বাণিজ্য

যেসব পরিবর্তন আসছে সঞ্চয়পত্রে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ এখন সঞ্চয়পত্র। নিশ্চিত ও সর্বোচ্চ মুনাফা হওয়াতে সঞ্চয়পত্র কেনায় ঝুঁকছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সাধারণ জনগণের কাছে সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিনিয়োগ হলেও মূলত সরকারের কাছে এটি ঋণ। তাতে সরকারকে বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে হয়।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির জন্য প্রতিবছর অর্থবছরের বাজেটে সরকার লক্ষ্য ঠিক করে দেয়। কিন্তু বেশি মুনাফা ও নিরাপদ বিনিয়োগ হওয়ায় প্রতিবছরই দেখা যায় লক্ষ্যের চেয়ে বিক্রির পরিমাণ অনেক অনেক বেশি হয়।

৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি।

এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সময় এর লাগাম টেনে ধরতে এবং সেখান থেকে সরকারের আয় বাড়ানোর জন্য গত কয়েক বছরে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে সরকার। দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবারের বাজেটে।

সঞ্চয় অধিদফতর সূত্র জানায়, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র মিলবে শুধু সঞ্চয় অধিদফতরে। চলতি বছরের ১৮ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে জানানো হয়, এখন থেকে তফসিলি ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।

তারা আরো জানায়, এখন যদি কোনো বিনিয়োগকারী পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে চান, তাহলে তাকে শুধু সঞ্চয় অধিদফতরের শাখা অফিসগুলোতে গিয়ে কিনতে হবে। বর্তমানে সারাদেশে ৭০টির বেশি এমন সঞ্চয় ব্যুরো আছে। ১৯৭৭ সালে এই সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর।

সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যমতে, নতুন নিয়মে একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। গ্রাহক পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

গত ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বিদ্যমান নীতিমালায় যা-ই থাকুক না কেন, তিনটি স্কিম মিলে একক নামে ৫০ লাখ অথবা যৌথ নামে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে।

সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যমতে, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে কর দিতে হয় ৫ শতাংশ। এর বেশি সঞ্চয়পত্র থাকলে উৎসে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এছাড়া এখন সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে অবশ্যই ব্যাংক হিসাব লাগে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা এবং মেয়াদ শেষে বিনিয়োগের মূল টাকা সংশ্লিষ্ট ক্রেতার ব্যাংক হিসাবে সরাসরি চলে যায়।

১. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র।

২. তিন মাস অন্তর মুনাফা-ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র।

৩. পরিবার সঞ্চয়পত্র ও

৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

বর্তমানে দেশে এই চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিদ্যমান রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সব শ্রেণী ও পেশার নাগরিক ক্রয় করতে পারবেন।

পরিবার সঞ্চয়পত্র সবার জন্য নয়। ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী যেকোনো নারী এটি কিনতে পারবেন। তবে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী পুরুষ কিংবা যেসব পুরুষের বয়স ৬৫ বছর এবং তার চেয়ে বেশি তারা কিনতে পারবেন পরিবার সঞ্চয়পত্র।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রও সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা এটি ক্রয় করতে পারবেন।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে’র পর থেকে এ হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

সান নিউজ/ এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা