বাণিজ্য

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন পর বাজারে সবজি, পেঁয়াজ, মুরগি ও ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করলেও নিঃশব্দে বেড়েই চলেছে ভোজ্যতেলের দাম। গত এক মাসের ব্যবধানেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতিলিটারে ১০ থেকে ১১ টাকা বেড়ে গেছে। এতে ভোজ্যতেল কিনতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন ভোক্তারা। রেহাই পাচ্ছে না নিম্নআয়ের মানুষও। কারণ খুচরা পাম তেলের দামও বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথমে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল এবং পরে বোতলজাত তেলের দাম বেড়েছে। বিগত এক মাসেই বোতলজাত তেলের দাম তিন দফায় বেড়েছে। বাজারে এখন এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। অন্যদিকে অল্প অল্প করে কয়েক দফায় বেড়েছে খুচরা ও পাম তেলের দাম। ভালো মানের খুচরা তেলের দাম এখন ১১০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে এবং পাম তেল পাওয়া যাচ্ছে ৯৮ টাকা কেজি দরে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী ঢাকা জেনারেল স্টোরের মালিক মো. মুজাহীদ বলেন, মাসখানেক আগে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল পাওয়া গেছে ৪৬০ থেকে ৫১৫ টাকার মধ্যে। এখন তা দাম বেড়ে পাওয়া যাচ্ছে ৫১০ থেকে ৫৭০ টাকা পর্যন্ত। দাম বেশি হওয়ায় রূপচাঁদা, তীরের মতো বেশি দামের তেল বিক্রি করাই বন্ধ করে দিয়েছি। এ দাম শুনলে ক্রেতারা রেগে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে বসুন্ধরা, ফ্রেশ, পুষ্টির মতো তুলনামূলক কম দামের তেল বিক্রি করছি কেবল।

মুজাহীদ জানান, বসুন্ধরা ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫১০ থেকে ৫১৫ টাকা। সপ্তাহখানেক আগেও যা বিক্রি হয় ৪৮০ টাকায়। এক মাস আগে দাম ছিল ৪৬০ টাকা। অন্যদিকে ফ্রেশের পাঁচ লিটার এখন ৫২৫ থেকে ৫৩০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও পাওয়া গেছে ৪৮০ টাকায়।

একই বাজারের অন্য ব্যবসায়ী বিউটি স্টোরের মালিক মো. জাকির বলেন, তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটার তেলের কার্টন (৪ বোতল) আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। তিন দিন আগেও যা কিনেছি ২ হাজার টাকায়। মাসখানেক আগে কিনতে পেরেছি ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কোম্পানি থেকে জানিয়েছে আগামীতে আরও বাড়তে যাচ্ছে দাম।

হাতিরপুল বাজারের খুচরা মুদি দোকানদার সিরাজ মিয়া বলেন, রূপচাঁদার ৫ লিটারের বোতল এখন ৫৫০ টাকায় বিক্রি করছি। সোবারও কোম্পানি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে ১৪ লাখ টন। এর ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। মোট আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশই সয়াবিন তেল।

দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে সয়াবিন তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ফলে দেশের বাজারেও তেলের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া তেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) তিন স্তরের হওয়ার কারণে তেলের আমদানি মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাটের চাপও বেশি পড়ছে বলে দাবি করছেন কোম্পানিগুলো।

শুধু তাই নয়, গত ১৫ নভেম্বর সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেয় বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন।

ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ৭০০ ডলার থেকে বেড়ে এখন ১ হাজার ৪১ ডলারে পৌঁছেছে। তার সঙ্গে আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর তিন স্তরের হওয়ায় আমদানি খরচও বেড়েছে। তাই দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে।

ভোজ্যতেলের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি আরও সহজতর করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা করুণ।তাই অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাটে ক্ষেত্রে রেয়াত সুবিধা দিতে পারে সরকার।

সেই সঙ্গে ভোক্তারা যেন এর সুফল ভোগ করতে পারে সেদিকেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে সরকারকে। এদিকে খুচরা তেলও অনেক আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের ভোজ্যতেল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী নাজমুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ৪ মাস ধরেই খোলা তেলের দাম একটু একটু করে বাড়ছে। বর্তমানে খোলা সয়াবিন বিক্রি করছি ১০৮ থেকে ১১০ টাকা কেজি।

কিছুদিন আগেও ছিল ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা। অপরদিকে প্রতিকেজি পাম তেল বিক্রি করছি ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা। এক মাস আগে যা বিক্রি করেছি ৯০ থেকে ৯১ টাকা এবং তার আগে ছিল ৮৫ টাকা। একই বাজারের আরেক খুচরা বিক্রেতা ইহান ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মো. ওসমান বলেন, ভালো মানের খোলা তেলের ড্রাম (১৮৫-১৮৬ কেজি) এখন কিনতে হচ্ছে ১৯ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে।

এক মাস আগে যা কিনেছি ১৮ হাজার ৮০০ টাকায়। অপরদিকে পাম তেলের প্রতিড্রাম (১৮৫-১৮৬ কেজি) বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১৭ হাজার ৪০০ টাকায়। কিছুদিন আগেও যা কিনেছি ১৭ হাজার ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও গত বছর এ সময়ে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকায়। একইভাবে খোলা পাম সুপার তেলের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৬ টাকা দরে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা