ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করেন। অনেকে টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পেতে মোটা অংকের টাকা লেনদেনও করেন।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা সোচ্চার
তবে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত মনোনয়ন পেতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় (৬৩)। তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খুইয়েছেন।
অবশেষে প্রতারিত টাকা আদায়ে ডিবির হেড কোয়ার্টারে অভিযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে ডিবি পুলিশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেছে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. হারুন অর রশিদ।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার থেকে ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ
গ্রেফতাররা হলেন- নুরুল হাকিম (৩১), হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) ও মো. হারুন অর রশিদ (২৯)।
জানা গেছে, মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপক কুমারকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা (এনএসআই) পরিচয়ে ফোন করে প্রতারক চক্রের সদস্য হারুন অর রশিদ।
সে ফোনে জানান, আমি সংস্থার ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছি। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছি।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের যৌথসভা কাল
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি কয়েকজনকে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছি। আসন্ন ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিমধ্যে কয়েক জনের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত করছি।
আওয়ামী লীগ নেতাকে ওই প্রতারক আরও বলে, আপনার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এ জন্য ৫০ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে।
এরপর দলের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার কন্যার পরিচয়ে এক নারী কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। এভাবে মনোনয়ন পেতে প্রতারণার ফাঁদে পড়েন দীপক কুমার রায়।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি পালন
পরে গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে সেখানে তার নাম না পেয়ে দীপক কুমার হতবিহবল হয়ে পড়েন। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে টাকা আদায়ের জন্য ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার মন্ডলাদাম গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্য হারুন অর রশিদসহ ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর সম্পদের তথ্য গোপন করলেন প্রার্থী
পরে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অভিযানে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: ৪ পরীক্ষার্থীর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর গ্রেফতার আসামি নুরুল হাকিম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এক সচিব ও অপর আসামি হাসানুল ইসলাম জিসান নিজেকে অপর এক সচিবের একান্ত সচিব এবং হারুন অর রশিদ নিজেকে এনএসআইয়ের ডিডি পরিচয় ব্যবহার করে দিয়ে ৩ টি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন পাইয়ে দিবে বলে ফোন করে।
এজন্য তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিতেও বলা হয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে যারা আমাদের কাছে অভিযোগের মাধ্যমে জানিয়েছেন, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
সান নিউজ/এনজে