ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অশান্তি তীব্র হচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন নেতারা ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অন্তত ২০টি আসনে এই ধরনের বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা দিতে পারে। মনোনয়ন বিতর্ক শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
মনোনয়ন না পাওয়ায় অর্ধশতাধিক আসনে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত এবং নিহতের ঘটনা ঘটেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এমন পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করতে ব্যর্থ হলে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট ভাগাভাগি ঘটাতে পারে।
মুখ্য আসনগুলোতে পরিস্থিতি:
মাগুরা-২ (শালিখা-মহম্মদপুর):
মনোনীত: কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী
স্বতন্ত্র: জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামাল
অবস্থা: স্থানীয় বিএনপি বিভক্ত; সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতারা কামালের পক্ষে।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া):
মনোনীত: ফারজানা শারমিন পুতুল
স্বতন্ত্র: কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু
অভিযোগ: প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাকর্মীকে অবহেলা করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ):
মনোনীত: এম কয়ছর আহমদ
স্বতন্ত্র: জেলা বিএনপি সাবেক সহসভাপতি ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন
অবস্থা: জনগণের চাপ ও নেতাকর্মীর সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের ঘোষণা।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া):
মনোনীত: উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক
স্বতন্ত্র: সাবেক এমপি প্রয়াত শামছ উদ্দিন আহমদের ছেলে তানভির আহমেদ রানা
সম্পর্ক: দুজন চাচাত ভাই; স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোষণা বিতর্কের কারণ।
জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ):
মনোনীত: কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত
স্বতন্ত্র: সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার
কারণ: স্থানীয় জনপ্রিয়তা ও এলাকার মানুষদের সমর্থন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড):
মনোনীত: সালাউদ্দিন
স্বতন্ত্র: চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী (স্বতন্ত্রে নামার সম্ভাবনা)
অভিযোগ: দীর্ঘদিন দলকে নিয়ন্ত্রণ ও ত্যাগী ভূমিকার কারণে সমর্থকের চাপ।
পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর):
মনোনীত: কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন
স্বতন্ত্র: সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কেএম আনোয়ারুল ইসলাম বা তাঁর ভাতিজা হীরার মধ্যে একজন
অবস্থা: প্রার্থী বদলের দাবিতে আন্দোলন।
সুনামগঞ্জ-৫ (দোয়ারাবাজার-ছাতক):
মনোনীত: সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন
স্বতন্ত্র: সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী (২০১৮ সালের প্রার্থী)
কারণ: বিতর্কিত ভূমিকা ও সমর্থকের চাপ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর):
মনোনীত: উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হান্নান
স্বতন্ত্র: আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপি সহসভাপতি কামরুজ্জামান মামুন
অবস্থা: স্থানীয় নেতাকর্মীর চাপ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর):
মনোনয়ন সিদ্ধান্ত: ঘোষণা হয়নি
সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী: রুমিন ফারহানার অনুসারী নেতাকর্মীরা
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা):
সম্ভাব্য প্রার্থী: সমমনা দল গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর
অবস্থা: স্থানীয় বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল):
মনোনীত: সাবেক ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির
স্বতন্ত্র: সাবেক এমপি ও মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ):
মনোনীত: লায়ন হারুনুর রশিদ
স্বতন্ত্র: উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ হান্নান
অবস্থা: সমর্থকের চাপ ও মনোনয়নবিরোধী আন্দোলন।
অন্যান্য আলোচিত আসন: চট্টগ্রাম-১২ ও ১৩, কুষ্টিয়া-৪, সিলেট-৬, দিনাজপুর-২, নেত্রকোনা-৫
অবস্থা: মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও সমাধান আনতে ব্যর্থ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলে একজনকে বেছে নিতে হয়; বাকিদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, মনোনয়ন তালিকা সম্ভাব্য; যেকোনো সময় পরিবর্তন আনতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট ভাগাভাগি ঘটাতে পারে এবং দলের একক প্রার্থীর সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। দলীয় ঐক্য ও মাঠের বিরোধ দ্রুত সমাধান করা না হলে বিএনপি নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
সাননিউজ/এও