আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আম্মা আর নেই।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টেও তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। পাশাপাশি দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত শোকবার্তায় বলা হয়, ফজরের নামাজের পর সকাল ছয়টায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। তার রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়।
তাঁর এই মৃত্যুতে দেশের সব রাজনৈতিক দলসহ দেশের সব স্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র। খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে একটি শোকবার্তা পোস্ট করা হয়। একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া শোকবার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জননেত্রী শেখ হাসিনার শোক
------
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে এবং বিএনপি নেতৃত্বের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমি বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আমি তাঁর ছেলে তারেক রহমান ও পরিবারের অন্যান্য শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
আশা করছি মহান আল্লাহ তার পরিবারের সদস্যদের এবং বিএনপির সবাইকে এই শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পোস্টটিও হুবহু তুলে ধরা হলো:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে, যখন সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন এবং দেশকে অস্থিতিশীল ও বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টা চলছে, তখন তাঁর এই চলে যাওয়া বাংলাদেশের উত্তরণের পথে এক গভীর প্রভাব ফেলবে।
অতীতের নানা বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার শিকার হওয়া সত্ত্বেও, নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অসংখ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এবং দেশের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করেছেন। জাতি গঠনে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে; তবে তাঁর মৃত্যু বর্তমানে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় একটি বড় ধাক্কা।
তাঁর অসংখ্য সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি রইল আন্তরিক সমবেদনা।
আওয়ামী লীগ ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারণ, অতীতে এই আওয়ামী লীগই খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জেল-জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানির করেছিলো। এমনকি গুম ও হত্যাকাণ্ডের মতো কর্মকাণ্ডের অভিযোগও দীর্ঘদিন ধরে উঠে এসেছিলো।
আওয়ামী লীগ ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সের কিছু স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনিসহ নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ থাকলেও শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
সাননিউজ/আরআরপি