপ্নটি দেখার পর দাদী বুঝলেন তার বুকের মানিক নয়া মিয়া আর ফিরে আসবে না। মিথ্যে আশা মরীচিকা বুঝে মৃত্যুর আগের দিন দাদী আমার সেঝো চাচীকে ডেকে এই স্বপ্নের কথা বর্ণনা করে বলেন, শোনো সাজুর মা, আমার মানিক-মোর নয়া মিয়া আর ফিরি আসপে না। তাই- মুই আর বাঁচি থাকি কী করিম? এই শেষ কথাটি বলে পরদিন ভোর বেলায় কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। দাদীর তখন বয়স ছিল ৯০ বছর।

এই বইতে আরও পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও উত্তরকালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। বইয়ের পটভূমি সৈয়দপুরের মুক্তিযুদ্ধ’ হলেও লেখক একাত্তরের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন সারা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অনবদ্য ও সচিত্র প্রতিবেদন।

একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে ছায়াবীথি প্রকাশনী। বইটির মূল্য ৬০০ টাকা। এছাড়াও ’রকমারী ডট কম’-এর মাধ্যমে অনলাইনেও রয়েছে বইটি।

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নীরব প্রশাসন; ফুঁসছে জনগন!

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জারিকারক লুৎফা আক্তার (৪৫)...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

ছাত্রলীগ সভাপতির বসতঘরে আগুন

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বাপ্পির...

রামগড়ে অবৈধ ইন্টারনেট সরঞ্জামসহ তিনজন আটক

খাগড়াছড়ির রামগড়ে খান কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলার একটি কক্ষ থেকে অবৈধ ইন্টারনেট...

আজ সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর, ১৮ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উপকূলবাসী

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর—দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত। ভয়...

মধুখালীতে ৬৫ পিস ইয়াবাসহ আটক যুবক

ফরিদপুরের মধুখালীর কুখ্যাত ডাকাত ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি মোঃ রানা (২৬) কে...

হাতের অপারেশন করাতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর প্রাইম হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় রাবেয়া বেগম (৪৮) নামে...

মাদারীপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য আটক

মাদারীপুর সরকারি কলেজের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সো...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

লকডাউনের আজাহার দিনে বিএনপি, রাতে আ. লীগ

মাদারীপুরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বরের লকডাউন স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা