ফিচার

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড রেল নির্মাণ করবে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান। জিটুজি ও পিপিপি’র মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান দুটি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে এ ধরনের একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে চায়না (সিআরসিসি ও সিসিইসিসি)। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রস্তাব রেলওয়েকে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসও রেলওয়েকে একই প্রস্তাবের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। রেলভবন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত নেয়ার জন্য তা সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়েছে রেলওয়ে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) যৌথভাবে একটি কোম্পানি গঠন করে রেলপথ নির্মাণ করবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ঋণের যোগান ও রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেবে প্রস্তাবিত কোম্পানি। ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৫ বছর রেলপথ পরিচালনার পর তা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে।

(সিআরসিসি ও সিসিইসিসি’র) প্রস্তাব অনুযায়ী, চীনা কোম্পানি দুটি জয়েন্টভেঞ্চার এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে পূর্ণগঠন করা হবে । রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানও করবে এই কোম্পানি। সুদসহ রেলপথ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ট্রেন পরিচালনার ব্যয় এবং কোম্পানির লাভসহ যে অর্থ খরচ হবে, তা ঋণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

(সিআরসিসি ও সিসিইসিসি) স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণেরও ব্যবস্থা করে দেবে, তবে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়েকে। ঋণ পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে সময় পাবে ২০ বছর। প্রতি বছর দুটি করে মোট ৪০টি কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণের জামিনদার হবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, রেলপথ নির্মাণের জন্য গঠিত কোম্পানি (সিআরসিসি ও সিসিইসিসি’র) সঙ্গে একটি চুক্তি হবে। এ চুক্তি অনুযায়ী শুধু তারাই রেলপথ নির্মাণকাজে অংশ নিতে পারবে। রেলপথ নির্মাণ শেষে পরবর্তী ৫ বছর কিংবা আলোচনা সাপেক্ষে যে কোনও মেয়াদ পর্যন্ত তা পরিচালনা করবে গঠিত কোম্পানি। তবে এ সময়ে রেলপথ থেকে যে অর্থ আয় হবে, তা জমা হবে রেলওয়ের কোষাগারে।

চীনের প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবটি এসেছে চীনা দূতাবাস ও সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। রেলওয়ে শুধুমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অর্থের যোগানের জন্য ইআরডির মতামত নেয়ার প্রয়োজন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান ও লাইনটি নির্মাণের জন্য চীনের দুই কোম্পানির প্রস্তাবটি ইআরডিতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, “প্রস্তাবটি এসেছে সরাসরি চীনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। নিয়ম অনুযায়ী, সরাসরি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব নিয়ে আমরা কোনও কাজ করতে পারি না। এটা ইআরডির কাছ থেকে আসতে হবে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে (রেলপথ) অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইআরডির মতামত পেলেই প্রস্তাবটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা নিতে পারব।”

(সিআরইসি ও (সিসিইসিসি) জয়েন্টভেঞ্চার গঠনের মাধ্যমে ‘ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম হাইস্পিড রেলওয়ে প্রকল্পে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করে ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর রেলওয়ে প্রথম চিঠি দেয়। পরবর্তীতে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দুটি সংস্থারই (সিআরসিসি ও সিসিইসিসি) চীন ও চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে হাইস্পিড রেলপথের উন্নয়ন ও নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি এরই মধ্যে অনেক দেশে জিটুজি-পিপিপি মডেলে একই জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

অন্যদিকে চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দুটি এ-সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব পাঠায় সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে মতামত চাওয়ার জন্য এ-প্রস্তাবটি পাঠানোয় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে।

চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া চিঠি দুটি সংযুক্ত করে বিষয়টি সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত দেয়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন নির্মাণের জন্য ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করা হয়েছে, যাতে খরচ হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। সমীক্ষায় হাইস্পিড রেলপথের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার (শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম অংশ)। বর্তমান বিনিময় হারে (প্রতি ডলারে ৮৪ টাকা ৮৭ পয়সা) এর পরিমাণ ৯৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।

সমীক্ষা অনুযায়ী, হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণ করা হবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম রুটে। রুটটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৭ কিলোমিটার। রেলপথ হবে শুধু যাত্রী পরিবহনের জন্য। ডিজাইন স্পিড ধরা হয়েছে প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার। স্ট্যান্ডার্ড গেজের দুটি লাইন নির্মাণ করা হবে, যেগুলোর এক্সেল লোড হবে ১৭ টন ধারণ ক্ষমতার।

বিদ্যুতচালিত রেলপথটি হবে পাথরবিহীন। ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক অটোমেটিক ব্লক সিগন্যাল ব্যবস্থা। রেলপথে একটি ট্রেন বিরতিহীনভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় নেবে ৫৫ মিনিট। আর বিরতি দিয়ে চললে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে সময় লাগবে ৭৩ মিনিট। দিনে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে হাইস্পিড রেলপথটি দিয়ে।

জানা গেছে, বর্তমানে রেলপথের নকশা তৈরির কাজ চলমান আছে। নকশা প্রণয়ন কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত থাকলেও তা এরই মধ্যে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত নকশা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। চীনের ‘চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন’ (সিডিআরসি) ও বাংলাদেশের ‘মজুমদার এন্টারপ্রাইজ’ বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ করছে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরে চলছে  ৫ ইউনিয়নে ভোট

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

৪ দাবিতে চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট শুরু

জেলা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে শিক্ষা...

ছেলের হাতে বাবা খুন

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় ছেলের অঘাতে...

ভালুকায় খাবার স্যালাইন ও পানি বিতরণ

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রচন্ড ত...

আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান সরকার আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা