সান নিউজ ডেস্ক : সীমান্তে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে অবশেষে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার সরকার।
আরও পড়ুন : ঢাকায় কেনেডি জুনিয়র
রোববার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাথে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ বলেন, ‘গত আড়াই মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তের এ পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিল। একাধিকবার বিজিপির কাছে চিঠি পাঠানোও হয়েছে। এর কারণে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে।’
তবে পতাকা বৈঠকে সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার তথ্য জানালেও এতে আরও কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে এবং দু’দেশের কতজন সদস্য অংশ নেবেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ তা বিস্তারিত জানাননি।
সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বিজিবি কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন : জঙ্গি দমনে সফলতা পেয়েছি
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সীমান্তে চলতি বছরের আগস্ট মাসে উত্তেজনার রেশ শুরু হয়। প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে দেশটির অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ শুরু হয়।
গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। তবে বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি।
গত ৩ সেপ্টেম্বর, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরও দুটি মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে। একই দিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন : রাজধানীতে শিতের আগমন
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলিও ধারাবাহিকভাবে চলে। এর মধ্যে ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে আরও কয়েকটি মর্টার শেল। যার মধ্যে শূন্যরেখায় মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় এক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আহত হন আরও ছয়জন।
ফলে সীমান্তের বাসিন্দারা অনেকেই বসতি ছেড়ে আশ্রয় নেন স্বজনদের বাড়িতে। সীমান্তে এমন কর্মকাণ্ডে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফায় কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ বন্ধ হতেই নতুন করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে শুরু হয় একই পরিস্থিতি। তারপর নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয় টেকনাফ সীমান্তে। এভাবে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে চলতে থাকে গোলাবর্ষণের ঘটনা।
আরও পড়ুন : ‘জেলহত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি
চলতি মাসের ১০ অক্টোবর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ পরিস্থিতি দেখতে সীমান্তে আসেন। তিনি সীমান্ত পরিদর্শনের পাশাপাশি দেখেন বিজিবি কার্যক্রম।
বিজিবি মহাপরিচালক ওই সময় সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবাদলিপি পাঠানোর পাশাপাশি বিজিপির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
বিজিবির মহাপরিচালক আরও জানান, সময় নির্ধারণ না হলেও পতাকা বৈঠকে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার।
আরও পড়ুন : জুয়া খেলেই শত কোটি টাকার মালিক!
তারপর চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা। যা দু’দিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকে। তবে এরপর থেকে গোলাগুলির শব্দ আর শোনা যায়নি।
এর মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সঙ্ঘাতে সীমান্তে উত্তেজনার কারণে অবশেষে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে সম্মত হয় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
পতাকা বৈঠকের জন্য রোববার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের টেকনাফে আসবেন বলে জানা যায়।
সান নিউজ/এইচএন