ছবি : সংগৃহীত
মতামত

উপাচার্য রাজ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: ছবিটা আসলে ক্ষমতার গল্পই বলে। শিক্ষার্থীদের পেটানো হচ্ছে, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে কানের পর্দা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, তীব্র শীতে সারা রাত পড়ুয়ারা অনশন করছেন, কিন্তু উপাচার্য সাহেব সুরম্য অট্টালিকায় পুলিশ পাহারায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন।

পদ-পদবীর লোভ আর ক্ষমতা-র চরিত্রই এটা। সে তার সমস্ত অস্ত্র দিয়ে গলা টিপে ধরে ব্যক্তির, শ্বাস নেওয়ার মতো কোনও ফাঁক রাখে না। একজন উপাচার্য একজন শিক্ষকও। কিন্তু তিনিও পদ আকড়ে রাখতে তার হিংসাত্মক প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগ করে, পুলিশ দিয়ে, মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামতকে রুদ্ধ করেন, পরিবেশকে সন্ত্রস্ত করেন।

সিলেট শাবিপ্রবি-তে যা চলছে সেটা থামানো হোক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি আছে। তারা সতর্ক করুক, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলুক। সঙ্কীর্ণ রাজনীতি, বস্তাপচা নিয়মের নামে উপচার্য রাজের অবসান ঘটুক

ক্ষমতার এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ করেই চলেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। ক্ষমতা আছে, তাই পদ না থাকলেও অসংখ্য নিয়োগ দিতে পারেন, ঢাকায় বসে রিমোট কন্ট্রোলে রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারেন, টেন্ডার, নির্মাণ ব্যবসা সব আয়ত্তে রাখতে পারেন, নিজের বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে অশ্রাব্য কথা উচ্চারণ করতে পারেন যেমনটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে করেছের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ।

আক্রান্ত, অবহেলিত ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে ভয় পান অন্য শিক্ষকরাও। কারণ লড়াইটা নিজেদের শিক্ষার্থীদের পক্ষে যতটা না, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার বিরুদ্ধে। পদ-পদবী বা ক্ষমতার লোভে তারা লড়াকু ও মানবিক হতে পারেন না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি এমন এক জায়গায় গেছে যে, ক্যাম্পাস গণতন্ত্র ও মুক্তমনা হওয়ার যত গল্প যারা বলেন তারাই বারবার লঙ্ঘন করেন সব নিয়ম।

এ আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাস্তায় আছে এই শীতের মধ্যে। তাদের অভিযোগের সমাপ্তি না টেনে পেটানো, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া কেমন আচরণ সেটা সংবেদনশীল মানুষ মাত্রই বুঝতে পারছে। কিন্তু দেশে একটি সরকার যে আছে তারা কেন চুপ করে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপচার্যকে যিনি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই খড়্গহস্ত।

ছাত্র-ছাত্রীরা সমবেত ক্যাম্পাসে। গান গাইছেন, শ্লোগান দিচ্ছেন, বক্তৃতা করছেন। অবশেষে বুধবার রাতে আন্দোলনস্থলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষসহ প্রায় দুই শ শিক্ষক। উপাচার্য ভেবেছিলেন লাঠির জোরে সব সমাধান করবেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি। আলোচনা, যুক্তি-প্রতিযুক্তির ধার ধারেননি তিনি। বরং এখন তার মনোজগতে কতটা অশ্লীলতা আছে, সামন্ত ভাবনা আছে, কতটা কদর্য নারী বিদ্বেষ আছে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে তাকে আরও ভাল করে চিনিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রশ্ন করবে, অনিয়মের প্রতিবাদ করবে – এটাই স্বাভাবিক। এটুকু নিতে না পারলে কীসের শিক্ষক তারা? সমস্যা হলো একচ্ছত্র ক্ষমতা। রাজনৈতিক বিবেচানায় সাধারণ এক মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসিক পদে বসে গেলে আর কোন কিছুকে পাত্তা দিতে হয় না। এসব উপাচার্যরা যেন এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক। যা মন চায় করতে পারেন বা ক্ষমতা লোভে ক্যাম্পাস গুণ্ডাদেরও ব্যবহার করতে পারেন। অথচ একজন অভিভাবক হিসেবে তার কাজ ছিল পক্ষ বিপক্ষ মত শোনা। আর এভাবেই এদের কারণে পরমতসহিষ্ণুতার পাঠ হারিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে।

যারা আজ আন্দোলন করছেন সেটা করতে সাহস লাগে, নিজের বোধের প্রতি অনড় বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাদের বেদম পেটালেন উপাচার্য, বন্ধ ঘোষণা করলেন হল ও একাডেমিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু গণ-জমায়েত ও মিছিল বন্ধ করতে পারেননি। একটা হল নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত করেন ছাত্রীরা। উপাচার্য শক্তি প্রয়োগ করে দমাতে চেয়েছেন। অথচ তিনি ভাবতে পারেননি সেই হলোর প্রভোস্ট একজন শিক্ষক হলেও তার কর্মকাণ্ড প্রশ্নাতীত নয়, যেমনটা তার নিজের কাজ-কর্মও নয়।

সমস্যা হলো, শিক্ষকরা যে রাজনীতি করেন তার একমাত্র লক্ষ্য পদ-পদবী ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বজায় রাখা। শিক্ষা, শিক্ষকদের স্বার্থ, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ কখনও তাদের কাছে বিবেচ্য নয়। তারা যে প্রথা ও নিয়ম প্রতিটি ক্যাম্পাসে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর বৃত্তে দাঁড়িয়ে যুক্তিগ্রাহ্য রাজনৈতিক তত্ত্ব আশা করা বৃথা। তাদের এসব প্রথা আর নিয়মের সঙ্গে একমত না হলেই একজন অতি ভাল শিক্ষকও তুচ্ছ। পুরো সিস্টেমটি পরিণত হয়েছে একনায়করূপী মৌলবাদে।

সিলেট শাবিপ্রবি-তে যা চলছে সেটা থামানো হোক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি আছে। তারা সতর্ক করুক, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলুক। সঙ্কীর্ণ রাজনীতি, বস্তাপচা নিয়মের নামে উপচার্য রাজের অবসান ঘটুক। লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি।

সাননিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধ...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইরান ট্রাম্পকে হত্যা করতে চেয়েছিল, দাবি নেতানিয়াহুর

ইরানের শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাদের সবচেয়ে ব...

দেশ ছাড়ার ভাবনা গায়ক তাসরিফ খানের

জনপ্রিয় গায়ক, সমাজসেবক, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও কুঁড়েঘর ব্যান্ডের ভোকাল ত...

আজ সোমবার থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

গত কয়েকদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিপাতের আভাস পাওয়া গেছে। দেশের বেশিরভা...

ঈদযাত্রা ‘স্বস্তিদায়ক’ না হওয়ায় ‘দুর্ঘটনা ও হতাহত বেড়েছে’: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

উৎসব বা আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় নিরানন্দে পরিণত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তাই যথা...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

বাবাকে নিয়ে মন্দিরার পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবিতে অভিনয় করেছেন নবাগত...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা