নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ দিলেও তা আদায়ে খুবই ধীরগতি তাদের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১২ লাখ ১৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এ খেলাপি ঋণের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ছয় ব্যাংকের।
বিপুল অংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ছয় ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে একটি সভা হয়। সভায় ঋণ আদায়ের শ্লথগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
খেলাপি ঋণের শীর্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটিকে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই মাসে ব্যাংকটি মাত্র পাঁচ কোটি ৫১ লাখ টাকা আদায় করতে পেরেছে।
আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ ১৩ হাজার ৭৭২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিলো ১০ হাজার কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংককে ৪৫০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা আদায় করে। আগস্টের শেষে সোনালির মোট খেলাপি ঋণ ছিলো ১০ হাজার ৩৯৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
অগ্রণী ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় করেছে ৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ ৭ হাজার কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ আদায়ে কিছুটা এগিয়ে রূপালী ব্যাংক। এ সময় ব্যাংকটি আদায় করে ৭৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা টাকা। ব্যাংকটিকে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ১৪০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।
বিডিবিএল ব্যাংক ৪০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে একই সময়ে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা আদায় করে। আগস্টের শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ ছিলো ৬৩০ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংক ১২৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে একই সময়ে ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা আদায় করে। আগস্টের শেষে বেসিকের মোট খেলাপি ঋণ ছিলো ৭ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭৫০০ কোটি টাকা।
তবে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার অপরিবর্তিত রয়েছে সোনালী, অগ্রণী, রূপালী এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)।
গত অর্থবছরের মতই ২০২১-২২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা এবং বিডিবিএলের সাতশ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
খেলাপি ঋণ আদায়ে লক্ষ্য পূরণ করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা ভালো ছিলো না। এজন্য অনেকে ঋণ সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু নতুন করে খেলাপি নেই। আমাদের এক সময় মোট ঋণের ৩৯ শতাংশ খেলাপি ছিলো। এটি এখন ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। সামনের দিনে খেলাপি ঋণ আরও কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জোর দিচ্ছেন শাস্তির ব্যবস্থা করার ওপর। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যাংকগুলোকে কোনো প্রণোদনা বা শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। ফলে কোনো সুবিধাতেই খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হয়নি। দিন দিন এটা বাড়ছে। এতে ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি দুর্বল হবে।’
সান নিউজ/এফএআর
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            