জহিরুল হক মিলন: ফেনীর নবী হোটেলেই মিলছে ভিন্ন স্বাদের মুখরোচক ইফতার। রোববার (৩ এপ্রিল ) রমজানের প্রথম দিন, দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসার আগেই ফেনী শহরের ট্রাংক রোড়স্থ নবী হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজের নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের ঘ্রাণে মনোযোগ আকৃষ্ট করে পথচারীদের।
আরও পড়ুন: ইমরানের ‘ভারত-প্রীতি’ নিয়ে মরিয়মের কটাক্ষ
সেই ঘ্রাণে আরও উসকে যায় বিক্রেতার হাঁকডাকে। এক অন্যরকম আমেজে প্রতিবছর এ হোটেলটির ইফতারের আয়োজন যেনো উৎসবে পরিণত হয়। এই উৎসবে মিলনমেলা বসে রোজাদারদের। সাজানো হয় বাহারি ইফতারের পসরা।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল ) বিকেল ৩টা। ইফতারের আরও বেশ সময় বাকি। ফেনী প্রেস ক্লাবের সামনের নবী হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজের ইফতার বিকিকিনির হাঁকডাক বেশ দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো ফেনীর এ অভিজাত হোটেলটি এবারও আয়োজন করেছে ইফতারের বাহারি পদ। নানা স্বাদের এসব ইফতার আয়োজনে ক্রেতাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মত। ৩০ থেকে ৩৫ জন বিক্রয়কর্মী হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতাদের সামলাতে।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এ হেটেলের ইফতার তাদের পছন্দের তালিকায়। অনেকে বলছেন, নবী হোটেলের ইফতার আয়োজন ফেনীর ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হোটেলটিও ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করছে লোভনীয় মনোহরি ইফতার। ক্রেতারাও বলছেন, শহরের অন্যান্য হোটেলের চেয়ে নবীর ইফতার খাবারের জন্য বিখ্যাত।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
বাহারি বিভিন্ন দামের ইফতার সামগ্রী কিনতে রোজা শুরুর প্রথম দিন থেকেই শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ আসছেন হোটেলটিতে। হোটেলটি সুস্বাদু ও মুখরোচক এবং ভিন্নতা দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলটিতে ক্রেতা সাধারণের উপচে পড়া ভিড়। কেউ নিচ্ছেন ছোলা, পিঁয়াজু, খেজুর আবার কেউ নিচ্ছেন আস্ত মুরগির রোস্ট, ফ্রাই আবার কেউ নিচ্ছেন কাবাব। ক্রেতাদের অনেকেই নিতে ভুল করছেন না নবীর স্পেশাল হালিমও। রমজানে এ হোটেলের হালিমের রয়েছে বাড়তি কদর।
কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন কামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, খাবারে গুণগত মান বজায় রাখার কারণে প্রতি রমজানেই হোটেলে ক্রেতারা ভিড় জমান। পুরো রমজানেই বেচাকেনা থাকে জমজমাট। কেননা, বাজারের সবচেয়ে সেরা জিনিসটি হোটেলের জন্য কিনে নিয়ে আসি। আর তার সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের পর, তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিই।
তিনি আরও বলেন, এবারের ইফতার আয়োজনের মধ্যে রয়েছে চিকেন হালিম। যা কেজি ৩৮০ টাকা ও প্রতি বাটি ১০০ টাকা। এছাড়া আয়োজনে থাকা বেগুনি প্রতি পিস পাঁচ টাকা, আলুর চপ প্রতি পিস পাঁচ টাকা, চানাবুট প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কাঁচা বুট প্রতি কেজী ১২০, পেঁয়াজু প্রতি পিস পাঁচ টাকা, সবজি চপ প্রতি পিস ১৫ টাকা, ডিম চপ প্রতি পিস ২০ টাকা, চিকেন জালি কাবাব প্রতি পিস ২৫ টাকা, মাটন জালি কাবাব প্রতি পিস ২৫ টাকা, মাটন চপ প্রতি পিচ ২৫ টাকা, মাটন রোল প্রতি পিচ ২৫ টাকা, মাটন সমুচা প্রতি পিস ১৫ টাকা, নারকেল সমুচা প্রতি পিস ১৫ টাকা, পাটিসাপটা প্রতি পিস ২৫ টাকা, সবজি রোল ২০ টাকা, মাটন রোল ২০ টাকা, চিকেন রোল ২৫ টাকা, নার্গিস কোপতা ২৫ টাকা, জিলাপি প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, পায়েস ও লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, বুরিন্দা প্রতি কেজী ১৫০ টাকা, চিকেন ফ্রাই প্রতি পিস ১০০ টাকা, চিকেন হালিম প্রতি কেজী ৩৮০, হালিম হাফ কোয়াটার প্রতি বক্স ২০০ টাকা, হালিম কোয়াটার প্রতি বক্স ১০০ টাকা, চিকেন মাসালা প্রতি পিস ১৫০ টাকা, চিকেন বার্গার প্রতি পিচ ৭০ টাকা, স্টিক বার্গার ৪০ টাকা, চিংড়ি টোষ্ট প্রতি পিচ ৩০ টাকা, ডিম টোস্ট প্রতি পিচ ৩০ টাকা, চিকেন অনথন প্রতিপিচ ২৫ টাকা, ডিম রোল প্রতিপিচ ৩০ টাকা, চিংড়ি চপ প্রতিপিচ ২৫ টাকা, কাকলেট প্রতিপিচ ২৫ টাকা, ডিম চপ প্রতিপিচ ২০ টাকা, মাটন টিক্কা প্রতিপিচ ২৫ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানী প্রতি প্লেট ২২০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানী প্রতি প্লেট ১৬০ টাকা, বিফ খিছুড়ি প্রতি প্লেট ১৭০ ও বিফ খিচুড়ি ১৪০ টাকা, গ্রিল কাবাব ১টা ৩৮০ টাকা, বোরহানি প্রতি লিটার ১৪০ টাকা, প্রতি গ্লাস ৩০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে আরও নানা আয়োজন।
কথা হয় ইফতার কিনতে আসা সাদিয়া জাহান নামে এক মহিলা ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, নবী হোটেলে হরেক রকমের ইফতার তৈরি হয়। এখানের খাবার স্বাস্থ্যসম্মতও। আর সে কারণেই এখানে প্রতিবছর আসি ইফতার কিনতে।
আরও পড়ুন: ইরানের কুদস বাহিনী সন্ত্রাসী সংগঠন
মমিনুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমি এ হোটেলের নিয়মিত ক্রেতা। এখানের রমজানের বাহারি আয়োজন আমাকেও মুগ্ধ করে। ঐতিহ্যের সঙ্গে এখানে মানের দিকটাও দেখা হয়। একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও এখানের ইফতার সে কারণেই বাড়িতে কিনে নিয়ে যাই।
নবী হোটেলের ব্যবস্থানা পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ কামাল পাটোয়ারী জানান, প্রতিবছর আমরা ইফতারির আয়োজন করে থাকি। নতুনত্ব কিছু করে মানুষ কে খাওয়াতে পারলে আনন্দ পাই।
সাননিউজ/এমআরএস