নিজস্ব প্রতিবেদক: এরিকো নাকানো ও ইমরান শরীফ দম্পতি আদালতের নির্দেশে গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় আছেন। তারা ১৫ দিনের জন্য দুই সন্তানসহ এই বাসায় উঠেছেন। দীর্ঘদিন পর আবারও সন্তানদের নিয়ে এক বাসায় এই দম্পতি। তারা কেমন আছেন, এ বিষয়ে জানিয়েছেন দুই পক্ষের আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) ইমরান শরীফের পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম জানান, সন্তানদের নিয়ে এরিকো ও ইমরান আপাতত ভালো আছেন। এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির জানান, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই সন্তান নিয়ে এরিকো ও ইমরান বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাদের বাসায় পৌঁছান। আদালতের নির্দেশে এরিকো একজন দোভাষী পেয়েছেন। তিনিও গুলশানের ওই বাসায় আছেন। তা ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পুলিশ সদস্যরা পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন।
ইমরান শরীফ জানান, তারা একসঙ্গে থাকলেও প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় আছেন। সন্তানদের জিম্মা নিয়ে সমঝোতামূলক কোনো আলাপ-আলোচনাই হয়নি এখনো। টুকটাক যা কথাবার্তা হচ্ছে, সবই সাংসারিক। বাসায় সারাক্ষণ পুলিশ সদস্যরা আছেন।
তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা (পুলিশ বাসায় থাকা) বরং ভালো। কারণ, ৩১ আগস্ট এরিকো নাকানোর আইনজীবী আদালতকে বলেছিলেন, এক বাসায় থাকলে পারিবারিক সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ হাজির থাকলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ ওঠার আশঙ্কা কম। তা ছাড়া তিনি নিজেও একটি শক্তিশালী ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগিয়েছেন। তিনি কোনো অন্যায়ের দায় নিতে চান না।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট শিশুসহ তার বাবা ও ফুফুকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। আদেশ অনুযায়ী দুই মেয়েসহ তাদের মা-বাবা এবং ফুফু আজ হাইকোর্টে উপস্থিত হন। এরপর দুপক্ষের আইনজীবীর শুনানি শুরু হয়। একপর্যায়ে আইনজীবীসহ দুই মেয়ে এবং তাদের মা-বাবা ও ফুফুকে খাস কামরায় ডেকে সবার বক্তব্য শোনেন আদালত।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে শরীফ ইমরান দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।
তিনি ১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যাশিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেন। রিটে দুই কন্যাশিশুকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান তিনি। এর প্রেক্ষিতে আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে আগামী ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা আগামী ৩০ দিন বিদেশ যেতে পারবেন না বলেও নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।
এরপর দুই মেয়েকে বাবার হেফাজত থেকে সিআইডি উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে। বিষয়টি গত ২৩ আগস্ট মেয়েদের বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চের নজরে আনেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখার নির্দেশ দেন।
সাননিউজ/এমআর