আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে।
আরও পড়ুন: প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (২০ জুলাই) পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে তিনি দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটির সংসদে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জয় পেয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্পিকার। রনিল বিক্রমাসিংহে ১৩৪ সংসদ সদস্যের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় গণআন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রনিল। দেশটির আন্দোলনকারীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, রনিল বিক্রমাসিংহে আবারও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শান্ত হবে না। এমনকি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: লন্ডনে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রনিল বিক্রমাসিংহের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনার (এসএলপিপি) নেতা দুলাস আলহাপ্পেরুমে ৮২ ভোট এবং দেশটির বামপন্থী রাজনৈতিক দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকে মাত্র ৩ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে শ্রীলঙ্কায় ফের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আদেশ জারি করেন।
আরও পড়ুন: ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক গ্রেফতার
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জননিরাপত্তা নিশ্চিত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকানো এবং সরকারি জরুরি সেবা ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই আদেশ সমীচীন।’
জরুরি অবস্থা জারির মানে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া। জননিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ ও স্থাপনা রক্ষায় এই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন। এছাড়া ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে তল্লাশি চালানোর ও জনবিক্ষোভ দমনের ক্ষমতাও দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীর স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিল মেম্বার
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলতে কিছু নেই। ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না দক্ষিণ এশিয়ার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র।
এ পরিস্থিতিতে গত মার্চ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। আন্দোলনের চাপে গত মে মাসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। তারপর গত সপ্তাহে গোপনে দেশ থেকে পলায়ন করেন তার ছোটভাই ও শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার দেশ ত্যাগের পর থেকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ঋষি সুনাক
দেশ ছাড়ার পর ইমেইলে পদত্যাগ পত্র পাঠান গোতাবায়া। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছে। এখন দেশটির সংবিধান অনুযায়ী একটি সর্বদলীয় সরকার গঠিত হয়। আর সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।
সান নিউজ/কেএমএল